Advertisement
০৮ মে ২০২৪

‘বিশ্বকাপ না পেলেও মেসিকে সেই সেরাই বলব’

হর্হে সাম্পাওলির দল আজ, শনিবার এ বারের বিশ্বকাপের ক্ষুদ্রতম দেশ আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে  নামছে। শক্ত গ্রুপে পড়েছে মেসির দল।

আজ মেসিরা নামছে বিশ্বকাপের ক্ষুদ্রতম দেশ আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

আজ মেসিরা নামছে বিশ্বকাপের ক্ষুদ্রতম দেশ আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০৫:৫১
Share: Save:

আর্জেন্টিনা এ বার বিশ্বকাপ জিতবে? লিয়োনেল মেসি কি পারবেন দিয়েগো মারাদোনাকে ছুঁতে? অভিজাত ক্লাবের আড্ডায় বা পাড়ার রাস্তায় সকালে হাঁটতে বেরোলেই এই প্রশ্নটার সামনে পড়তে হচ্ছে।

হর্হে সাম্পাওলির দল আজ, শনিবার এ বারের বিশ্বকাপের ক্ষুদ্রতম দেশ আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামছে। শক্ত গ্রুপে পড়েছে মেসির দল। ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া আছে। লড়াই বেশ কঠিন। গ্রুপ টপকে পরের দিকে গেলেও আর্জেন্টিনা এ বার চ্যাম্পিয়ন হবেই, এটা নিয়ে এখনই বাজি ধরতে পারছি না।

আর লিয়োনেল মেসি যদি এ বারও আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ না জেতাতে পারেন, তা হলেও তাঁকে আমি মারাদোনার চেয়ে এক ইঞ্চিও পিছিয়ে রাখতে রাজি নই। বরং সার্বিক সাফল্যের বিচারে সামান্য হলেও এগিয়ে রাখব মেসিকে। কারণ ফুটবল মাঠে জিনিয়াসদের বিচার একটা বিশ্বকাপ জেতা বা হারার উপরে নির্ভর করে না।

উদাহরণ হিসেবে অনেক নামই সামনে উঠে আসছে। যার মধ্যে ইয়োহান ক্রুয়েফের কথা বলতেই হবে। ক্লাবের জার্সিতে প্রচুর ট্রফি জিতেছেন, অথচ দেশকে বিশ্বকাপ দিতে পারেননি। এ রকম ফুটবলার অনেক আছেন। সে জন্যই বিশ্বের সর্বকালের সেরার তালিকায় পেলে, আলফ্রেদো দে স্তেফানো, মারাদোনার পাশে মেসিকে রাখতেই হবে। তবে এই তালিকায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে রাখতে পারছি না।

মেসি বিস্ময়কর প্রতিভা। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। আকাশ ছোঁয়া সব নজির! এক জন ফুটবলার একটা জীবনে যা করেছেন, তা অকল্পনীয়। শুধু বার্সেলোনাকেই তো মেসি দিয়েছেন বত্রিশটা ট্রফি। সোনার বল, বুট, রেকর্ড সংখ্যক পাঁচটা ব্যালন ডি’ওর! কী নেই সাফল্যের ঝুলিতে।

শুধু লা লিগাতেই এক বছরে ৫০ গোল আছে ওঁর। এবং মনে রাখতে হবে সেটা বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডারদের টপকে। আর ক’দিন পরে এই জুনেই একত্রিশে পড়বেন মেসি। এখনও কী নিখুঁত, মসৃণ ড্রিবলিং। দক্ষতার নিরিখে একজন ফুটবলারের কাছে ড্রিবলিং করাটাই সব চেয়ে কঠিন কাজ।

আমার সময়ে তো অনেক নামী ফুটবলার খেলতেন ভারতে। কিন্তু আমাকে সবাই সেরা বলতেন, ওই ড্রিবলিংয়ের জন্যই। মারাদোনাও সেটা করতেন। তবে মেসির পায়ে যেন ড্রিবলিং আরও সুন্দর দেখায়। বিশ্বকাপ জিতেছেন বলে মারাদোনাকে আর্জেন্টিনার মানুষ তাঁদের দেশে এগিয়ে রাখতে পারেন, কিন্তু তাঁরাও নিশ্চয়ই মনে মনে জানেন, ফাইনালে তুলেও মেসি বিশ্বকাপ পাননি। ভাগ্যে তা ছিল না বলেই। সবাই তো সব ম্যাচ বা ট্রফি জেতে না।

এটা ভুললে চলবে না যে ক্লাব আছে বলেই তো দেশ আছে। ক্লাবের জার্সিতে যিনি সাফল্যের আকাশ ছুঁয়েছেন, তাঁকে দেশের একটা ট্রফি দিয়ে বিচার করা ঠিক নয়। ক্লাবই তো তারকা ফুটবলার তৈরি করে। দেশ সেটা ভোগ করে। আমরা মোহনবাগানে সফল ছিলাম বলেই দেশের জার্সিতে সুযোগ পেয়েছি। মেসি তো সেখান একশোয় একশো। আর মনে রাখবেন, মেসি দেশের হয়েও কম গোল করেননি।

বিশ্বকাপ জিততে হলে একটা দলে অন্তত সাত-আট জন সম মানের ফুটবলার দরকার। যেটা জার্মানির গত বার ছিল। এ বারও আছে। কিছুটা আছে স্পেনেরও। কিন্তু মেসির আর্জেন্টিনায় কি তা আছে? উত্তর হল, নেই। মেসিকে আমি স্কিমারের চেয়েও এগিয়ে রাখি স্কোরার হিসেবে। মারাদোনার ক্ষেত্রে যা ঠিক উল্টো। আর গোল করতে হলে তো পাশে ভাল ফুটবলার চাই। বার্সায় মেসির পাশে খেলেছেন জাভি, ইনিয়েস্তার মতো ফুটবলার। সে জন্যই লা লিগায় ৩৮৩ টা গোল হয়ে গিয়েছে ওঁর। আর রাশিয়ায় এ বার মেসি পাশে পাবে কাদের? মাসচেরানো, দি মারিয়া, আগুয়েরোদের। এঁরা কতটা সাহায্য করতে পারবেন মেসিকে, আমার সন্দেহ আছে।

এর পাশাপাশি সাম্পাওলির রক্ষণের উপরেও ভারসা রাখতেই পারছি না। আর্জেন্টিনাকে কাপ জিততে হলে মেসির সঙ্গে তাঁর দলের রক্ষণকেও ভাল খেলতেই হবে। তবেই সাফল্য আসবে। আর্জেন্টিনার ডিফেন্স কতটা চাপ সামলাতে পারে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে থাকবে।

পরের বিশ্বকাপে হয়তো নীল- সাদা জার্সিতে মেসিকে দেখব না। মেসি নিজেও সম্ভবত সেটা ভালই জানেন। সে জন্য দেখছি নিজেও দারুণ মরিয়া বিশ্বকাপটা হাতে তুলতে। নানা সংবাদপত্রে দেখছি, সেটা বলছেনও। এ বার কাপ জিততে পারলে মারাদোনাকে অনেক পিছনে ফেলে দেবেন মেসি। ক্লাব ও দেশ মিলিয়ে পৌঁছে যাবেন সাফল্যের শিখরে। না জিতলে নিশ্চয়ই আক্ষেপ থেকে যাবে সারা জীবন। আমার মতো। ১৯৬২ সালের এশিয়াড চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র পেয়েও ভারত খেলেনি। তা নিয়ে আফসোস রয়ে গিয়েছে আজও। সব তো এক জীবনে হয় না।

অনেকেই বলেন উচ্চতা কম বলে মেসি হেডে সে ভাবে সফল নন। যা শুনলে অবাক লাগে। পেলে, মারাদোনার উচ্চতাও তো ছয় ফুটের কম ছিল। খেলাটা তো ফুটবল। পায়ে বল পড়লেই যিনি বিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দেন, তিনি হেডে ভাল না খারাপ, তাতে কী এসে যায়।

আইসল্যান্ডের কোনও ম্যাচ আমি দেখিনি। তবে শুনলাম ওদের ফুটবলারদের উচ্চতা ভাল। তাতে মেসির কোনও অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। লা লিগা, কোপা দেল রে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ও রকম কত লম্বা ফুটবলার মেসি-আগুনে ঝলসেছে, সেটা তো বিশ্ব জানে। সে জন্যই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ পাক বা না পাক, মেসি ঠিক সূর্যের মতোই থাকবেন ফুটবল বিশ্বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE