নায়ক: মোহালিতে ডাবল সেঞ্চুরি করে শাসন রোহিত শর্মার। সিরিজেও সমতা ফেরাল ভারত। ছবি: পিটিআই।
সকালটাই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে! বুধবার প্রথম ঘণ্টায় মোহালির পিচও ঠিক সে ভাবেই জানান দিয়ে গিয়েছিল, ধর্মশালার মতো কোনও অঘটন আজ অন্তত ঘটছে না।
মোহালির আকাশে এ দিন সকালে ঝলমলে সূর্য ছিল না। তাই স্যাঁতসেঁতে ছিল আবহাওয়া। এই পরিস্থিতিতে দুই অধিনায়কই চেয়েছিলেন টসে জিতে ফিল্ডিং নিতে। শেষমেশ শ্রীলঙ্কা টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায় আমি অবাক হইনি।
দিনের প্রথম ওভারেই যখন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের প্রথম বল ‘ক্যারি’ না হয়ে এক ড্রপে শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার ডিকওয়েলার হাতে জমা পড়ল। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এই উইকেটে জান নেই। তা আরও ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিল শিখর ধবন। যখন দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই গত ম্যাচের ত্রাস সৃষ্টিকারী বোলার শ্রীলঙ্কার সুরঙ্গা লাকমল-কে দুরন্ত কভার ড্রাইভে ও মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: ইডেনের ইনিংসই সব চেয়ে এগিয়ে, বলে গেলেন নায়ক
অনেকেই বলবেন, শ্রীলঙ্কাকে এ দিন জয়ের সরণি থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে রোহিতের দ্বিশতরান। একদম ঠিক কথা। তবে কুড়ি ওভারের মধ্যেই রোহিত শর্মা ও শিখর ধবনের দাপুটে ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে যখন বিনা উইকেটে ভারত একশো রান পার করে ফেলেছিল তখনই ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাওয়া শুরু শ্রীলঙ্কার।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এ দিন শিখর ধবন (৬৮) অনেক পরীক্ষামূলক শট খেলেছে। রোহিত বরং শুরুর দিকে ধরে খেলছিল। ব্যাটে রোহিতের অপরাজিত ২০৮ রান সম্পর্কে পরে আলোচনা করছি। এ দিন কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি এক নম্বরে শ্রেয়স আইয়ার (৮৮)-কে নামানোয়। নিঃসন্দেহে এটা ভারত অধিনায়কের সাহসী পদক্ষেপ। শ্রেয়স এমনিতেই আদর্শ মুম্বই ঘরানার ব্যাটসম্যান। তার উপর ওর স্ট্রোকগুলোও খুব সাবলীল। ছেলেটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।
তবে এ দিনের ম্যাচের আসল নায়ক অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শিখর বা অন্যদের সঙ্গে ওর তফাৎ হল, ব্যাটে ষাট-সত্তর রান চলে এলে সেটাকে ও ঠিক বড় রান বানিয়ে নেয়। এ দিন দ্বিশতরান করার পথে প্রথম একশো করল ধীর,স্থির ভাবে। নিল ১১৫ বলে। কিন্তু পরের একশো রান ও করল ৩৬ বলে। এই সময় বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করতে দেখলাম ওকে। একদিনের ক্রিকেটে ওর তৃতীয় দ্বিশতরান করার পথে এ দিন বারোটি ছক্কা মেরেছে রোহিত। যার প্রতিটাই ক্রিকেটীয় শট। লাকমল-দের খেলার সময় ডান পা আড়াআড়ি ভাবে অফ স্টাম্পের দিকে নিয়ে গিয়ে বলের উপর থেকে লো ফুল টসগুলো যে ভাবে স্কোয়ার লেগ, মিড উইকেট, ফাইন লেগের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছিল, তা কিন্তু সহজ কাজ নয়। তবে এই বারোটি ছক্কার মধ্যে সেরা থিসারা পেরিরার মাথার উপর দিয়ে মারা ছয়টা। মোহালি যথেষ্ট বড় মাঠ। কিন্তু এ দিন যে মেজাজে রোহিত ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ করল তা দেখে মনে হচ্ছিল খেলাটা শিবাজী পার্কের ছোট মাঠে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বোলাররা ওর ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তি দেখে এক সময় বুঝতে পারছিল না বল কোথায় ফেলবে।
এ দিনেরটা নিয়ে একদিনের ক্রিকেটে তিনটে দ্বিশতরান হয়ে গেল রোহিতের। আমার মতে তার মধ্যে সেরা চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করা ওর ২০৯ রান। কারণ অস্ট্রেলিয়ার বোলিং অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল শ্রীলঙ্কার এই বোলিং আক্রমণের চেয়ে।
মোহালিতে শুধু ব্যাটসম্যান রোহিত নয়। আমার চোখে এ দিন ও ধরা পড়েছে একজন চতুর অধিনায়ক হিসেবেও। শ্রীলঙ্কার আকিলা ধনঞ্জয় আউট হওয়ার আগের মুহূর্তে রোহিত গিয়ে জশপ্রীত বুমরা-কে কিছু বলল। তার পরেই বুমরার বাউন্সার। আর তাতে ফ্লিক করতে গিয়ে রোহিতের হাতে ওর ধরা পড়া। ফলে এ দিনের ম্যাচটা ছিল একটা জমজমাট ‘রোহিত শো’। নিজের বিবাহ বার্ষিকীর দিনে তা ঝলমলে করে সাজিয়ে রাখল ও।
ভারতের ১৪১ রানে জিতে সিরিজ ১-১ করে ফেলার পরেও কিন্তু কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় আসছে। টিমে দীনেশ কার্তিক কেন? কেন অজিঙ্ক রাহানে-কে প্রথম দলে দেখা যাচ্ছে না। দীনেশ কার্তিক কিন্তু আগামী বিশ্বকাপের উত্তর হতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy