কাছে-দূরে: বিশ্বকাপে ফের সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না মেসি। ফাইল চিত্র
রাশিয়াতেই তাঁদের প্রজন্মের ফুটবলারদের আর্জেন্তিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতার শেষ সুযোগ বলে মনে করেন লিওনেল মেসি। এ বারের বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার অন্যতম সেরা ফুটবলারদের একসঙ্গে খেলতে দেখা যাবে। মেসি ছাড়াও যে দলে রয়েছেন সের্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়াইন, অ্যাঙ্খেল দি’মারিয়া, নিকোলাস ওতামেন্দি, হাভিয়ের মাসচেরানো-রা। এঁরা প্রত্যেকেই তিরিশের উপর হয়ে যাবেন রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর সময়। চার বছর পরে আরও একটি বিশ্বকাপ খেলার মতো অবস্থায় তাঁরা থাকবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
মেসি স্বয়ং জুনে বিশ্বকাপের মাসেই ৩১ বছরে পা দেবেন। আর্জেন্তিনার একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা এই বিশ্বকাপে ফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। যদি এ বারে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারি, তা হলে হয়তো আর কখনও হবে না।’’ আর্জেন্তিনা এখন পর্যন্ত দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছে। শেষ বার তারা বিশ্ব জয় করেছে ১৯৮৬-তে। যখন দিয়েগো মারাদোনা কার্যত একার কৃতিত্বে দলকে কাপ জিতিয়েছিলেন। মেসির সঙ্গে তুলনা টানতে গিয়ে প্রায়ই বলা হয় যে, মারাদোনা বিশ্বকাপ জিতেছেন। তিনি পারেননি।
হর্হে সাম্পাওলির কোচিংয়ে দেশের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে যে তিনি ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন, সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন মেসি। বলেছেন, ‘‘আমার মনের মধ্যে ছবিটা ভেসে উঠতে শুরু করেছে। ফাইনালে আমরা খেলছি আর শেষে ট্রফিটাও জিতছি।’’
মস্কোতে ১৫ জুলাই বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে। আর্জেন্তিনার গ্রুপে এ বারে আছে আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া এবং নাইজিরিয়া। চার বছর আগে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়াটা এখনও যন্ত্রণা দেয় মেসিকে। সেই কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘সারা জীবন ধরে এই স্বপ্নটা দেখেছি যে, বিশ্বকাপ জিতব। যখনই কোনও বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছি, সেই স্বপ্নটা আরও বেশি করে দেখেছি। ২০১৪ ফাইনালটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক কারণ, আমরা অত কাছাকাছি গিয়েও পারিনি।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা সকলে একটাই জিনিস চাই। একটা বিশ্বকাপ জিততে চাই।’’
আরও পড়ুন: বড় জয় দিয়ে সন্তোষ অভিযান শুরু বাংলার
২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে, পর পর দু’বার কোপা আমেরিকার ফাইনালেও হারে মেসির আর্জেন্তিনা। যার জেরে তিনি দেশের ম্যাচ খেলা থেকে অকাল অবসরও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। পরে ভক্তদের এবং আর্জেন্তিনা ফুটবল ফেডারেশনের অনুরোধে ফিরে আসেন। তিনটি ফাইনালে হারার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে এখনও। মেসি বলেছেন, ‘‘আমি অনেক বার কেঁদেছি এই ফাইনালগুলো হেরে। দেশের স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি বলে খুব কষ্ট পেয়েছি। এই ফাইনালগুলোর গুরুত্ব কতটা ছিল আমার কাছে বলে বোঝাতে পারব না।’’
এখানেই না থেমে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার যোগ করছেন, ‘‘তিনটি ফাইনাল হারাই আমার কাছে বড় ধাক্কা ছিল। মনে হতো যেন ফাইনালে গিয়ে কোনও লাভই হল না। আরও একটি বিশ্বকাপ আসছে আর আমার মাথার মধ্যে সেই বিশ্বকাপের ভাবনা এসে পড়েছে।’’ ক্লাবের জার্সিতে তাঁর ট্রফির রেকর্ড অবিশ্বাস্য। বার্সেলোনার হয়ে চার বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, যা দেখে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, বিশ্বকাপ না জিতলেও মেসিই চিরশ্রেষ্ঠ ফুটবলার। কিন্তু তাঁর ভিতরে যে বিশ্বকাপ না জেতার যন্ত্রণা প্রবল ভাবেই রয়েছে, তা বেরিয়ে এসেছে নিজের দেশের চ্যানেলকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে। ‘‘অনেকে এসে বলছেন, আমাদের হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চান। এটা অসাধারণ একটা অনুভূতি। কিন্তু আমি এক-একটা দিন হিসেবে নিজের কাজকে দেখতে চাই,’’ বলে তিনি যোগ করছেন, ‘‘আমি হারতে পছন্দ করি না। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে, সব সময় জেতা সম্ভব নয়। বার্সেলোনাতেও আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আছে, সেটা নিয়েও ভাবতে চাই।’’ পরিবারের ভূমিকা নিয়ে আবেগপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সঙ্গে যখন থাকি, বাকি সব কিছু ভুলে যাই। পরিবারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।’’ রাশিয়া বিশ্বকাপের ৮৬ দিন বাকি থাকতেই বাজনা বেজে গেল। বাজিয়ে দিলেন ফুটবলের জাদুকর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy