Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ম্যাচ প্র্যাক্টিসের অভাবে ভুগতে হল ধোনিদের

সকালে টিভিটা খুলে একটা জিনিস দেখে খুব ভাল লাগল। জীবনের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ খেলতে নামা জেসন বেহরেনডর্ফের হাতে ম্যাচ-টুপি তুলে দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা।

ম্যাচ হারের পর।—ছবি পিটিআই।

ম্যাচ হারের পর।—ছবি পিটিআই।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৩
Share: Save:

সকালে টিভিটা খুলে একটা জিনিস দেখে খুব ভাল লাগল। জীবনের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ খেলতে নামা জেসন বেহরেনডর্ফের হাতে ম্যাচ-টুপি তুলে দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা। জানি না, সামনে ম্যাকগ্রাকে দেখে অস্ট্রেলিয়ার দুই তরুণ পেসার, বেহরেনডর্ফ এবং জাই রিচার্ডসন দারুণ ভাবে তেতে গিয়েছিলেন কি না। কারণ এই দুই পেসার ভারতীয় ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে দুরন্ত বল করে বিরাট কোহালির দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন। যেখান থেকে সিরিজের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচটা আর জেতা হল না ভারতের।

অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ উইকেটে ২৮৮ রানের জবাবে প্রথম চার ওভারের মধ্যে চার রানে তিন উইকেট পড়ে যায় ভারতের। বেহরেনডর্ফের ভিতরে ঢুকে আসা বলে শিখর ধওয়ন এলবিডব্লিউ। এর পরে রিচার্ডসনের এক ওভারে ফিরে গেলেন কোহালি এবং অম্বাতি রায়ডু। রোহিত শর্মার (১২৯ বলে ১৩৩) দুরন্ত সেঞ্চুরিও এই ধাক্কা সামলাতে পারেনি। সিডনির উইকেট হয়তো একটু মন্থর ছিল, কিন্তু এমন কিছু নয় যে স্ট্রোক খেলা যাবে না। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হাফসেঞ্চুরি (৯৬ বলে ৫১) করলেও বড় শটের বিশেষ চিহ্ন দেখা যায়নি ওঁর ব্যাটে।

এই ম্যাচে ভারতের হারের কয়েকটা কারণ উঠে আসছে। প্রথম এবং সব চেয়ে বড় কারণ, ভারতের বেশ কয়েক জন ব্যাটসম্যানের ম্যাচ প্র্যাক্টিসের অভাব। ধওয়ন, ধোনিরা এখন রঞ্জি খেলতে চান না। রায়ডুও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন না। অস্ট্রেলিয়াতে এসেও কোনও রকম ম্যাচ প্র্যাক্টিস পাননি এঁরা। আমাদের ক্রিকেট মহলে একটা কথা আছে। তিন মাসের অনুশীলনের চেয়ে তিনটে ম্যাচ খেলা অনেক ভাল। এই ম্যাচ প্র্যাক্টিসের অভাব বারবার ভারতীয় মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ে ধরা পড়েছে। শুধু ব্যাটিংই বলব কেন, বোলিংয়েও তো তাই হল। সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর থেকে মোটামুটি মাঠের বাইরেই কাটাতে হয়েছে ভুবনেশ্বর কুমারকে। যেটা এ দিন ওঁর বোলিংয়ে ধরা পড়েছে। ডেথ ওভারে মার খেয়ে গিয়েছেন। ১০ ওভারে দিলেন ৬৬ রান।

দ্বিতীয় কারণটা হল, ভারতের মিডল অর্ডার ব্যাটিং। কোহালির পরের তিন ব্যাটসম্যান হলেন রায়ডু, ধোনি এবং কার্তিক। তিন জনের ক্রিকেট জীবনই প্রায় অস্তমিত। জাতীয় দলে কার্তিকের অভিষেক তো ধোনির চার মাস আগে হয়েছিল! প্রায় পেনশন প্রাপকদের লাইন বলা যেতে পারে। এই ব্যাটিং লাইনে কেন ঋষভ পন্থের মতো তরুণ, প্রতিভাবান এবং ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান জায়গা পাবেন না? যিনি এই সিডনিতে সদ্য সেঞ্চুরি করে গিয়েছেন!

আর একটা কারণ মানসিক হতে পারে। যেটা এতদূরে বসে আমার পক্ষে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আমি শুধু আন্দাজ করতে পারি। ওয়ান ডে সিরিজ শুরুর ঠিক আগে হার্দিক পাণ্ড্য-কে এল রাহুলের ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটারদের ফোকাসটা নড়িয়ে দিতে পারে। ক্রিকেট কিন্তু অনেকটা মানসিকতারও খেলা।

তিন উইকেট খুব তাড়াতাড়ি পড়ে যাওয়ার পরে রোহিত এবং ধোনি সাবধানী হয়ে খেলছিলেন। ওই স্ট্র্যাটেজিতে কোনও ভুল নেই। কিন্তু পরের দিকে রোহিত দ্রুত রান তুলতে পারলেও ধোনি সে ভাবে পারেননি। ওঁর সেই স্বাভাবিক শটগুলো দেখা যায়নি, চাপের মুখে দ্রুত খুচরো রানও নিতে পারেননি। যার জেরে আস্কিং রেট ক্রমে বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে চাপও তৈরি হয়েছে। রোহিত অবশ্য আরও এক বার বুঝিয়ে দিলেন, কেন ওঁকে সাদা বলের ক্রিকেটের রাজা বলা হয়। এ দিন রোহিতের দু’টো শট মনে থেকে যাবে। দু’টোই এক ওভারে বেহরেনডর্ফকে মারা। একটা ‘দিলস্কুপ’ শটে ফাইন লেগ দিয়ে চার। অন্যটা মিডঅফের উপর দিয়ে ক্লাসিকাল শট। অর্থাৎ একই ওভারে একটা টি-টোয়েন্টি ধাঁচের, অন্যটা ধ্রুপদী শট— দু’টোই দেখা গেল রোহিতের ব্যাটে।

অস্ট্রেলিয়ার দু’জন বোলার চাপে রেখে গেলেন ভারতকে। বেহরেনডর্ফ এবং রিচার্ডসন। বিশেষ করে রিচার্ডসনকে দেখে খুব ভাল লাগল। স্বাভাবিক একটা আউটসুইং হাতে আছে। শেষ মুহূর্তে কাঁধের জোরের ওপর বলটা ছাড়েন। ওঁর গতিটাও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলে দিল।

পরের ম্যাচ মঙ্গলবার ভারত খেলবে অ্যাডিলেডে। ওই মাঠটা তুলনায় ছোট। আমার মনে হয়, অ্যাডিলেডে জিতেই ভারত সিরিজ ১-১ করে ফেলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE