Advertisement
০৮ মে ২০২৪
শুক্রবারই অনুশীলনে এলকো

কাঁদতে কাঁদতে ক্লাব তাঁবু ছাড়লেন ‘অসুস্থ’ আর্মান্দো

নাটকীয় ভাবে শেষ হয়ে গেল আর্মান্দো কোলাসোর লাল-হলুদের পনেরো মাসের জমানা। কলকাতা শুধু নয়, ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে বিদায় নিতে হচ্ছে পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

নাটকীয় ভাবে শেষ হয়ে গেল আর্মান্দো কোলাসোর লাল-হলুদের পনেরো মাসের জমানা। কলকাতা শুধু নয়, ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে বিদায় নিতে হচ্ছে পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচকে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই প্রকাশ্যে আসছেন দু’দিন রাজারহাটের এক হোটেলে কার্যত ‘লুকিয়ে’ থাকা নতুন কোচ এলকো সতৌরি। শুক্রবার থেকেই অনুশীলনে নেমে পড়ছেন প্রাক্তন ইউনাইটেড কোচ। আসন্ন এএফসি কাপের প্রস্তুতির জন্য।

আর্মান্দোর সঙ্গে বুধ-সন্ধ্যায় আলোচনার পর লাল-হলুদ কর্তারা যে চিত্রনাট্য করে দিয়েছেন তাতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে অনুশীলনে এসে আর্মান্দো নিজেই ঘোষণা করবেন, “আমি অসুস্থ তাই কোচের পদ ছেড়ে দিচ্ছি। ইস্টবেঙ্গলের জন্য শুভেচ্ছা রইল।” সব ঠিকঠাক চললে বিকেলে ‘অসুস্থ’ গোয়ান কোচ-ই ফুল এবং দায়িত্ব তুলে দেবেন নতুন ডাচ কোচের হাতে। জানাবেন শুভেচ্ছাও। যেমন দেড় বছর আগে মার্কোস ফালোপা তুলে দিয়েছিলেন আর্মান্দোর হাতে। তবে দুটো ‘শুভেচ্ছা’-র পার্থক্যটা হল, ডার্বির দিন নতুন কোচ শহরে এনে তীব্র চাপ সৃষ্টি করার পর বর্তমান কোচকে রাজি করানো হল দায়িত্ব ছাড়তে। বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নিজে থেকে না সরলে তাঁকে ছাঁটাই করা হবে।

হিসাব-নিকেশ বুঝে নিয়ে এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ আর্মান্দো যখন ক্লাব তাঁবু থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁর চোখে জল! পাস থেকে ইস্টবেঙ্গলের এক যুব-কর্তা বলছেন, ‘ডোন্ট ক্রাই কোচ। ডোন্ট ক্রাই’। কিন্তু সেটা যেন কানে ঢুকলই না অতান্ত অপমানজনক অবস্থায় বিদায় নেওয়া গোয়ানের। ঘিরে ধরা অসংখ্য মিডিয়াকে এড়াতে মুখের সামনেটা হাত দিয়ে আড়াল করে দ্রুত উঠে পড়লেন গাড়িতে। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “কাল ক্লাবে আসছি, যা বলার বলব।’ এ দিন অবশ্য তাঁর গাড়ির চালক ছিলেন না টিমের সাত নম্বর গোলকিপার টাইসন। বদলে কোচকে গাড়িতে করে নিয়ে এসেছিলেন আর এক গোয়ান কিপার লুই ব্যারেটো।

ডার্বির দিন রাতে এবং বুধবার সকালে অবশ্য পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। ঘনিষ্ঠ মহলে আর্মান্দো মন্তব্য করেছিলেন, তাঁকে যে ভাবে সরানোর ব্যবস্থা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। সেটা কানে যায় লাল-হলুদ কর্তাদের। তাঁকে বোঝানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং তাতে কাজ হয়। ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য তাঁকে সন্ধ্যায় ক্লাবে আসতে বলেন। সেখানে সচিব কল্যাণ মজুমদার-সহ আরও কয়েক জন কর্তা ছিলেন। আলোচনা শুরু হয়। আর্মান্দোকে জানানো হয়, তিনি নিজেই চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন অসুস্থতার জন্য বারবার গোয়ায় যেতে হচ্ছে বা বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় কোচিং করবেন কী করে? আর্মান্দো নাকি পাল্টা যুক্তি দেন, তিনি এখন সুস্থ। কোচিং করতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু কর্তারা রাজি হননি। জানিয়ে দেওয়া হয়, আপনি বকেয়া নিয়ে বাড়িতে বসে বিশ্রাম নিন।

কোচের সঙ্গে আলোচনার পর সরকারি ভাবে কিছুই ঘোষণা করেননি ক্লাব কর্তারা। উল্টে সচিব কল্যাণ মজুমদার বলে দেন, “আমাদের কোচ এখনও বদল হয়নি। আপনারাই এ সব লিখছেন। কোনও এলকো, ফেলকো, কেলকোকে আমি চিনি না। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে আনতেই পারে। তবে প্রতিদিনই নতুন সকাল। নতুন কোনও খবর কাল হতেই পারে।” নাটকীয় ভঙ্গীতে এ সব বলার পর লাল-হলুদ সচিবকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে আর্মান্দো হঠাৎ এসেছিলেন কেন? যাওয়ার সময় কাঁদলেনই বা কেন? “ও হিসাব-নিকেশ বুঝে নিতে এসেছিল। আপনাদের আর দেখতে পাবে না বলে হয়তো কেঁদেছে। আমি কিন্তু দেখিনি।” রসিকতা শোনানোর মতো মুখ করে বলেন কল্যাণবাবু।

আসলে আর্মান্দোকে পনেরো মাস দেখেও কর্তারা বুঝে উঠতে পারেননি তিনি কি চান। গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে বিদায় নেওয়া পরও রাত পোহালেই বিদায়ী কোচ আবার বেঁকে বসেন কি না তা নিয়ে সন্দিগ্ধ অনেকেই। সে জন্যই সহকারী কোচ সুজিত চক্রবর্তীকে বলে দেওয়া হয়েছে আজ অনুশীলন করানোর জন্য। তবে আর্মান্দোর বিদায়ে খুশি দলের আশি শতাংশ ফুটবলরাই। বিশেষ করে পঞ্জাবি, বঙ্গসন্তান, বিদেশি ফুটবলাররা। তাদের প্রায় সকলেরই মন্তব্য, “এ বার দমবন্ধ করা পরিস্থিতি হয়তো বদলাবে। ড্রেসিংরুমের ব্ল্যাকবোর্ডে ক্লাসও হবে। অনুশীলনটাও ঠিকঠাক হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

colaco east bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE