শ্রীলঙ্কার ওপর আর বিশেষ ভরসা নেই মুরলীধরনের। ফাইল চিত্র
এই গলেই সাত বছর আগে ঐতিহাসিক ৮০০ টেস্ট উইকেটের মাইলস্টোন পেরিয়েছিলেন তিনি। সেটাই ছিল তাঁর বিদায়ী টেস্ট। দুই ইনিংসে আট উইকেট নিয়ে সচিন, সহবাগ, লক্ষ্মণদের দশ উইকেটে হারানোর নায়ক ছিলেন তিনিই। এ বার সেই গলেই শ্রীলঙ্কার লজ্জার হার নিয়ে তিনি কি ক্ষুব্ধ? মুখে স্বীকার করলেন না ঠিকই। কিন্তু শান্ত মেজাজের কিংবদন্তিকে বেশ রাগতই শোনাল। কলকাতায় সিএবি-র ভিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি প্রকল্পের কাজে ব্যস্ত থাকার মধ্যেই মুথাইয়া মুরলীধরন শনিবার রাতে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন।
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কার এমন আত্মসমর্পণ দেখে কি আপনি হতাশ?
মুথাইয়া মুরলীধরন: আমি টেস্ট দেখিনি সে ভাবে। কলকাতায় প্র্যাকটিস করাচ্ছি। আমি হতাশ কি না, সে সব টেনে আনতে চাই না।
প্র: আপনি কি আর একটু বেশি প্রতিরোধ আশা করেননি নিজের দেশের ক্রিকেটারদের থেকে?
মুরলী: আশা সকলেই করে। সব সময় যে সেটা পূরণ হবে, তা নয়। চার দিনের জায়গায় পাঁচ দিন পর্যন্ত খেলা যেতে পারত বলছেন তাই তো? কে জানে। তাতে কী লাভ হতো? আমি ভাল করে ম্যাচ দেখিনি। আইডিয়া নেই কী হয়েছে। তাই দূরে বসে মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।
প্র: গল তো আপনার কাছে ঐতিহাসিক মাঠ। এখানেই আটশোতম উইকেট পেয়েছিলেন। নিশ্চয়ই অনেক সুখস্মৃতি আছে?
মুরলী: হ্যাঁ, অনেক সুখস্মৃতিই আছে। তবে গল বলে শুধু নয়, অন্যান্য জায়গাতেও কিন্তু আছে। আমরা প্রচুর ম্যাচ জিতেছি। দেশের মাঠে অন্তত আমরা উপরে থাকতাম। গলে জিতেছি, কলম্বোয় জিতেছি, ক্যান্ডিতেও জিতেছি।
প্র: সেই শাসন করার যুগটা পাল্টে গিয়েছে বলতে চান? আপনাদের সময় শ্রীলঙ্কা জিতত। এখন ভারত জিতছে।
মুরলী: তাই তো মনে হচ্ছে।
প্র: কেন এ রকম হচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
মুরলী: ভুল লোককে এই প্রশ্ন করছেন। এর উত্তর তো শ্রীলঙ্কা টিমের কোচের দেওয়া উচিত। এর জবাব আমি কী ভাবে দেব? আমি তো শ্রীলঙ্কা টিমের কোচ নই।
প্র: মনে হয় শ্রীলঙ্কা এখান থেকে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে পারে?
মুরলী: কী করে পূর্বাভাস করব? ক্রিকেটে কি পূর্বাভাস করা যায়? আমি শুধু বুঝতে পারছি, ভারত গলে দারুণ খেলে জিতেছে এবং সিরিজে চালকের আসন কব্জা করে নিয়েছে। ওরাই এখন উপরে আছে। মানসিকতায় এগিয়ে থাকবে, ফর্ম পেয়ে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকবে। ওদের গোটা টিম সব বিভাগেই ভাল করে কলম্বো যাচ্ছে।
প্র: স্পিনারদের যুদ্ধেও কি ভারত এগিয়ে থাকল? অথচ শ্রীলঙ্কায় আপনাদের আমলে উল্টো হতো।
মুরলী: কোন যুগে কী হতো, তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। অশ্বিন, জাডেজা ভাল বল করছে। ওরা ভাল স্পিনার। শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথ আছে। কিন্তু এই টেস্টে অন্তত ভারতীয় স্পিনাররা বেশি ভাল করেছে। এই যুদ্ধটা ওরা জিতেছে, অস্বীকার করার উপায় নেই।
প্র: এখনকার স্পিনারদের মধ্যে কাদের ভাল বলবেন?
মুরলী: অশ্বিন খুব উন্নতি করেছে। এখন অনেক পরিণত বোলার ও। দারুণ বল করছে। যত সাফল্য পাবে আত্মবিশ্বাস ততই আরও বাড়বে। জাডেজাকেও আমার ভাল লাগছে। ভারতের স্পিন শক্তিটা বেড়ে গিয়েছে অশ্বিনের সঙ্গে জাডেজা যোগ দেওয়ায়। শ্রীলঙ্কার হেরাথ আছে। পাকিস্তানেরও ভাল স্পিনার আছে।
প্র: ভবিষ্যতের কোনও মুরলীধরন বা শেন ওয়ার্ন কি চোখে পড়ছে?
মুরলী: রাতারাতি তো কেউ শেন ওয়ার্ন বা মুরলীধরন হয় না। সময় দিতে হবে। এখনকার প্রজন্ম থেকেও নিশ্চয়ই কেউ না কেউ উঠে আসবে।
প্র: পূর্বাভাস করবেন না বললেন। তবু জিজ্ঞেস করছি, সিরিজে শ্রীলঙ্কার পক্ষে ফেরা সম্ভব?
মুরলী: ক্রিকেটে সব কিছুই সম্ভব। তবে ভারত এখন শাসকের জায়গাটা নিয়ে ফেলেছে। এত বড় একটা জয়ের পর নিয়ন্ত্রণটা ওদের হাতে।
প্র: দু’দলের মধ্যে আর কী তফাত হতে পারে?
মুরলী: বিরাট কোহালি। গলে সেঞ্চুরি পেয়ে যাওয়ায় ওর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে। দারুণ ব্যাটসম্যান। বিরাট অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে ওর ব্যাটিংকে। যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন ওকে জমাট দেখাচ্ছে। ততই খুলছে ওর ব্যাটিং।
প্র: শ্রীলঙ্কায় সফল হওয়ার জন্য অশ্বিন, হেরাথদের জন্য বিশ্বের সফলতম স্পিনারের উপদেশ কী?
মুরলী: পাগল নাকি? আমি কেন উপদেশ দিতে যাব! ওরা সব পঞ্চাশের বেশি করে টেস্ট খেলে ফেলেছে। ওরা নিজেরাই যথেষ্ট ভাল বুঝবে, সফল হতে গেলে কী করতে হবে। আমার উপদেশের দরকার নেই।
প্র: বাংলায় স্পিনার কেমন উঠে আসছে? প্রতিশ্রুতি দেখতে পাচ্ছেন?
মুরলী: নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি দেখতে পাচ্ছি। অনেক প্রতিভাই আছে। তাদের সময় দিতে হবে। রাতারাতি কিছু হয় না। দু’এক বছরের মধ্যে তো আর স্পিনার বানিয়ে ফেলা যাবে না। তবে সময় দিলে, ধৈর্য ধরলে নিশ্চয়ই বাংলা থেকে স্পিনার বেরোবে।
প্র: কী রকম মানের স্পিনার বেরোতে পারে বাংলা থেকে?
মুরলী: দেখুন, তিন জনকে দাঁড় করিয়ে বলে দেওয়া সম্ভব নয়, এরা-এরা ভারতের হয়ে টেস্ট খেলবে। ও ভাবে বলা যায় না কখনও। যে কোনও ক্রিকেটারের উন্নতি, অগ্রগতি নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। তবে এটুকু বলতে পারি, পরিশ্রম করে গেলে বাংলা থেকে স্পিনার উঠবে। সেই মশলা অন্তত আমি দেখেছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy