Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Cricket

কোহালি, ধোনিদের দেখে নিজেকে তৈরি করেন নায়ক

গত ২২ জানুয়ারি বিশ্বকাপ চলাকালীন দিদিকে হারিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের কেউ তাঁকে সেই খবর জানায়নি।

লক্ষ্য: দু’বছরের মধ্যে জাতীয় দলে ঢুকতে চান আকবর। টুইটার

লক্ষ্য: দু’বছরের মধ্যে জাতীয় দলে ঢুকতে চান আকবর। টুইটার

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

বিশ্বজয়ী দলের তালিকায় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে জায়গা করে দিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলি। তাঁর অপরাজিত ৪৩ রানের সৌজন্যেই প্রথম বার বিশ্বমঞ্চে ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশ। তা-ও ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে। কিন্তু ১৮ বছরের তরুণ বাইশ গজেও যেমন লড়াকু, মাঠের বাইরেও চারিত্রিক কাঠিন্য দেখার মতো।

গত ২২ জানুয়ারি বিশ্বকাপ চলাকালীন দিদিকে হারিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের কেউ তাঁকে সেই খবর জানায়নি। বিশ্বকাপে ছেলের মনঃসংযোগ নষ্ট হতে দিতে চাননি আকবরের পরিবার। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি পরিবারের এক সদস্যকে ফোন করার পরে পুরো ঘটনা জানতে পারেন তিনি। নিজেকে কী ভাবে সামলাবেন, বুঝতে পারছিলেন না আকবর। বিশ্বজয়ের পরে আনন্দবাজারকে ফোনে আকবর বলছিলেন, ‘‘সে বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আশা করব, আমার এই অনুরোধ রাখবেন।’’ তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, দিদির মৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারেননি তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।

২০১২-তে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন আকবর। সেখানেই ক্রিকেটের সঙ্গে চলত পড়াশোনা। ছোট থেকেই দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন ছিল আকবরের। প্রিয় ক্রিকেটার শাকিব আল হাসানকে দেখে ব্যাট ধরা শিখেছিলেন। সেই সঙ্গেই আগ্রহ ছিল উইকেটকিপিংয়ে। বিশ্বকাপে যে ধৈর্যশীল ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি, তাতে ক্রিকেটবিশ্ব মুগ্ধ। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গেও তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর। কিন্তু আকবর তুলনা চান না। বলছিলেন, ‘‘ধোনি কিংবদন্তি। তাঁর সঙ্গে আমার তুলনা চাই না। তবে স্পিনারদের বিরুদ্ধে ও যে ভাবে কিপিং করে, সেখান থেকে শেখার চেষ্টা করি। আর পেসারদের বিরুদ্ধে আমার পছন্দের উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা। আমি মনে করি, বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার ঋদ্ধিদা।’’

শাকিবের ভক্ত হলেও বিশ্বকাপের আগে বিরাট কোহালির রান তাড়া করার বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ইউটিউবে দেখেছিলেন আকবর। কেন বিরাটকে ‘চেজমাস্টার’ বলা হয়, সেই আগ্রহেই ভারতীয় অধিনায়কের ইনিংসে নজর রাখতে পছন্দ করেন তিনি। ‘‘কোহালির মতো ব্যাটসম্যান ক্রিকেটবিশ্বে নেই। চেষ্টা করি, ওর প্রত্যেকটি ইনিংসে নজর রাখার। বিশ্বকাপের আগে ওর প্রচুর ইনিংসের ক্লিপিংস দেখেছি। কী ভাবে রান তাড়া করতে হয়, ক্রিকেটবিশ্বকে শিখিয়েছে বিরাট। আমিও ওর মতো রান তাড়া করতে পছন্দ করি। এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতির জন্যই অপেক্ষা করি।’’

প্রথম বিশ্বকাপ কাকে উৎসর্গ করতে চান? ‘‘অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষদের। আমাদের দেশে ক্রিকেট প্রচণ্ড জনপ্রিয়। জয়ে, পরাজয়ে সব সময়েই সমর্থকেরা পাশে থাকেন। অনেক ম্যাচে আমরা তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু তাতে সমর্থনে কোনও খামতি লক্ষ্য করিনি। বরং গত রবিবার পোচেস্ট্রুমে ভারতীয় সমর্থকদের চেয়েও বোধহয় আমাদের সমর্থকেরাই বেশি গলা ফাটিয়েছিলেন। এই বিশ্বকাপ প্রত্যেকটি সমর্থকের জন্য।’’

কত দিনের মধ্যে সিনিয়র দলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন? আকবরের উত্তর, ‘‘সিনিয়র দলে সুযোগ পাওয়া কি এতই সহজ? এ তো সবে একটি ইনিংস খেলেছি। এ রকম ইনিংস ধারাবাহিক ভাবে উপহার দিতে না পারলে কেন জাতীয় দলে আমাকে নেওয়া হবে? অভিজ্ঞতায়ও আমি অনেক পিছিয়ে রয়েছি। দাঁতে দাঁত চেপে পরিশ্রম করতে হবে। উন্নতি করতে হবে আরও। তবে চেষ্টা করব এক-দুবছরের মধ্যে সিনিয়র দলে সুযোগ পেতে।’’

ম্যাচের পরে দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। ম্যাচ চলাকালীনও প্রচুর স্লেজিং ও আগ্রাসী আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। আকবর যদিও ম্যাচ শেষে সতীর্থদের আচরণ নিয়ে হতাশ। বলছিলেন, ‘‘বুঝতে পারিনি বিষয়টি এ ভাবে শেষ হবে। আমরা মাঠে আগ্রাসন দেখিয়েছি। দু’দলই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু দিনের শেষে ক্রিকেট জেন্টলম্যান’স গেম। সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল প্রত্যেকের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE