মুগ্ধ: ফারুক থেকে আজহার, উচ্ছ্বসিত কোহালিকে নিয়ে। ফাইল চিত্র
সচিন তেন্ডুলকর থেকে লতা মঙ্গেশকর— সকলকেই তিনি টিভির সামনে এনে দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। টুইটার আর ফেসবুকে মুহূর্তে শুরু হয়ে যায় ‘ট্রেন্ডিং’। এমনই চৌম্বক আকর্ষণ তৈরি করে দিতে পারে বিরাট কোহালির ব্যাট।
এজবাস্টনেও ভারত অধিনায়ক যখন সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, কোনও সিটেই কেউ বসে ছিলেন না। বহু কাল ধরে ইংল্যান্ডে বসবাস করা ফারুক ইঞ্জিনিয়ার আনন্দবাজারকে ফোনে বললেন, ‘‘আমি আর দিলীপ (বেঙ্গসরকর) একসঙ্গে বসে খেলা দেখছিলাম। বিরাটের সেঞ্চুরিটা হওয়ার পরে আমরা দু’জনেই উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে গেলাম যত ক্ষণ না আমাদের হাত ব্যথা হয়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম, কোনও সিটে কেউ বসে নেই। গোটা মাঠ উঠে দাঁড়িয়েছে।’’
কত ভাল ছিল কোহালির এই ইনিংস? জানতে চাওয়ায় ফারুক যোগ করলেন, ‘‘সুযোগ দিয়েছে। স্লিপে ওর ক্যাচ পড়ল। কিন্তু যে রকম মনঃসংযোগ আর দায়বদ্ধতা দেখিয়ে পড়ে থাকল, সেটা দেখার মতো। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, ও দেশের জন্য খেলছিল। ভারতের জন্য খেলল, কোহালির জন্য নয়।’’
মহাকাব্যিক ১৪৯ দেখার পরে ক্রিকেট মহলে উঠে পড়ছে তর্ক। কোহালি কি পারবেন সচিন তেন্ডুলকরের ‘সেঞ্চুরি অব সেঞ্চুরিজের’ বিরল রেকর্ড ধরে ফেলতে? সচিনের এক প্রাক্তন অধিনায়ক বৃহস্পতিবার রাতে এই তর্ক আরও উস্কে দিলেন। তিনি— মহম্মদ আজহারউদ্দিন ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘ক্রিকেটে ভবিষ্যদ্বাণী করা আমার পছন্দ নয়। কিন্তু বিরাট যদি এই ফর্মে এগোতে থাকে, কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিরাট দারুণ ফিট। অসম্ভব ভাল ধারাবাহিকতা। এখনও ওর বয়স ৩০ হয়নি। অনেক দিন ধরে খেলবে। ওর পক্ষে যে কোনও রেকর্ডই ভেঙে দেওয়া সম্ভব।’’
এজবাস্টনে সেঞ্চুরি নম্বর ৫৭ হল কোহালির। এখনও সচিনের একশো সেঞ্চুরির মাইলফলক বেশ খানিকটা দূরে। আরও ৪৩ সেঞ্চুরি দরকার। কিন্তু কারও কারও মনে হচ্ছে, সংখ্যার দিক থেকে দূর মনে হলেও কোহালি যে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন, তাতে এমন বিরল নজিরও কাছের গ্রহ মনে হতে পারে বছর পাঁচেকের মধ্যে। আজহার যেমন ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘গত তিন-চার বছরে অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় এগিয়েছে বিরাট। দুর্দান্ত কনভার্শন রেট। পঞ্চাশ পেরনো মানে সেঞ্চুরি করে আসছে। ২০১৫-তে অস্ট্রেলিয়া সফরে চার টেস্টে চার সেঞ্চুরির পর থেকে ওর বাজে সিরিজই যায়নি।’’
ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতীয়দের করা সেরা টেস্ট সেঞ্চুরিগুলির একটি এসেছিল আজহারের ব্যাট থেকে। ১৯৯০-এর লর্ডসে দুরন্ত ১২১ দেখে, তাঁর কব্জির মোচড়ে মুগ্ধ ইংল্যান্ডের সংবাদপত্রও লিখেছিল, রঞ্জিকে মনে করালেন ভারত অধিনায়ক। সেই টেস্টে এমনকি, গ্রাহাম গুচের ট্রিপল সেঞ্চুরি ছাপিয়ে চর্চা হয়েছিল আজহারের ঝোড়ো ইনিংস নিয়ে। ইংল্যান্ডে সফল হওয়ার প্রধান শর্ত কী? আজহারের জবাব, ‘‘শিকারির মনঃসংযোগ থাকতে হয়। ইংল্যান্ডে সারাক্ষণ বল সুইং করতে পারে। ব্যাটসম্যান কখনও সেট হয় না। সামান্য পলক ফেলা মানেই বাঘ তোমার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়বে। সেটাই দেখলাম বিরাটের ব্যাটিংয়ে। ক্যাচ দিয়ে বাঁচার পরেই দারুণ মনঃসংযোগ নিয়ে পরের বল খেলতে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।’’ নৈপুণ্যে অন্যদের চেয়ে কোহালি অনেক এগিয়ে বলে মনে করছেন আজহার। বলছেন, ‘‘ফিটনেসে তো সকলকে হার মানাবেই। প্রথম দিনে বিরাট যে রান আউট করেছে, সেটা টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকল। কিন্তু স্কিলের দিক থেকেও সকলের চেয়ে এগিয়ে বিরাট। অন্যরা যখন রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত, ও তখন বোলারদের শাসন করে।’’
একই কথা শোনা গেল ইঞ্জিনিয়ারের মুখেও— ‘‘প্রতিকূল পরিবেশে দাঁড়িয়ে যে ইনিংসটা খেলল, সেটাই ওর জাত চেনায়। মাঝ সমুদ্রে প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়েছে জাহাজ। ক্যাপ্টেন উদ্ধার করে আনল। আহা, কী প্লেয়ার!’’ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, ১৪৯ এত দিন ছিল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে জাদুকরি সংখ্যা। অ্যাশেজে হেডিংলেতে ইয়ান বোথামের সেই ম্যাচ ঘোরানো ইনিংস। যা স্থান করে নিয়েছে ক্রিকেটের চিরকালীন রূপকথায়। বৃহস্পতিবারের এজবাস্টনে বিরাট বাহুবলী সেই বোথাম-সৌধের পাশে উড়িয়ে দিলেন তেরঙ্গা পতাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy