সৌরভ যতই উল্টো দাবি করুন না কেন, বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের মতে কিন্তু আজকের মহারণে এগিয়ে আফ্রিদিদরাই। কারণ মীরপুরের ছকভাঙা পিচ। এই পিচই অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপের সময় মহা বিপদে ফেলেছিল ভারতকে। নাস্তানাবুদ হয়ে ছিলেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরাও। সেই পিচে মধ্যমানের পেসারের বলও বাউন্সারের মারাত্মক ছোবল হয়ে ছুটে আসে। শুরু থেকেই চালিয়ে খেলো, টি-২০-এর এই অমোঘ নিয়মকে পাত্তা দেয় না মীরপুরের ২২ গজ। নিজের নিয়মটা সে নিজেই তৈরি করে ফেলেছে। প্রথমে ধরে খেলে ভিতটা শক্ত কর, তারপর শেষ পাঁচ ওভারে ব্যাট চালাও। এই ফর্মুলা না মানলে কিন্তু মীরপুরে সাফল্যের রাস্তাটা বেশ দুর্গম হয়ে যায়। শামির অভাবে ভারতের বোলিং ব্রিগেডের পেসার শক্তি বেশ খানিকটা দুর্বল। আর সেই কবে থেকেই কোনও এক অদ্ভুত রহস্যের জেরে পাকিস্তানের পেস অ্যাটাকের ভাণ্ডার শেষ হয় না। অতএব, পাটিগণিতের সহজ হিসেব মেনে, এক্সপার্টরা এগিয়ে রাখছেন পাকিস্তানকে।
কিন্তু, হিসেবটা বোধহয় এতটাও সহজ নয়। এখনকার পাকিস্তান দলটার সঙ্গে তুলনা টানা যায় নয়ের দশকের ভারতের। যখন বিশ্বজয়ী ইমরানের দলের সামনে পড়লেই সব আত্মবিশ্বাস কোথায় যেন খতম হয়ে যেত ভারতের। শারজায় একের পর এক জেতা ম্যাচ হেরে আসত আজাহারউদ্দিনের দল। এখন সেই চাকাটাই উল্টো দিকে ঘুরছে। গত ৯টা টি২০ ম্যাচে ভারতের কাছে টানা হেরেছে পাকিস্তান। এই মীরপুরের মাঠেই শেষ বারের সাক্ষাতে, ভারতের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল মহম্মদ হাফিজদের। আজ কিন্তু সেই দলের ন’জন ফের টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলতে নামছেন। অন্য দিকে, পাকিস্তানের দলে থাকছেন সেই দলের মাত্র ৩ জন। আফ্রিদি, মালিক আর মহম্মদ হাফিজ। ভারতের সেই বিপুল অভিজ্ঞতা আর লাগাতার জয়ের চাপ পাকিস্তান কতটা সামলাতে পারবে সেই নিয়ে কিন্তু সংশয় রয়েই যাচ্ছে।
আপাতত, সেই সব যোগ বিয়োগে মন দিতে নারাজ আফ্রিদিরা। রয়েছেন বেশ খোশ মেজাজেই। টিম বাসে টিভিতে তাঁদের রিল্যাক্সড মুডেই হৃত্বিক আর ক্যাটরিনার নাচ দেখতে দেখা গেল। তবে, কেহলির সঙ্গে আমেরের বিরাট যুদ্ধের যে দামামা বেজে যাওয়ার পর আমেরের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতার পথে হাঁটছে পাক থিঙ্কট্যাঙ্ক। অপরিচিত কারও সঙ্গেই তাঁর কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মহা সংগ্রামের আগে বেটিং বিতর্ক নিয়ে কোনও কথাই তুলতে চায় না পাকিস্তান।
এখন টিকিট কাটার বিষয়টা বাংলা দেশে সরকারি নিয়মে বেশ জটিল। সরাসরি মাঠে না, টিকিট কাটতে এখন ব্যাঙ্কের চক্কর কাটতে হয়। সেই জটিল নিয়লকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ম্যাচের দিন পাঁচেক আগেই যখন সব টিকিট নিঃশেষিত হয়ে যায়, তখন উন্মাদনার মাত্রাটা সহজেই বোঝা যায়। আরও টের পাওয়া যায় টিকিটের কালোবাজারির হিড়িক দেখে।
আগের ম্যাচে ভারতের হয়ে মাঠে গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছিল মেরেকেটে শদু’য়েককে। অনুমান, আজকের ম্যাচে গ্যালারিতে ৭০% ঝুঁকে থাকবে ধোনিদের দিকেই। পাকিস্তান হারলেই যে অ্যাডভানটেজ বাংলাদেশ। অতএব, দূরদর্শী বঙ্গ জনতা মনেপ্রাণে ভারতের বিজয় প্রার্থনাতেই ব্যস্ত।
গতকাল সন্ধেতে ফতেউল্লাহর প্র্যাকটিস ম্যাচ সেরে যখন টিম বাসে উঠছেন দু’দলের রথী-মহারথীদের হাতে তখন মশা মারার ব্যাট। এমনিতেই, ঢাকার কুখ্যাত জ্যামের জন্য এ শহরে খেলতে এসে কোথাও খুব একটা বেরনোর জের থাকে না। বেশির ভাগ সময়ই হোটেল বন্দি হয়ে থাকতে হয়। এই রকম হাই ভোল্টেজ ম্যাচের আগে এই বদ্ধ দশা মানসিক চাপ হাজারগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিরাট কোহলি এক সময় বলে ছিলেন, ঢাকায় এলে বেশিরভাগ সময়টা তিনি নাকি ঘুমিয়েই কাটান। কিন্তু, প্রতিপক্ষের নাম যখন পাকিস্তান, অ্যাড্রিনালিন রাশ কি সত্যিই কাল রাতে বিরাটকে ঘুমাতে দিয়েছিল?
খেলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বোধহয় কোনও হিসেব নিকেশই কাজে আসে না। আসলি ফয়সলাটা হবে ওই তিন ঘণ্টাতেই। কিন্তু, মাঠে যখন খেলতে নামছে ভারত-পাকিস্তাম জল্পনার ফানুসটা কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উড়বেই।
পাশাপাশি মাঠে থেকেও ‘নির্বাক চলচ্চিত্র’
ভারত-পাকিস্তানের সেরা আট টক্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy