বিসিসিআই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। ১৮ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই মামলার রায় দেওয়ার পরেও যে ভাবে বোর্ডের শীর্ষকর্তারা চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, সোমবার তারই শাস্তি পেতে হল অনুরাগ ঠাকুর ও অজয় শিরকে-কে।
এখন প্রশ্ন, ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে অদূর ভবিষ্যতে কী আসতে চলেছে?
প্রথমেই বোর্ড ও রাজ্য ক্রিকেট প্রশাসন থেকে সেই সব কর্তাদের সরে যেতে হবে, বিচারপতি লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যাদের ক্রিকেট প্রশাসনে থাকার যোগ্যতা নেই। এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সোমবার থেকেই তারা বাতিলের খাতায় চলে গিয়েছে। রায়ের ১৫ নম্বর পাতায় এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা রাজ্য সংস্থাকেও তাই এখনই পরিবর্তন শুরু করতে হবে।
বোর্ডে আপাতত সবচেয়ে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টকে অনুরাগের জায়গায় বসানো হবে। যত দিন না গঠনতন্ত্রে সংশোধন করে ফের বার্ষিক সভা ও নির্বাচন হচ্ছে। শিরকের জায়গায় কাজ করবে অমিতাভ চৌধুরী। তারও মেয়াদ একই। বাকি অন্যান্য কমিটিগুলো অবশ্য এখনই বাতিল হচ্ছে না। সংশোধনের পর নতুন করে কমিটি তৈরি হবে।
১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট যে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের কমিটি গঠন করে দেবে, তাদের অধীনেই থাকবেন এই অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ও সচিব। এই কমিটির কাজ হবে বিচারপতি লোঢা কমিটির সুপারিশগুলো বোর্ড ও তার অনুমোদিত সংস্থাগুলোতে যথাযথ কার্যকর করে সবক’টি সংস্থার গঠনতন্ত্রে সংশোধনের প্রক্রিয়া পূরণ করা।
দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অনেকেই প্রশ্ন করছেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত নিযুক্ত প্রশাসক হওয়ার কোনও আইনি সমস্যা আছে কি না। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না সৌরভ। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট বলেই দিয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্টদের মধ্যে থেকেই তাকে বেছে নিতে হবে। কিন্তু অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের কমিটিতে থাকতে কোনও আইনি সমস্যা নেই সৌরভের। এমনকী সে জন্য সিএবি প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়াটাও ওর পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়। তবে একই সঙ্গে দুটো পদে এক জনকে চাইবে কি না আদালত, সেটা একটা প্রশ্ন তো বটেই।
জানি না কোন আইনি পরামর্শে অবাস্তব অবস্থান নিয়েছিল বোর্ড। এ দেশের প্রতিটি মানুষ ও প্রতিটি সংস্থা যে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানতে বাধ্য, এটা যে কোনও আইনি পরামর্শদাতারই মজ্জাগত হওয়া উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে তার উল্টোটাই দেখা গেল। দুই শীর্ষকর্তাকে প্রায় জোর করে ক্রিকেট বোর্ড থেকে বার করে দেওয়ার ঘটনা বোর্ডের ইতিহাসে কখনও ঘটেছে বলে মনে পড়ে না।
বোর্ডকর্তারা হয়তো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নতুন আইন তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টের রায় ঠেকানোর কথা ভেবেছিল। কিন্তু কোনও একটি নির্দিষ্ট ক্রীড়া সংস্থার স্বার্থে যে এ ভাবে নতুন আইন তৈরি করা যায় না, এই জ্ঞানটুকু থাকা উচিত ছিল ওদের।
এই চরম ঔদ্ধত্য না দেখিয়ে অনুরাগরা লোঢা কমিটির সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করলে ও আলোচনায় বসলে হয়তো ‘তিন বছরের মেয়াদ’ বা ‘কুলিং অফ পিরিয়ড’-এর মতো সুপারিশগুলো বিচারপতি লোঢারা পুনর্বিবেচনা করে দেখতেন। কিন্তু অনুরাগদের ভুলেই দেশের ক্রিকেটকে এই চরম অশান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হল।
(লেখক বোর্ডের প্রাক্তন মুখ্য আইনি উপদেষ্টা)