ফিফার মসনদে তাঁর রাজত্বকাল আরও চার বছরের জন্য পাকা হওয়ার পর থেকে গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় দুর্নীতির প্রশ্নে সেপ ব্লাটার বনাম ব্রিটিশ ফুটবল ফেডারেশন দ্বৈরথটা ক্রমশ তীব্র থেকে আরও তীব্র হয়েছে। সেই লড়াইয়ে এ বার খোলাখুলি যোগ দিলেন এফএ প্রেসিডেন্ট, ব্রিটেনের যুবরাজ উইলিয়ামও।
অভূতপূর্ব আক্রমণাত্মক সুরে ব্লাটারের পুনর্নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে উইলিয়াম ফিফার স্পনসরদের ফুটবলকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন। বত্রিশ বছরের যুরবাজ বলেছেন, ‘‘ফেয়ার প্লে-র যে নীতি ফুটবল খেলাটার ভিত, তার থেকে ইদানীং বহু দূরে সরে গিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের পরিচালন সংস্থা। গত ক’বছরে এদের ঘিরে রেখেছে স্রেফ দুর্নীতির নানা অভিযোগ। ফুটবলকে বাঁচাতে হলে এই জায়গা থেকে বেরোতে হবে। তার জন্য আমূল সংস্কার চাই। আর সেই কাজে স্পনসরদেরও এগিয়ে এসে ফিফার উপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে।’’
উয়েফার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্লাটারের পুনর্নির্বাচন রোখার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রিটিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গ্রেগ ডাইক বলেছিলেন, ২০১৮ বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারেন তাঁরা। তার পরেই গতকাল ওয়েম্বলিতে এফএ কাপ ফাইনালের আগে ব্লাটারের নির্বাচন নিয়ে এফএ প্রেসিডেন্ট উইলিয়ামের কটাক্ষ, ‘‘বিজয়োৎসবের পার্টিতে জল ঢালতে চাই না। কিন্তু জুরিখে গত কয়েক দিন ধরে যা চলছে, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সল্ট লেক সিটি পর্বের অনেক মিল। এটাকে ফিফার সল্ট লেক সিটি মুহূর্ত বলাই যায়!’’
ইঙ্গিত পরিষ্কার। ১৯৯৮ সালে আইওসি-ও দুর্নীতির নানা অভিযোগে জজর্রিত হয়ে পড়েছিল। দুর্নীতির দায়ে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাক ওয়ার্নার-সহ সাত কর্মকর্তার গ্রেফতারির পর ফিফার বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সেই সময়ের সরাসরি তুলনা টেনে উইলিয়াম বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বিরুদ্ধে সেই সময়ে দুর্নীতির যে সব গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল তার সঙ্গে ফিফায় যা চলছে তার অনেক মিল। ফিফাকে এ বার আইওসি-র মতোই প্রমাণ করতে হবে যে, তারা খেলাটাকে সবার উপরে রাখতে তৈরি। প্রমাণ করতে হবে, ফেয়ার প্লে-র নীতি মেনে অামূল সংস্কার ঘটিয়ে ফুটবলকে পরিচ্ছন্ন করার সদিচ্ছা তাদের সত্যিই রয়েছে।’’
স্পনসরদের সঙ্গে বিভিন্ন আঞ্চলিক কনফেডারেশন যারা ফিফার পাশে আছে, তাদেরও সংস্কারের দাবিতে ফুটবলের বিশ্ব সংস্থার উপর চাপ তৈরি করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন উইলিয়াম। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যদি সেটা করতে না পারি, তা হলে ফুটবল এবং বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুটবল অনুরাগীদের কোনও কাজেই লাগতে পারব না আমরা। তাদের প্রতি সেটা ঘোর অন্যায় হবে।’’
প্রবল ফুটবল অনুরাগী বলে পরিচিত উইলিয়াম অবশ্য এ-ও মনে করেন, সদিচ্ছা থাকলে ফিফার পক্ষে সংস্কার ঘটিয়ে ফুটবল থেকে দুর্নীতিকে সমূল উপড়ে ফেলা সম্ভব। বলেছেন, ‘‘ফিফার সংস্কার ঘটানো যে সম্ভব, সে ব্যাপারে আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই। আর সেটা যে দিন হবে, সে দিন বিশ্বের আরও বেশি মানুষের কাছে, বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলোয় ফুটবলকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে পারব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy