Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ধোনির লাভ নতুন হার্দিক

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত ওয়ান ডে সিরিজের শুরুটা কেমন করল, আমার বলার প্রয়োজন পড়ে না। স্কোরকার্ড সেটা বলে দেবে। ভারতের ওয়ান ডে টিমটাকে নিয়ে হালফিলে ক্রিকেট-সার্কিটে প্রচুর কথা চলত। বলা হত যে, ভারতের টেস্ট টিম যতটা তৈরি, ওয়ান ডে টিম ততটা নয়।

ওয়ান ডে অভিষেকে হার্দিক পাণ্ড্যর তিন উইকেট। ছবি: এপি

ওয়ান ডে অভিষেকে হার্দিক পাণ্ড্যর তিন উইকেট। ছবি: এপি

দীপ দাশগুপ্ত
ধর্মশালা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৩৭
Share: Save:

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত ওয়ান ডে সিরিজের শুরুটা কেমন করল, আমার বলার প্রয়োজন পড়ে না। স্কোরকার্ড সেটা বলে দেবে। ভারতের ওয়ান ডে টিমটাকে নিয়ে হালফিলে ক্রিকেট-সার্কিটে প্রচুর কথা চলত। বলা হত যে, ভারতের টেস্ট টিম যতটা তৈরি, ওয়ান ডে টিম ততটা নয়। কোথায়, কোনও অসুবিধে তো দেখলাম না। বরং ভারত এমন একটা পিচে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংকে দু’শোর নীচে অলআউট করে দিল যেখানে সবাই তিনশো উঠবে ধরে রেখেছিল! নিঃসন্দেহে এটা বড় অ্যাচিভমেন্ট।

আমার কাছে অবশ্য আসল অ্যাচিভমেন্ট ভারতের জয় নয়, হার্দিক পাণ্ড্য! কারণটা বলছি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যতই আগামী বছরে জুনে হোক না কেন, ভারত তার আগে ওয়ান ডে ম্যাচ পাচ্ছে আটটা। রবিবারেরটা বাদ দিলে পড়ে আর সাতটা। এই সাতটা ম্যাচেই দেখে নিতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নিখুঁত কম্বিনেশন। ঠিক করে ফেলতে হবে, মেগা টুর্নামেন্টের ব্যাটিং অর্ডার কী হবে। কোন বোলাররাই বা খেলবে। একটা কথা এখানে বলে রাখি। ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াড তৈরি। প্রথম এগারো, রিজার্ভ বেঞ্চ— সব ঠিকঠাক এগোচ্ছে। শুধু একটা ব্যাপার নিয়ে এত দিন খচখচানিতে ভুগতে দেখতাম ওয়ান ডে টিমকে। তা হল, একজন ভাল পেসার অলরাউন্ডার। যে নতুন বলে গতিতে বলটা করতে পারবে।

আজকের হার্দিককে যা দেখলাম, মনে হয় না ওই খচখচানি আর থাকবে বলে।

কমেন্ট্রি বক্সে এক-এক সময় আশ্চর্যই লাগছিল। হার্দিক ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছে। কিন্তু ওয়ান ডে অভিষেকের যে হার্দিককে এ দিন দেখলাম, সে আগের চেয়ে নিজেকে অনেক পাল্টে ফেলেছে। বিশেষ করে বোলিং। আগে ওকে ব্যাক অব লেংথে বেশি বল করতে দেখতাম। আজ দেখলাম, ব্যাটসম্যানকে সামনে খেলাচ্ছে। আউটসুইং করাচ্ছে। নিখুঁত সিম পজিশনে ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটারে রাখছে। সবচেয়ে বড় কথা, ও নতুন বলে এই বোলিংটা করছে। আজ তো শুরুর দিকে মার্টিন গাপ্টিল, কোরি অ্যান্ডারসন আর লিউক রঙ্কিকে তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংকে প্রায় একা শেষ করে দিল। কেউ কেউ বলতে পারেন, একটা ম্যাচ দেখে এত নিশ্চিত ভাবে কী করে বলছি। ঠিক। কিন্তু উন্নতির কিছু কিছু ইঙ্গিত থাকে। হার্দিকের মধ্যে সেটা এ দিন দেখেছি।


ব্যাটে অব্যাহত বিরাটের শাসন। রবিবার ধর্মশালায়। ছবি: পিটিআই

বলা ভাল, গোটা ভারতীয় বোলিংয়ের মধ্যেই এ দিন সেটা দেখেছি। মানে, উন্নতি। উমেশ, মিশ্র— কাকে ছেড়ে কার কথা বলব? ধরে নিচ্ছি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিন পেসারের মধ্যে দু’জন খেলবে। শামি, উমেশ, আর বুমরাহের মধ্যে। এদের মধ্যে বুমরাহকে ডেথ স্পেশ্যালিস্ট। উমেশ কী করতে পারে, আজ দেখিয়েছে। এদের সঙ্গে হার্দিককে নতুন বলে এ রকমই যদি ব্যবহার করা হয়, তা হলে পেস বোলিং ভাল জায়গায় চলে যাবে। স্পিনারদের মধ্যে রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাডেজা খেলবে ধরে নিচ্ছি। এ বার যদি লেগস্পিনার প্রয়োজন হয়, অমিত মিশ্র থাকল। অমিতও কিন্তু রবিবার তিনটে নিয়েছে। আসলে ভারতীয় বোলিং এ দিন খুবই পেশাদারি মনোভাব দেখিয়েছে। প্রথম দশ ওভারে চার উইকেট তুলে নেওয়া সহজ নয়।

ব্যাটিং— ওটা আগেও সেট ছিল, এখনও আছে। বিপক্ষ ১৯০ তুললে সেখানে বোলিং নিয়ে বেশি কথা হবে স্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্যেও বিরাটের ব্যাটিংটা নিয়ে আলাদা বলতে হবে। এত অল্প টার্গেট, কিন্তু ও একাই তার অর্ধেক করে দিয়ে চলে গেল! নিজের ব্যাটিংকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে চলে গিয়েছে বিরাট। বাকিদের চেয়ে যেটা অনেক উপরে। একটা উদাহরণ দিই। রবিবার যে ৮৫ নটআউটের ইনিংসটা খেলল, একটা শটও হাওয়ায় খেলেনি। খেলল কোনটা? না শেষ শটটা! ছক্কা মেরে জিতিয়ে দিল। বিরাটের আত্মবিশ্বাস কোথায়, ব্যাটিংয়ের উপর ওর নিয়ন্ত্রণটাও বা কোথায়, এ দিনের ইনিংসটা প্রমাণ। টার্গেটটা আর একটু বেশি হলে অনায়াসে সেঞ্চুরি করে যেত।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ব্যাটিং অর্ডার যা দেখছি, তাতে রোহিতের সঙ্গে রাহানে বা শিখর ওপেন করবে। শেষ পর্যন্ত যদি রোহিত-রাহানে ওপেনিং জুটি বেছে নেওয়া হয়, তা হলে চারে মণীশ পাণ্ডেকে রাখা হোক। এ দিন তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু ও পারফেক্ট নাম্বার ফোর।

মোটামুটি এই। ওহ্, একজনের কথা বলা হয়নি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। বহু দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি। কিন্তু ওকে মাঠে দেখে আজ একবারের জন্যও মনে হয়নি যে, এত দিন ও ক্রিকেটের বাইরে ছিল। বোলার বদলানো থেকে ফিল্ড প্লেসিং— সব জায়গাতে ওকে দাপুটে লেগেছে। ঝরঝরে দেখিয়েছে। এই সিরিজটা শেষে আবার বেশ কিছু দিন ক্রিকেটের বাইরে থাকবে ধোনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই জানুয়ারিতে তিনটে ওয়ান ডে, তার পর সোজা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আশা করব, ধোনি এ রকমই থাকবে। দাপুটে। ঝরঝরে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো মেগা টুর্নামেন্টে কিন্তু ক্যাপ্টেনের তাজা মেজাজও সমান জরুরি।

নিউজিল্যান্ড: গাপ্টিল ক রোহিত বো হার্দিক ১২, ল্যাথাম ন.আ. ৭৯, উইলিয়ামসন ক মিশ্র বো উমেশ ৩, টেলর ক ধোনি বো উমেশ ০, অ্যান্ডারসন ক উমেশ বো হার্দিক ৪, রঙ্কি ক উমেশ বো হার্দিক ০, নিশাম ক ও বো কেদার ১০, স্যান্টনার ক ধোনি বো কেদার ০, ব্রেসওয়েল ক রাহানে বো মিশ্র ১৫, সাউদি ক হার্দিক বো মিশ্র ৫৫, সোধি এলবিডব্লিউ মিশ্র ১, অতিরিক্ত ১১, মোট (৪৩.৫ ওভারে) ১৯০। পতন: ১৪, ২৯, ৩৩, ৪৩, ৪৮, ৬৫, ৬৫, ১০৬, ১৭৭। বোলিং: উমেশ ৮-০-৩১-২, হার্দিক ৭-০-৩১-৩, বুমরাহ ৮-১-২৯-০, কেদার ৩-০-৬-২, অক্ষর ৯-১-৪১-০, মিশ্র ৮.৫-০-৪৯-৩।

ভারত: রোহিত এলবিডব্লিউ ব্রেসওয়েল ১৪, রাহানে ক রঙ্কি বো নিশাম ৩৪, বিরাট ন.আ. ৮৫, মণীশ ক উইলিয়ামসন বো সোধি ১৭, ধোনি রানআউট ২১, কেদার ন.আ. ১০, অতিরিক্ত ১৪, মোট (৩৩.১ ওভারে) ১৯৪-৪। পতন: ৪৯, ৬২, ১০২, ১৬২। বোলিং: সাউদি ৯-০-৫৭-০, ব্রেসওয়েল ৮-২-৪৪-১, নিশাম ৬-০-৪০-১, সোধি ৪.১-০-৩৪-১, স্যান্টনার ৬-০-১৮-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hardik Pandya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE