Advertisement
০৩ মে ২০২৪
সিঙ্গলস প্লেয়ার নিয়েও ক্ষোভ আনন্দের

এক জনের হাতে উইনার নেই, অন্য জন আটকে বেসলাইনে

পরের দিন চেন্নাইয়ে আদি বাড়িতে হপ্তাখানেক কাটানোর জন্য রওনা হওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। দিল্লিতে টিম হোটেলের ঘরে টিভিতে সেই সময় জগমোহন ডালমিয়ার মারা যাওয়ার খবর শোনেন ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন আনন্দ অমৃতরাজ। সে দিনই তাঁর টিমের ওয়ার্ল্ড গ্রুপে উঠতে না পারা, দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কয়েক ঘণ্টা আগে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হোটেলের লবিতে বসে।

সোমদেবের ক্লাস নিচ্ছেন আনন্দ।

সোমদেবের ক্লাস নিচ্ছেন আনন্দ।

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

পরের দিন চেন্নাইয়ে আদি বাড়িতে হপ্তাখানেক কাটানোর জন্য রওনা হওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। দিল্লিতে টিম হোটেলের ঘরে টিভিতে সেই সময় জগমোহন ডালমিয়ার মারা যাওয়ার খবর শোনেন ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন আনন্দ অমৃতরাজ। সে দিনই তাঁর টিমের ওয়ার্ল্ড গ্রুপে উঠতে না পারা, দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কয়েক ঘণ্টা আগে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হোটেলের লবিতে বসে। পরের দিন চেন্নাইয়ে ফোনে ধরলে জানালেন ডালমিয়াকে চিনতেন। অবাক হয়েছিলেন, ভারতীয় টেনিস নিয়েও তাঁর আগ্রহ দেখে!
প্রশ্ন: এ দেশের শুধু ক্রিকেটের নয়, সব খেলার সর্বকালের অন্যতম সেরা কর্মকর্তা জগমোহন ডালমিয়া রবিবার রাতের দিকে মারা গিয়েছেন। আপনার দল ডেভিস কাপের ওয়ার্ল্ড গ্রুপে উঠতে না পারার কয়েক ঘণ্টা পরে। ওঁনার সঙ্গে পরিচয় ছিল আপনার?
আনন্দ: রবিবার দিল্লির হোটেলেই তো টিভিতে খবরটা শুনি। রাতের দিকে। উনি তো বোধহয় সে দিন রাতের দিকেই মারা যান। ওঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল বলাটা ভুল হবে। তবে যত দূর মনে পড়ছে, দু’বার বোধহয় দেখা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে। সামান্য কথাবার্তা হয়েছিল। তার মধ্যেই ওঁর সেই সময়ের ভারতীয় টেনিসের খবরাখবর রাখা, আগ্রহ দেখে অবাক হয়েছিলাম।
প্র: কোন সময়ের কথা বলছেন?
আনন্দ: উনিশশো সাতাশি। আমরা যে বার ডেভিস কাপ ফাইনাল খেলি। মিস্টার ডালমিয়ার সঙ্গে অবশ্য ফাইনালে নয়। ফাইনালটা তো সুই়ডেনে হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে তার আগে আর্জেন্তিনা আর ইজরায়েল— দু’টো টাই খেলতে গিয়ে দিল্লিতে দেখা হয়েছিল। এত বছর পরে ঠিক মনে নেই, উনি ওই দু’টোর কোনও একটা ম্যাচে এক দিন আমাদের খেলা দেখতে এসেছিলেন। তবে এটা বেশ মনে আছে, ওই বছরই ভারতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয়েছিল। যার কাজে উনি দিল্লিতে এসেছিলেন। আর দু’বারই সেই সময় ওখানে আমাদের ডেভিস কাপ ম্যাচ ছিল। প্রথম বার সম্ভবত আমাদের হোটেলেই উঠেছিলেন। কিংবা সেখানে কোনও মিটিং ছিল ওঁর। পরের বারের মাসটা মনে আছে। জুলাই। আমাদের কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল। বিজয় আর আমাকে বলেছিলেন, ডেভিস কাপ ফাইনাল তো ডিসেম্বরে হয়। আর এ বছর তার আগের মাসেই বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল। খুব ভাল হবে যদি পরপর দু’মাসে ভারত ক্রিকেট আর টেনিসে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়! আপনাদের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল।

প্র: দু’বছর আগে আপনি ভারতীয় টেনিস দলের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হওয়ার পর কোনও শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছিলেন না কি ওঁর কাছ থেকে?

আনন্দ: হ্যাঁ, উনি কার কাছ থেকে নাকি আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে আমাকে টেক্সট পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। শুনেছি, প্রত্যেক খেলার জাতীয় দলের নতুন ক্যাপ্টেন-কোচকে উনি নাকি শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাতেন।

প্র: আপনার চোখে ডেভিস কাপে ভারত শনিবারই হেরে গিয়েছিল। ডাবলসে লিয়েন্ডার-বোপান্নার হারে। কিন্তু আপনার দলের সিঙ্গলসেই বা কী এমন ভাল পারফরম্যান্স?

আনন্দ: তার জন্য টিমে এমন দু’জন সিঙ্গলস প্লেয়ার থাকা দরকার, যাদের এক জন প্রথম পঞ্চাশে আর অন্য জন প্রথম একশোর ভেতর থাকবে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে।

প্র: কিন্তু ভারতীয় দলের সবার তো এক কথা— ডেভিসে র‌্যাঙ্কিং তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশের হয়ে খেলার চাপ ঠিক মতো নেওয়াটাই আসল।

আনন্দ: প্লেয়ারের চাপ কম থাকবে তো সে যদি ভাল খেলে তবেই! দেশের হয়ে খেলুক বা পেশাদার ট্যুরে নিজের জন্য— তার খেলাটা তো ভাল হতে হবে। আমার এক জন সিঙ্গলস প্লেয়ারের (পড়তে হবে সোমদেব) হাতে কোনও উইনিং শট নেই। কাউন্টার পাঞ্চার। র‌্যালি করে চলে। বিপক্ষ কখন নেটে বা বাইরে মারবে সেই আশায়। আর এক জন সিঙ্গলস প্লেয়ার (পড়ুন য়ুকি) কেবল বেসলাইন থেকে খেলে। অ্যাপ্রোচ শট প্রায় নেই।

প্র: তা হলে সোমদেব বিশ্বের চল্লিশ নম্বরকে কী ভাবে হারালেন? আর য়ুকি সম্পর্কে আপনি সাংবাদিক সম্মেলনে এত উচ্ছ্বসিত হলেন কেন?

আনন্দ: সোমদেব সে দিন ওর কেরিয়ারের সম্ভবত সেরা সার্ভিস করেছিল। যে কোনও বিশ্বমানের প্লেয়ারের মতো। কেউ ভাবতে পারেনি। আর য়ুকি দু’মাস আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচে, বিশেষ করে টাই জেতানো শেষ সিঙ্গলসে সত্যিই বিশ্বের প্রথম পঞ্চাশের প্লেয়ারের মতো অলরাউন্ড টেনিস খেলেছিল। যেটা ভাল, সেটাকে তো ভাল বলতেই হবে।

প্র: ওয়ার্ল্ড গ্রুপে ওঠার প্লে-অফে টানা চার বার ভারত হারল। কী ভাবে চাকাটা ঘোরানো সম্ভব?

আনন্দ: চারটে সিঙ্গলসের অন্তত দু’টো জিততেই হবে। ডাবলসে আমাদের দলের অভিজ্ঞতা এমনিতেই বেশি। কিন্তু মুশকিল হল সেটা একটাই ম্যাচ। অথচ সিঙ্গলস ম্যাচ চারটে। টেনিসে একটা কথা আছে— হাতে একটা উইনিং শট থাকা মানে সে ভাল প্লেয়ার। হাতে দু’টো উইনিং শট থাকা মানে সে দারুণ প্লেয়ার। হাতে তিনটে উইনিং শট থাকা মানে সে গ্রেট প্লেয়ার। আমার তিনটে নয়, দু’টো উইনিং শট থাকা প্লেয়ার টিমে থাকলেই চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE