এক দিকে, দীর্ঘ দিনের নীরবতা ভেঙে আইপিএল-কেলেঙ্কারি নিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুখ খোলা। অন্য দিকে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বেসামাল নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপকে ঘিরে জল্পনা।
ভারতীয় ক্রিকেটে চেনা জুটিকে আর দেখা যাবে কি না, ঘোরতর সন্দেহ। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবারটা অন্তত কিছুটা শ্রীনি-ধোনির হয়ে থাকল।
সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন ব্যাপারে বারবার তাঁর নাম জড়িয়ে যেতে দেখে ধোনি বলে দিলেন, এ সবে তিনি আর প্রভাবিত হন না। জানেন, ভারতীয় ক্রিকেটে কিছু একটা ঘটলেই তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়া হবে!
শ্রীনি আবার ভারতীয় টিমের সঙ্গে জড়িত কাউকে কাউকে এবং বোর্ডে তাঁর ঘনিষ্ঠদের ফোন করে-করে বলে দিলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে। তিনি তাঁর স্ট্র্যাটেজি মোটামুটি তৈরি করে ফেলেছেন! যা নাকি সিএসকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ব্যাপারটা হলফনামা করে সুপ্রিম কোর্টে জমা করে দেওয়া।
এখানেই শেষ নয়। শ্রীনি শিবিরের জন্য আরও একটা ভাল খবর থাকছে। রবিবার আইসিসি এক বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে, দুবাইয়ে জানুয়ারি ২৮-২৯ তারিখ আইসিসি-র বোর্ড মিটিং। যে মিটিং চেয়ার করবেন স্বয়ং শ্রীনিবাসন। “আইসিসি বোর্ডে আছে ১০টা পূর্ণ সদস্য দেশের প্রতিনিধি। তিনটে অ্যাসোসিয়েট সদস্য দেশের প্রতিনিধি। যে মিটিং চেয়ার করবেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। যে মিটিংয়ে আরও থাকবেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট এবং আইসিসি চিফ এগজিকিউটিভ,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে। আইসিসি-র এই বিবৃতিতে শ্রীনির একটা কাঁটা অন্তত সাময়িক ভাবে সরল বলে মনে করা হচ্ছে। সঙ্গে এও মনে করা হচ্ছে, ভারতীয় বোর্ডেও তাঁর আধিপত্য এখনও অটুট আছে। কারণ ভারতীয় বোর্ড বাধা দিলে আইসিসি-তে শ্রীনির থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেতেই পারত।
শ্রীনির পদক্ষেপ তবু আগাম আঁচ করতে পারছিল ক্রিকেটমহল। কিন্তু ধোনির আচমকা মুখ খোলায় অনেকেই অবাক। সুপ্রিম কোর্টে আইপিএল স্পট ফিক্সিং মামলা চলার সময় স্বার্থের সংঘাত প্রশ্নে ধোনির নাম জড়িয়েছিল। বলা হয়েছিল কী করে তিনি একই সঙ্গে ভারত অধিনায়ক, সিএসকে অধিনায়ক আর ইন্ডিয়া সিমেন্টসের পদাধিকারী হতে পারেন? আবার মুদগল কমিশনের পেশ করা মুখবন্ধ খামে তেরো ক্রিকেটারের নামের মধ্যে তাঁরও নাম আছে কি না, সেটা নিয়ে প্রবল জল্পনা চলেছে। যা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে নামার আগে ধোনি বলে দিলেন, এ সব দেখে-দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন তিনি।
“একটা ব্যাপার এখন খুব ভাল করে জেনে গিয়েছি। যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, ভারতীয় ক্রিকেটে কিছু একটা হওয়া মানে সঙ্গে সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হবে। এই একটা ব্যাপার মিটল, এখন নতুন কিছু একটা তুলে আনা হবে। এটা চলতেই থাকবে। একটা শেষ হলে আমাকে জড়িয়ে আরও একটা কিছু ছড়ানো হবে। আমি এ সবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি,” বলে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, “কিছুই না থাকলে বানিয়ে একটা ছোট-বড় কিছু একটা ছেড়ে দেওয়া হবে। আমাকে সব সময় এগুলো নিয়েই চলতে হয়। এই যেমন এখন একটা ব্যাপার শেষ হল। আগামী কয়েক দিনে হয়তো নতুন একটা কিছু শুরু হবে।”
ধোনিকে নিয়ে আগামী কয়েক দিনে নতুন কিছু ঘটবে কি না, সময় বলবে। শ্রীনি-নাটকে কিন্তু আগামী কয়েক দিনে ভাল মশলার সম্ভাবনা পাচ্ছেন কোনও কোনও বোর্ড কর্তা। ইতিমধ্যেই জোরালো জল্পনা চলছে যে, বোর্ড প্রেসিডেন্টের সিংহাসন বাঁচাতে সিএসকে-তে ইন্ডিয়া সিমেন্টসের শেয়ার নাকি বিক্রি করে দিচ্ছেন শ্রীনি। শুধু তাই নয়, আর কয়েক দিনের মধ্যে আদালতেও হলফনামা পাঠিয়ে জানিয়ে দেবেন যে, তাঁর কোম্পানির সঙ্গে সিএসকের আর কোনও সম্পর্ক নেই। তাই কোনও স্বার্থের সংঘাত বা বাণিজ্যিক স্বার্থ থাকার আর কোনও সম্ভাবনাও নেই। তিনি নাকি আবেদন করতে পারেন যে, আদালত যা নির্দেশ দিয়েছিল, তা তিনি যখন পালন করেছেন, তখন তাঁকে নির্বাচনে দাঁড়াতে দেওয়া হোক।
শোনা গেল, শ্রীনি নাকি ইতিমধ্যে ঘনিষ্ঠদের আশ্বস্ত করেছেন যে, আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হয়েছে। কী করবেন, সেটাও মোটামুটি ঠিক করেছেন। এখন তিনি নাকি অপেক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠকের। মনে করা হচ্ছে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা অনেকটাই নির্ভর করবে জেটলির সমর্থন কোন দিকে থাকে, তার উপর। বলা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফিরে না গেলে বৈঠকের সময় বার করা সম্ভব হচ্ছে না। তার পরই নাকি আদালতে হলফনামা পেশ করতে দেখা যেতে পারে শ্রীনিকে। কিন্তু তাতেও যে নির্বাচনে অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট দাঁড়াতে পারবেন, গ্যারান্টি কোথায়? রায়ে তো বলা আছে, যতক্ষণ কেউ বাণিজ্যিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবেন, বোর্ড নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, তিন সদস্যের কমিশনও তদন্ত করবে পাশাপাশি। আর যেটা দেরিতে আসবে, গ্রাহ্য করা হবে সেটা। কিন্তু তাতেও অনড় শ্রীনি শিবির। বলা হচ্ছে, শ্রীনি বাণিজ্যিক স্বার্থ বা স্বার্থের সংঘাত থেকে মুক্ত সত্যি হচ্ছেন কি না, সেটা কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে। বোঝা যাবে, সিএসকের সঙ্গে ইন্ডিয়া সিমেন্টসের সম্পর্ক আর আছে কি না। তার জন্য তদন্ত কমিশনের কী দরকার?
টুইটার-বিতর্কে কোহলি
নিজস্ব প্রতিবেদন
‘মুদগল কমিটির রিপোর্টের রহস্যময় দু’নম্বর ব্যক্তি কি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি?’
মাসখানেক আগে চাঞ্চল্যকর এই শিরোনাম নিয়ে বিস্ফোরক একটা রিপোর্ট বেরিয়েছিল মুম্বইয়ের এক সংবাদপত্রে। এবং নতুন বছরে হঠাৎ করেই যা নতুন বিতর্ক তৈরি করে দিল। যে বিতর্কে ধোনির সঙ্গে জুড়ে গেল বিরাট কোহলির নাম।
শনিবার টুইটার-জগৎ হঠাৎই আবিষ্কার করে যে, ধোনি-বিরোধী ওই রিপোর্টটা নিজের পঞ্চাশ লক্ষের বেশি ফলোয়ারদের ‘রিটুইট’ করেছেন বিরাট। শুধু তাই নয়, টুইটারে নিজের ‘ফেভারিট’ তালিকাতেও রিপোর্টটা রয়েছে। রহস্যময় আবির্ভাবের মতোই রহস্যজনক ভাবে আবার উধাও হয়ে যায় টুইটটা। শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ দেখা যায়, টুইটটা ‘ডিলিট’ করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ততক্ষণে আগুন যা ছড়াবার, ছড়িয়ে গিয়েছে। ক্রিকেটমহলে প্রশ্নের ঝড় উঠে গিয়েছে যে, কোহলি কি তা হলে খোলাখুলি ধোনি-বিরোধী শিবিরে নাম লিখিয়ে ফেললেন? তবে অনেকেই মনে করছেন, এই ব্যাপারে কোহলিকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দেওয়া উচিত। হয়তো বিরাট নিজে রিপোর্টটা রিটুইট করেননি। হয়তো তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট বেআইনি ভাবে ব্যবহার করে অন্য কেউ কাজটা করেছে। তারকাদের টুইটার বা ফেসবুক প্রোফাইল ‘হ্যাক’ হওয়া তো নতুন নয়।
মুদগল কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছিল যে, গুরুনাথ মইয়াপ্পন নিয়ে সত্যি কথা বলেননি চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক ধোনি। তিনি কমিটিকে বলেছিলেন যে, মইয়াপ্পন নাকি নিছকই ক্রিকেট-উৎসাহী। কিন্তু তদন্তে নিঃসংশয় ভাবে প্রমাণিত হয়, মইয়াপ্পন টিমের অন্যতম কর্ণধার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy