Advertisement
০১ মে ২০২৪
এক্সক্লুসিভ: অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে খোলামেলা শাস্ত্রী

‘নিজের শহর বাদে সবই তো অ্যাওয়ে’: শাস্ত্রী

শ্রীলঙ্কায় ৯-০ হোয়াইটওয়াশের পরে অস্ট্রেলিয়াকে দেশের মাটিতে ওয়ান ডে সিরিজে ৪-১ উড়িয়ে দেওয়া। এ বার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহর রাঁচিতে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টির লড়াই। তার আগে তিন দিনের ছুটি কাটানোর ফাঁকে আনন্দবাজার-কে খোলামেলা, একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। আজ শেষ পর্ব।শ্রীলঙ্কায় ৯-০ হোয়াইটওয়াশের পরে অস্ট্রেলিয়াকে দেশের মাটিতে ওয়ান ডে সিরিজে ৪-১ উড়িয়ে দেওয়া। এ বার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহর রাঁচিতে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টির লড়াই। তার আগে তিন দিনের ছুটি কাটানোর ফাঁকে আনন্দবাজার-কে খোলামেলা, একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। আজ শেষ পর্ব।

হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। ছবি:সংগৃহীত।

হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। ছবি:সংগৃহীত।

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৮
Share: Save:

প্রশ্ন: অনেক তরুণ ক্রিকেটার ভাল পারফর্ম করছেন। তাঁরা বেশি সুযোগও পাচ্ছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে কি এটা ভেবেচিন্তেই করা হচ্ছে?

রবি শাস্ত্রী: আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি যে, খেলাটার বিবর্তন হতে দিতে হবে। সব সময় খেলাটাকে এগিয়ে যেতে দিতে হবে। ভারত বিশাল একটা দেশ। প্রচুর প্রতিভা রয়েছে সুবৃহৎ এই দেশে। তাদের পরখ করা দরকার। আমাদের কাজ হচ্ছে, সেরা প্রতিভাদের চিহ্নিত করে ক্ষুধার্ত করে তোলা, সুপার ফিট করে তোলা। বিশ্বকাপের ছয় বা আট মাস আগে থেকে সেরা টিম বেছে নিয়ে তাদের সেরা কন্ডিশনে নিয়ে যাও।

প্র: ভারতে ক্রিকেট প্রতিভা এখন এত বেশি দেখা যাচ্ছে যে, অনেকে এমন প্রস্তাবও দিচ্ছেন, আন্তর্জাতিক স্তরে দু’টো ভারতীয় দল খেলিয়ে দেওয়া যায়। আপনি নিত্য নতুন এ সব প্রতিভা দেখে কতটা উত্তেজিত?

শাস্ত্রী: আমি উত্তেজিত অবশ্যই। সব সময় আমি ইতিবাচক একটা মানুষ থাকার চেষ্টা করেছি। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে সব সময়ই উত্তেজিত, আবেগপ্রবণ থেকেছি। এবং, কোনও কিছুই বদলায়নি।

প্র: কোনও কিছু বদলায়নি বলতে? কোন সময় থেকে?

শাস্ত্রী: আমি মনোভাবের কথা বলছি। যেরকম ইতিবাচক আমি ছিলাম, সেরকমই আছি। আর সব চেয়ে ভাল ব্যাপার হচ্ছে, এই টিমটার সঙ্গে আমি আগে ছিলাম। তাই আমি জানি এই ছেলেদের থেকে কী প্রত্যাশা
করা যায়।

প্র: ভারত যখন শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করছে, তখন অনেকে বলছিলেন, ওদের টিমটা সর্বকালের সব চেয়ে দুর্বল দল। সেই শ্রীলঙ্কাই হারিয়ে দিল পাকিস্তানকে। আর আবু ধাবিতে হারাল। যেখানে পাকিস্তান কখনও হারে না।

শাস্ত্রী: যত দূর মনে পড়ছে, আমি আপনার সঙ্গেই কথা বলেছিলাম আর বলেছিলাম, শ্রীলঙ্কা একটা শক্ত ঘাঁটি। ওদের দেশে গিয়ে ওদের দুমড়ে-মুচড়ে হারানোর কৃতিত্ব খুব বেশি দলের নেই। আমি এটাও বলেছিলাম যে, আমাদের ছেলেরা সেই ইতিহাসকে পাল্টানোর ক্ষমতা রাখে। আর ওরা যেভাবে পাকিস্তানকে হারাল, হ্যাট্‌স অফ! দেখবেন, আমরা প্রেস কনফারেন্সে বা প্রেজেন্টেশনে এসে একটা কথা খুব বলি যে, আমরা সমস্ত প্রতিপক্ষকে সম্মান করি। এই কারণেই বলি। কে কী মন্তব্য করল, তা দিয়ে আমাদের কিছু এসে-যায় না। আমরা প্রত্যেক প্রতিপক্ষকে সম্মান করে খেলি। শ্রীলঙ্কা দেখিয়ে তো দিল ওরা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে! ওদের জন্য ভেরি ভেরি স্পেশ্যাল পারফরম্যান্স। ক্রিকেট খুব মজার এক খেলা বুঝলেন তো? ২০১৪ সালে ভারতকে যে শিক্ষা দিয়েছিল, সেই লোকটাই আবু ধাবিতে পাকিস্তানকে চূর্ণ করল। রঙ্গনা হেরাথ। সে-ই আবার নায়ক। আমি ব্যক্তিগত ভাবে রঙ্গনাকে দেখে মুগ্ধ। রঙ্গনাকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই। অনবদ্য, অনবদ্য এক ক্রিকেটার! প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ৪০০ টেস্ট উইকেট নিল। দুর্দান্ত এক প্রাপ্তি।

প্র: শ্রীলঙ্কায় আপনি দায়িত্বে ফিরেই বললেন, এই টিমটা এমন সব কীর্তি গড়তে পারে যা কখনও কোনও ভারতীয় দল পারেনি। তখন কিন্তু আপনার কথা শুনে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কায় ৯-০ আর অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ হারানোর পরে কী বলবেন?

শাস্ত্রী: শ্রীলঙ্কায় আমি যখন এই কথাটা বলি, অনেকে এমন হাবভাব করছিল যে, ভয়ঙ্কর কী সব বলে ফেললাম। ওদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছিল, আমি বুঝি ফরাসি বলছি। এখন দ্যাখ তোরা।

প্র: বৃহত্তর ক্যানভাসে কোচ রবি শাস্ত্রীর সামনে লক্ষ্যটা কী?

শাস্ত্রী: ধারাবাহিকতা। নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারেও আমি এই লক্ষ্যটার পিছনে দৌড়েছি। কখনও আমি লক্ষ্যপূরণ করতে পেরেছি, কখনও পারিনি। কিন্তু চেষ্টাটা ছিল ব্যক্তিগত পর্যায়ে। যখন দল হিসেবে ধারাবাহিকতা অর্জন করা যায়, সেটার গুরুত্বই আলাদা। যে টিম ধারাবাহিক হতে পারবে, তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেরা আখ্যা পাবে। সেটাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।

প্র: আপনার নিজের যে ক্রিকেটার হিসেবে বিবর্তন— স্পিনার এবং নীচের দিককার ব্যাটসম্যান থেকে টেস্ট ওপেনারে উন্নীত হয়ে ১১টি সেঞ্চুরি, তার পর ওয়ান ডে ক্রিকেটে পঁচাশির অস্ট্রেলিয়ায় বেনসন অ্যান্ড হেজেস জয়ী টিমের চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স শিরোপা— এ সব কতটা সাহায্য করে কোচ রবি শাস্ত্রীকে?

শাস্ত্রী: দেখুন, নিজে রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যদি আপনি যুদ্ধটা লড়ে থাকেন, তাহলে তার কোনও বিকল্প নেই। নিজের ক্রিকেট জীবনের অভিজ্ঞতা খুবই সাহায্য করবে। নিজে যে অভিজ্ঞতাটা সঞ্চয় করেছ, সেটা জুনিয়রদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া যায়। আমার কাছে ক্রিকেট খেলাটা সব কিছুর উপরে। খেলোয়াড়রা আসবে, যাবে। খেলাটা এগিয়ে চলবে। তাই নিজের খেলোয়াড় জীবনের কিছু শিক্ষা, কোনও মূল্যবোধ যদি ভাগ করে নেওয়া যায়, তাহলে সেটা অবশ্যই করা উচিত।

যুগলবন্দি: অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে কোচ শাস্ত্রীর মধুর সম্পর্কের ছাপ দেখা যাচ্ছে মাঠেও। ফাইল চিত্র

প্র: আগামী এক বছরে ভারতীয় ক্রিকেটের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বিদেশে অনেক টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় দক্ষিণ আফ্রিকা রয়েছে। ইংল্যান্ডে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলতে হবে। এ সব নিয়ে কি চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে?

শাস্ত্রী: খুব বেশি দূরের ভাবনা আমরা ভাবি না। একটা একটা করে সিরিজ ধরেই এগনো দরকার। হ্যাঁ, মাথার ভিতরে হয়তো অবচেতন মনে সামনের এক বছরের বিভিন্ন সফরগুলো ঘোরাফেরা করতে পারে। আমরা সেগুলো নিয়ে মাঝেমধ্যে আলোচনা করব, প্রত্যেকের খেলা দেখব, কয়েকটা নোট নেব, কিছু কিছু নির্দেশও দিতে থাকব। আর বিদেশ সফর নিয়ে একটা কথা বলি— আমার কাছে অ্যাওয়ে ট্যুর বলে কিছু নেই। প্রত্যেকটা ম্যাচই হোম ম্যাচ। অথবা প্রত্যেকটা ম্যাচই অ্যাওয়ে ম্যাচ। আমরা এভাবেই ব্যাপারটা দেখছি। কারণ, আমি মুম্বইয়ে থাকি। গত দু’মাস ধরে আমি নিজের শহরটাকেই দেখিনি। এর মধ্যে একটা ম্যাচও তো আমরা মুম্বইয়ে খেলিনি। তো গত দু’মাস ধরে সব ম্যাচই আমার কাছে অ্যাওয়ে গেম ছিল। আসলে সবই নির্ভর করছে, আমি কীভাবে দেখব, সেই দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

প্র: এটা বেশ আকর্ষণীয় আর নতুন একটা ভাবনা। মানে আমি মুম্বইয়ের লোক, আমার কাছে দিল্লিও যা, ডারবান-ও তাই?

শাস্ত্রী: তা নয়তো কী? সব কিছুই তো আলাদা। মাটি আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা, পরিবেশ আলাদা, তাপমাত্রা আলাদা। শুধু খেলাটা এক। খেলার নিয়মগুলো এক। আমি এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই হোম-অ্যাওয়েকে দেখেছি। সেই কারণেই সম্ভবত নিজে যখন খেলতাম, বিদেশে বেশি সাফল্য পেয়েছি। আমার তো মনে হতো লন্ডন আমার হোম। ওখানে আমি দু’টো টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছি। ব্রিজটাউন, বার্বেডোজকে আমার ঘরের মাঠ মনে হতো কারণ আমি ওখানে টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছি। সিডনি আমার হোম কারণ ওখানে আমি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছি।

প্র: তার মানে এই টিমের দর্শনটা কি শুধু ম্যাচকে ম্যাচ হিসেবে দেখা? ঘরে খেলছি না বাইরে, দেখব না?

শাস্ত্রী: একদম তা-ই। সেটাই আমাদের ভাবনা। আ গেম ইজ আ গেম। কোথায় ম্যাচটা হচ্ছে, সেটা কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তোমার কর্ম সংস্কৃতি এক থাকবে, মনোভাব এক থাকবে। যেখানেই খেলতে যাও না কেন, সফল হতে গেলে সেই স্কিলগুলোই লাগবে, যা অন্যান্য সব জায়গাতেই লাগে।

প্র: তিরিশ বছরের উপর আপনি ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান এই ভারতীয় দলটিকে দেখে কী মনে হয়, কোথায় পৌঁছতে পারে এই দল?

শাস্ত্রী: ওদের মধ্যে স্কিল আছে, আবেগ আছে। যদি সমস্ত এনার্জি সঠিক চ্যানেলে ধাবিত হয়, কোনও উচ্চতাই এই টিমের জন্য অসম্ভব থাকবে না।

প্র: কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও পর্যন্ত সেরা প্রাপ্তি কী?

শাস্ত্রী: আমার এই দ্বিতীয় ইনিংসের বয়স তো সবে দু’মাস হল। এখনও অনেক রাস্তা যাওয়া বাকি। আরও সময় নিয়ে না হয় এ সব বিশ্লেষণে ঢোকা যাবে।

প্র: দু’মাস হয়ে যাওয়ার পরে তাহলে কোচ রবি শাস্ত্রীকে নিয়ে কী বলা যেতে পারে? তিনি ব্যাটিং নিয়ে বেশি খুশি? বোলিংয়ে দারুণ খুশি। ফিটনেস নিয়ে...

শাস্ত্রী (থামিয়ে দিয়ে): এত কিছু নয়... খুব সিম্পল— রবি শাস্ত্রী টিম ইন্ডিয়া নিয়ে খুশি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE