উৎসব: জর্জ টেলিগ্রাফকে হারিয়ে উচ্ছ্বাস ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের। বুধবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে। ছবি: শৌভিক দে
খেলা শুরুর মুখে কালো মেঘ ঢেকে ফেলেছিল ইস্টবেঙ্গল মাঠের আকাশ।
বুধবার বিকেল এবং সন্ধ্যায় চুরানব্বই মিনিট ধরে সেটা কখনও সরল, কখনও ফিরল।
ডার্বির আগে বিতর্কিত গোলে ম্যাচ জিতলেও সুভাষ ভৌমিকের দলের উপর শেষ পর্যন্ত কিন্তু থেকেই গেল আশঙ্কার মেঘ।
মরসুমে প্রথমবার ০-১ পিছিয়ে পড়েছিলেন আল আমনারা। সেখান থেকে সমতায় ফিরে অতিরিক্ত সময়ে জয়। কলকাতা লিগে এ বার একটি ম্যাচেও এ দৃশ্য দেখেনি লাল-হলুদ জনতা। বাড়ি ফেরার আগে পকেটে করে আনা আবির, স্মোক বোম্ব বা মশাল তাঁরা ফাটালেন বা জ্বালালেন বটে, কিন্তু মশালবাহিনীর কারও চোখে মুখেই স্বস্তি ছিল না। ‘একজন ভাল বিদেশি স্ট্রাইকার না এলে রবিবারের ডার্বিতেও ফের হারতে হবে,’ ইস্টবেঙ্গল তাঁবু জুড়ে ওঠা এই কলরবের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ফিরে গেলেন তাঁরা। কিন্তু সদস্য-সমর্থকদের সেই ইচ্ছে অবশ্য ডার্বিতে পূরণ হচ্ছে না। অনেক টানাপড়েনের পর কোস্টা রিকার বিশ্বকাপার জনি আকোস্তার ছাড়পত্র এসেছে মঙ্গলবার বেশি রাতে। তিনি শুক্রবার সইও করছেন। মস্কোর পর রবিবার তিনি নামবেন যুবভারীতে। শীর্ষ কর্তারা এ কথা ম্যাচ শেষে জানালেও, পাশাপাশি এটাও বলে দিয়েছেন, ‘‘ডার্বির আগে কোনও বিদেশি স্ট্রাইকার যোগ দিচ্ছেন না ইস্টবেঙ্গলে। কাকে নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি লাল হলুদের নতুন চুক্তিবদ্ধ স্প্যানিশ কোচ।’’ ফলে ডার্বিতে সুভাষের হাতে শিবরাত্রির সলতের মতো রয়েছেন শুধু জোবি জাস্টিন আর বালি গগনদীপ।
কিন্তু ম্যাচ শেষ ঘুরপাক খেল দুটি অন্য প্রশ্ন? এক) প্রথমার্ধে জর্জ গোলকিপার বুবাই সিংহ দুর্দান্ত খেললেও, দ্বিতীয়ার্ধে তিনি বল ধরতে গিয়ে বারবার ফস্কাচ্ছিলেন কেন? বিশেষ করে জাস্টিন মর্গ্যানের অসাধারণ গোলে জর্জ এগিয়ে যাওয়ার পরে কেন বার বার তিনি ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের পায়ে বল তুলে দিচ্ছিলেন। ম্যাচ শেষে এই প্রশ্নে অবশ্য জর্জ কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য হেসে ফেললেন। বললেন, ‘‘আমিও বুবাইয়ের বল ফস্কে যাওয়ার ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি। ও বলছিল, চোট লেগেছে! কী বলব?’’
দুই) ইস্টবেঙ্গলের জয়ের গোলটা কার? তা নিয়েও ম্যাচের পর প্রশ্ন উঠেছে। লাল-হলুদ শিবির থেকে বলা হল গোলটা তাঁদের অধিনায়ক কৌশিক সরকারের। কিন্তু ম্যাচ কমিশনার ভোলানাথ দত্ত তাঁর রিপোর্টে গোলদাতা হিসাবে নাম দিয়েছেন কাশিম আইদারার। ঘটনা হল, জটলার মধ্যে বল মেরেছিলেন কৌশিক। শেষ মিনিটে পা ছুঁইয়েছিলেন কাশিম। ম্যাচ কমিশনারের সিদ্ধান্ত সঠিক হলে, গোলের সময় সেনেগালের কাশিম অফসাইডে ছিলেন। টিভিতে দেখা গিয়েছে, ওই সময় অফসাইডে ছিলেন জোবি।
ম্যাচের শেষে হতাশ জর্জ ফুটবলাররা রেফারি উত্তম সরকার এবং তাঁর সহকারীদের কাছে গিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন গোল নিয়ে। তাঁদের দাবি ছিল আবার অন্য। জর্জ কোচ দাবি করছিলেন, ‘‘ওদের একজন ফুটবলার মাঠে পড়েছিল। রেফারি তা দেখে ‘ফেয়ার প্লে’ বলে বাঁশি বাজিয়ে দেন। আমাদের ফুটবলাররা দাঁড়িয়ে পড়েছিল। সেই সুযোগ নিয়ে ইস্টবেঙ্গল গোল করে গিয়েছে।’’ এই অভিযোগ নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে রাজি নন ইস্টবেঙ্গলের কেউই। তাদের বক্তব্য, ‘‘মাঠে তো রেফারি ছিলেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
লাল-হলুদের জয়ের গোল নিয়ে এত বিতর্কই হত না, যদি জোবি ও লালরাম চুলোভার শট পোস্টে না লাগত। ওই সুযোগগুলো বাদ দিলে ইস্টবেঙ্গল আজ ছিল সব অর্থেই ফ্যাকাশে। ইদানিং নিয়মিত নানা নাটকীয় কান্ড ঘটাচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিক। যা দেখে বা শুনে সদস্য-সমর্থকরা তো বটেই, ক্লাব কর্তারাও বিরক্ত। এ দিনের জর্জ ম্যাচে তাঁর শেষ নাটক ছিল, একটি হলুদ কার্ড দেখা চুলোভাকে প্রথম একাদশে নামিয়ে দেওয়া। তিরিশ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার সকালে অনুশীলনের পর সুভাষ ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘চুলোভার কার্ড আছে। ডার্বির কথা ভেবে ওকে খেলাব না।’’ কিন্তু এ দিন করলেন উল্টোটা। যার ফল তিনি পেয়েছেন হাতে নাতে। চুলোভা তাঁর নিজের খেলাটাই খেলতে পারেননি। ইস্টবেঙ্গলের যেটা প্রধান অস্ত্র সেই উইং প্লে-ই এ দিন ছিল অচল। দলের এক নম্বর তারকা আল আমনাও ছিলেন শ্লথ। বল নিয়ে ঘুরতে অনেক সময় নিচ্ছিলেন। তবে ১-০ পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে যে গোলে সমতায় ফিরিয়েছিলেন মেহতাব সিংহ, সেই বলটা এসেছিল আমনার পা থেকেই। সিরিয়ান মিডিওর তুলে দেওয়া বলে হেড করে ১-১ করেন ময়দানের নতুন সিংহ— মেহতাব।
সুভাষের দলকে বেকায়দায় ফেলার জন্য জর্জ কোচ বেছে নিয়েছিলেন আমনা আর বিপক্ষের দুই উইংকে। চেষ্টা করেও, শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হননি। ডার্বির আগে মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর কাছে জর্জের এই রণনীতি নতুন ভাবনার রসদ জোগাতেই পারে।
ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত দাগার, মেহতাব সিংহ, কৌশিক সরকার, কিংশুক দেবনাথ, লালরাম চুলোভা, লালদামুইয়া রালতে (বালি গগণদীপ), কাশিম আইদারা, সুরাবুদ্দিন মল্লিক (বিদ্যাসাগর সিংহ), মহম্মদ আল আমনা, লালরামডিকা রালতে (ব্র্যান্ডন ভ্যানলালরামডিকা), জোবি জাস্টিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy