Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অবসর নিলেও শেষ নিয়ে জল্পনা

লক্ষ্মীর বদলি বেছে আবার সামনে হাঁটা শুরু বাংলার

লক্ষ্মীরতন শুক্ল অবসর নেওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই তাঁর বদলি খুঁজে নিল বঙ্গ ক্রিকেট। লক্ষ্মী-যুগ ছেড়ে হাঁটতে শুরু করল সামনের দিকে। বাংলার প্রাক্তন অলরাউন্ডারের জায়গায় সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের টিমে নেওয়া হল ভবানীপুরের ওপেনার অভিষেক দাসকে।

লক্ষ্মী-হীন বাংলার প্র্যাকটিস। বুধবার। -শঙ্কর নাগ দাস

লক্ষ্মী-হীন বাংলার প্র্যাকটিস। বুধবার। -শঙ্কর নাগ দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা:
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:১২
Share: Save:

লক্ষ্মীরতন শুক্ল অবসর নেওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই তাঁর বদলি খুঁজে নিল বঙ্গ ক্রিকেট। লক্ষ্মী-যুগ ছেড়ে হাঁটতে শুরু করল সামনের দিকে। বাংলার প্রাক্তন অলরাউন্ডারের জায়গায় সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের টিমে নেওয়া হল ভবানীপুরের ওপেনার অভিষেক দাসকে।

বুধবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বাংলা এবং লক্ষ্মীরতন শুক্লের দীর্ঘ বাইশ বছরের গাঁটছড়া ছিন্ন হয়ে গেল। এবং লক্ষ্মীরতনের এমন সিদ্ধান্তে বঙ্গ ক্রিকেটমহল কিছুটা অবাক হলেও এর পিছনে রাজনীতির প্রভাব দেখছে না। কোনও খলনায়ক খুঁজে পাচ্ছে না।

বাংলার নির্বাচক প্রধান দেবাঙ্গ গাঁধী যেমন। যিনি মেনে নিচ্ছেন যে, লক্ষ্মীর এ ভাবে অবসরে চলে যাওয়া বাংলা ক্রিকেটের পক্ষে বড় ধাক্কা। তিনি মনে করেন, লক্ষ্মী চলে যাওয়ায় যে শূন্যতাটা তৈরি হল, তা পূর্ণ করা সহজ হবে না। কিন্তু দেবাঙ্গ সঙ্গে এটাও বললেন যে, ‘‘অবসর কখন নেবে, সেটা সেই প্লেয়ারই সবার চেয়ে ভাল বোঝে। ও যেটা বলেছে যে নিজেকে আর মোটিভেট করতে পারছিল না, সেটা সত্যি হলে ন্যায্য সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তবে আমার ব্যক্তিগত মত, ও আরও দু’তিন বছর খেলে দিতে পারত।’’ উৎপল চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন যে, নিজের ফিটনেস কোন জায়গায়, সেটা লক্ষ্মীর চেয়ে কেউ আর ভাল বুঝতে পারতেন না। বললেন, ‘‘ওর ব্যাপারটা ও-ই সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারবে। আর এটা তো ভালই হল। অবসর এমন সময় নেওয়া উচিত যাতে লোকে বলে কেন গেলে। এমন সময় নেওয়া উচিত নয়, যখন লোকে বলছে কেন যাচ্ছ না?’’

শুধু দেবাঙ্গ বা উৎপল নন, বাংলা ক্রিকেটের অনেক প্রখ্যাত মুখই মনে করেন লক্ষ্মী আরও কয়েক বছর খেলে দিতে পারতেন। তবে একই সঙ্গে তাঁদের এটাও মত, সিদ্ধান্তটা একান্তই লক্ষ্মীর। যা সম্মান করা উচিত। যে তালিকায় প্রাক্তন বাংলা কোচ অশোক মলহোত্র, প্রাক্তন বাংলা অধিনায়ক দীপ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে সতীর্থ সৌরাশিস লাহিড়ী-শিবশঙ্কর পাল, অনেকে আছেন। তবে লক্ষ্মী চলে যাওয়ায় বাংলা ক্রিকেটের ক্ষতি কতটা হল, তা নিয়ে মতভেদ আছে। দীপ দাশগুপ্ত যেমন বললেন, ‘‘কারও অবসর কোনও টিমের কাছেই ধাক্কা নয়। আমি তো বরং ওকে অভিনন্দন জানাব ওর অসাধারণ একটা কেরিয়ারের জন্য।’’

জুনিয়র ক্রিকেটে লক্ষ্মীর কোচ গোপাল বসু কিন্তু মনে করেন, লক্ষ্মীর অভিজ্ঞতা যে টিমকে সাহায্য করতে পারত, সেটা আর হবে না। বলছিলেন, ‘‘বাংলার বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। ও মাঠে নামলে লড়াইয়ের একটা আগুন বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে যেত। আসল লক্ষ্মীর আত্মপ্রকাশ ওর প্রতিভা নয়, এই ল়ড়াইটার মধ্যেই। বাংলার এই তরুণ টিমের ভরসা ছিল যে, ছ’নম্বরে লক্ষ্মী আছে। কিছু হলে ও বাঁচিয়ে দেবে। সেই ভরসাটা আর থাকল না।’’ অশোক মলহোত্রও এটা মনে করেন। বলছেন, ‘‘লক্ষ্মী চলে যাওয়ায় বাংলা ক্রিকেটের কিছুটা অসুবিধে তো হবেই। ও যে জায়গাটা খালি করে যাচ্ছে, সেটা ভরাট করা খুব কঠিন।’’ বাংলার প্রাক্তন নির্বাচক প্রধান রাজু মুখোপাধ্যায় আবার ক্ষয়ক্ষতির হিসেবেই গেলেন না। বরং বললেন, ‘‘কতটা ক্ষতি হল, কী ভাবে বলব? তবে এটা বলব যে, লক্ষ্মী বাংলা ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছে। ও যা করে, দরদ দিয়ে করে। আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে ও যে কাজে নামবে, সেটাও সমান দরদ দিয়েই করবে। সেটা সমাজসেবাই হোক বা অন্য কিছু।’’

শুধু একটা ফুলকি আর একটা ধোঁয়াশা পাওয়া গেল। ফুলকিটা দিলেন সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। লক্ষ্মীর অবসর ঘোষণা কেন সিএবি-র বদলে মোহনবাগান মাঠে হল তা নিয়ে বিশ্বরূপ বলে গেলেন, ‘‘ওর অবসর মোহনবাগান মাঠে হল না গাছতলায় হল, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল এত দুঃখ, এত যন্ত্রণা নিয়ে লক্ষ্মী চলে যাচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে খারাপ। আমি তো ক্রিকেট খেলি না। কিন্তু যারা ক্রিকেট খেলে, তাদের এই কষ্টটা বোঝা উচিত ছিল।’’ আর ধোঁয়াশাটা হল, লক্ষ্মীর সার্বিক অবসর নিয়ে। সিএবি-কে যে মেল লক্ষ্মী পাঠিয়েছেন সেখানে বলা বাংলা থেকে তিনি সরে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কথা কোথাও বলা নেই। টেকনিক্যালি তাঁর অন্য রাজ্যে যাওয়ার পথ খোলা যদিও এই মুহূর্তে সেটা খুব বাস্তবসম্মত নয়। লক্ষ্মীকে এই নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি খোলসা করে কিছু বলেননি। এবং ক্রিকেট কিটব্যাগও যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমনও নয়। লক্ষ্মী স্থানীয় ক্রিকেটে খেলবেন মোহনবাগানের হয়ে। ক্লাব যত দিন খেলাবে, তত দিন।

ফিরতে পারেন সম্বরণ: বাংলার ক্রিকেট সার্কিটে ফিরতে পারেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার একমাত্র রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক মাসখানেক আগে পর্যন্ত বাংলার নির্বাচক প্যানেলে ছিলেন। কিন্তু দেবাঙ্গ গাঁধী প্রধান নির্বাচক হওয়ার পরে তিনি পদত্যাগ করেন। এ দিন লক্ষ্মী-নাটকের মধ্যে এক অনুষ্ঠানে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই কেন এত ইস্তফার হিড়িক পড়ে গিয়েছে সিএবিতে? উত্তরে সৌরভ বলেন, ‘‘রাজু মুখোপাধ্যায় কেন চলে গিয়েছিলেন, সবাই জানে। আর সম্বরণ নিজে ফিরতে চেয়েছেন। আমরা সেটা নিয়ে ভাবছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bengal laxmi ratan shukla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE