লড়াকু: প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে এই প্রতিযোগীরা। নিজস্ব চিত্র
বিশেষ মানসিক চাহিদাসম্পন্নদের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে যোগ দিতে যাচ্ছেন হুগলির সাত তরুণ-তরুণী। তাদের সঙ্গে হাওড়ার একটি হোমের আবাসিক তিন যুবতীও দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আগামী ১৪ থেকে ২১ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর রাজধানী আবুধাবিতে ‘স্পেশ্যাল অলিম্পিক ওয়ার্ল্ড সামার গেমস’-এর আসর বসছে। বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রায় আড়াইশো জন। এ রাজ্যের ১২ জন। হাওড়া-হুগলির সাত জনের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতার এক জন করে রয়েছেন।
হুগলির ছেলেমেয়েদের মধ্যে হাসি দুলে, রীতি সাউ, বিশ্বজিৎ মালিক, কৌশিক বাগ, সৌম্যদীপ গুহরায় পাঁচ জনই শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুরে ‘বাঁশাই প্রচেষ্টা’ নামে একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। হাসির বাড়ি রিষড়ার বামুনারিতে। বাকি চার জন বাঁশাইয়ের বাসিন্দা। হাসি সাইকেলে, রীতি ভলিবলে এবং বিশ্বজিৎ, কৌশিক ও সৌম্যদীপ ফুটবলে সুযোগ পেয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা ক্রীড়া প্রশিক্ষক সুবীর ঘোষ এবং সভাপতি সন্ধ্যা চট্টোপাধ্যায় জানান, পাঁচ জনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। হাসির বাবা-মা ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেন। বিশ্বজিৎ এবং কৌশিকের বাবা ভ্যানচালক। তাদের মা গৃহবধূ। সৌম্যদীপের বাবা নেই। মা পরিচারিকার কাজ করেন। রীতির বাবা বিস্কুট কারখানার কর্মী। মা গৃহবধূ। ২০১৭ সালে অষ্ট্রিয়ায় শীতকালীন স্প্যেশাল অলিম্পিকে ফ্লোর বল, মেয়েদের ফ্লোর হকিতে পদক জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন এই বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষার্থী। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘এখানে পড়াশোনা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের হাতের কাজ, খেলাধূলার উপরে জোর দেওয়া হয়। হাসিরা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। নিজেদের প্রতিবন্ধকতা শুধু নয়, পরিবারের অভাবকেও ওরা হারিয়ে দিচ্ছে। আশা করছি বিদেশ থেকে ভাল ফল করেই ফিরবে।’’
জিরাটের ‘আস্থা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শিক্ষার্থী সুলতা শিকদার এবং তুষার মিত্র। বছর আঠেরোর সুলতা সাইকেল এবং তুষার ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করবেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সম্পাদক অচিন্ত্য দত্ত জানান, দু’জনেই এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। বাবা-মা ছোটখাট কাজ করে সংসার চালান।
লক্ষ্মী খাতুন, অনিতা ওঁরাও এবং গুড়িয়া রানী ভলিবল দলের প্রতিনিধি। তিন জনেই হাওড়ার আমতা ২ ব্লকের পারবাক্সির ‘চিরনবীন’ হোমের আবাসিক। হোম সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর আগে প্রশাসনিক নির্দেশে তাঁরা এখানে আসেন। সেই থেকেই তাঁদের ঠিকানা এই হোম। খেলার সঙ্গে তাঁদের যোগ ছিল না। হোমেই তাঁরা ভলিবল শিখেছেন। তিন জনই ২০১৭ সালে গুজরাতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন পশ্চিমবঙ্গ দলের সদস্য ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকলে প্রশিক্ষক মৌসুমি রায়ের সঙ্গে ট্রেনে দিল্লি রওনা হন। শুক্রবার রাজধানীতে পৌঁছেছেন। ৮ তারিখ পর্যন্ত সেখানে প্রশিক্ষণ শিবির চলবে। পরের দিন তাদের আবুধাবিতে পৌঁছনোর কথা। সেখানে কয়েক দিন অনুশীলন হবে। তার পরেই শুরু অলিম্পিকের লড়াই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy