Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
১০০ মিটারে নতুন জাতীয় রেকর্ড

গোপী স্যরের কথা রাখতে হবে, বললেন উচ্ছ্বসিত দ্যুতি

গত বছর গুয়াহাটিতে ১০০ মিটারে দ্যুতি সময় করেছিলেন ১১.২৯ সেকেন্ড। এত দিন সেটাই ছিল জাতীয় রেকর্ড। এ দিন নিজের সেই রেকর্ড পিছনে ফেলে দোহায় সেমিফাইনালে ওঠার পথে দ্যুতি সময় করলেন ১১.২৮ সেকেন্ড।

সফল: নিজেরই জাতীয় রেকর্ড ভেঙে সেমিফাইনালে দ্যুতি চন্দ। ফাইল চিত্র

সফল: নিজেরই জাতীয় রেকর্ড ভেঙে সেমিফাইনালে দ্যুতি চন্দ। ফাইল চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৭
Share: Save:

এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দিনেই চমক দিলেন ভারতের মহিলা স্প্রিন্টার দ্যুতি চন্দ। ওড়িশার মেয়ে এ দিন ১০০ মিটার ইভেন্টের হিট থেকে সেমিফাইনালে ওঠার পথে নিজের জাতীয় রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়লেন।

গত বছর গুয়াহাটিতে ১০০ মিটারে দ্যুতি সময় করেছিলেন ১১.২৯ সেকেন্ড। এত দিন সেটাই ছিল জাতীয় রেকর্ড। এ দিন নিজের সেই রেকর্ড পিছনে ফেলে দোহায় সেমিফাইনালে ওঠার পথে দ্যুতি সময় করলেন ১১.২৮ সেকেন্ড।

সপ্তাহখানেক আগে ২৩ বছরের এই অ্যাথলিট সমস্যায় পড়েছিলেন। তবে তা ট্র্যাকের মধ্যে নয়। বাইরে। তাঁকে বিয়ে করতে চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল জনৈক ব্যক্তি। সাড়া না পেয়ে সে হুমকি দেয় দ্যুতিকে। সে সব সমস্যা পিছনে ফেলেই এ দিন সাফল্য পেলেন দ্যুতি। যিনি এক সময় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য থাকায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাঁকে বলা হয়, ‘হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিজম’। যে সমস্যা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাথলিট ক্যাস্টার সেমেনিয়ারও। কিন্তু আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স সংস্থার নিয়মে দ্যুতির নির্বাসন উঠে গেলেও ক্যাস্টার এখনও ফিরে আসার আইনি লড়াই করছেন লোজ়ানের ক্রীড়া আদালতে।

সেমিফাইনালে ওঠার পরে দোহা থেকে ফোনে দ্যুতি আনন্দবাজারকে বলেই দিলেন, ‘‘ওই সব ঝামেলায় না ঢুকে আমি সব সময়েই মনোনিবেশ করেছি ট্র্যাকে। সব সময়েই লক্ষ্য থাকে, আগের চেয়ে সময় ভাল করা। তা করতে গিয়েই এই নতুন রেকর্ড। তবে এটা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হচ্ছি না। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে আরও ভাল সময় করতে হবে আমাকে। দু’বছর আগে এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম। এশিয়ান গেমসে এই ইভেন্টে রুপো পেয়েছি এক বছর আগে এ বার সোনার পদকটা পেতে চাই। তার জন্য পরিশ্রমে কোনও খামতি রাখিনি।’’

বছর বছর এই নতুন সাফল্য ও রেকর্ড গড়ার প্রেরণা কোথা থেকে পাচ্ছেন, জানতে চাইলে দ্যুতি টেনে আনেন তাঁর অতীতকে। বলেন, ‘‘পুরুষ হরমোন শরীরে বেশি থাকার কারণে পাঁচ বছর আগে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে শেষ মুহূর্তে বাদ যাওয়ার পরে আমার অ্যাথলিট জীবনই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। প্রায় দু’বছর নির্বাসনে থাকার পরে মাঠে ফিরে প্রতিজ্ঞা করি, নির্বাসনকালীন অবস্থায় যতটা পিছিয়ে গিয়েছি, ততটাই ফের এগোতে হবে ভাল ফল করে। নিজের জাতীয় রেকর্ড ভাঙার প্রেরণা এটাই।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই হায়দরাবাদে আমি গোপীচন্দ অ্যাকাডেমিতে রয়েছি। সেখানে থেকেই অনুশীলন করি। এ বার এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে আসার আগে গোপী স্যার বলে দিয়েছিলেন, এই প্রতিযোগিতা কিন্তু ছোট নয়। নতুন কোনও রেকর্ড গড়ে সোনা নিয়ে ফিরো। গোপী স্যরের একটা কথা আজ রাখতে পেরেছি। এ বার সোনা নিয়ে ফিরতে হবে। তার জন্য নিজেকে নিংড়ে দেব সেমিফাইনাল ও ফাইনালে।’’ দেশের এই দ্রুততম মহিলা অ্যাথলিট আরও বলেন, ‘‘নির্বাসন থেকে আমাকে বার করে যাঁরা ট্র্যাকে ফিরিয়েছিলেন তাঁদের অবদানও ভোলার নয়।’’

সোমবার ১০০ মিটারের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। মঙ্গলবার ২০০ মিটার ইভেন্ট রয়েছে। ১০০ মিটারের ফাইনালে কী হবে জানতে চাইলে আত্মবিশ্বাসী দ্যুতি বলেন, ‘‘আরও ভাল সময় করব। করতে হবেই। পদক জেতার চেয়েও এটা মাথায় রাখছি। কারণ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে। সেখানে নামার যোগ্যতা অর্জন করতে সময় চাই ১১.২৪ সেকেন্ড। সেটা করতেই হবে।’’

নির্বাসন পর্বে দ্যুতিকে মাঠে ফেরাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন লন্ডনপ্রবাসী বাঙালি ক্রীড়া-অধিকাররক্ষা কর্মী পয়োষ্ণী মিত্র। তিনি এই মুহূর্তে কলকাতায়। দ্যুতির নতুন জাতীয় রেকর্ডের কথা শুনেছেন তিনিও। ফোনে যোগাযোগ করা হলে বললেন, ‘‘কয়েক মাস আগে কাজাখস্তানে এর চেয়েও ভাল সময় করেছিল দ্যুতি। কিন্তু সেখানে ডোপ পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না বলে তখনই নতুন জাতীয় রেকর্ড করতে পারেনি। বলেছিলাম, এর জন্য মামলা করব কি না। দ্যুতি বলেছিল, দরকার নেই। ভাল সময় ফের করব দিন কয়েকের মধ্যে। এই আত্মবিশ্বাস যার মধ্যে রয়েছে, সে সেমিফাইনাল ও ফাইনালেও যে ভাল করবে সে ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sprinter Dutee Chand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE