Advertisement
১১ মে ২০২৪

অভাবিত ক্রিকেটীয় ন্যায়বিচারে হেড কোচের সিংহাসনে কুম্বলে

তর্কাতীত ভাবে ভারতের সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনার হয়েও বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে বাদ পড়েছেন। অধিনায়কত্বের এত ব্যুৎপত্তি নিয়েও গোধূলি বেলায় সেটা হাজির হওয়ায় পদে এক বছর পূর্ণ করতে পারেননি।

গৌতম ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৯:৪১
Share: Save:

তর্কাতীত ভাবে ভারতের সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনার হয়েও বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে বাদ পড়েছেন।

অধিনায়কত্বের এত ব্যুৎপত্তি নিয়েও গোধূলি বেলায় সেটা হাজির হওয়ায় পদে এক বছর পূর্ণ করতে পারেননি।

ক্রিকেটীয় ন্যায়বিচার তবু যেন অনিল কুম্বলের জন্য অদ্ভুত অপেক্ষায় ছিল। মাত্র দিন পনেরোর মহানাটকীয় পট পরিবর্তন কুম্বলেকে বসিয়ে দিল ভারতীয় হেড কোচের সিংহাসনে! খাতায়-কলমে এক বছরের। আসলে তিন বছরের। কোনও অবিশ্বাস্য দুর্যোগ না ঘটলে ২০১৯-এর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ পর্যন্ত।

অথচ বিরাট কোহালির ভারতীয় দল নিয়ে ১১ জুলাই যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার কথা তাতে এক রকম জানাই ছিল কোচ কে হবেন।

কে আবার— রবি শাস্ত্রী!

রবি একটু ইতস্তত করছিলেন হেড কোচের চাকরির জন্য আবেদন করবেন কি না? ঘনিষ্ঠ শিবিরে বলেছিলেন, ‘‘শিওর যদি পাই একমাত্র তা হলেই আবেদন করব। নইলে লোক হাসাতে চাই না।’’

তাঁর অভিমানী বক্তব্য ছিল, টিমটা যখন ২০১৪-র ইংল্যান্ডে বিপর্যয়ে গড়াচ্ছিল, তখন বোর্ডের অনুরোধে আমি কমেন্ট্রি ছেড়ে হাল ধরেছিলাম। এই দু’বছরে টিম এত ভাল খেলার পরেও আমাকে ট্রায়াল দিতে হবে কেন? এ রকম সময়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে শাস্ত্রী ইঙ্গিত পেতে শুরু করেন ফের তাঁকেই বাছা হবে। তার পর সিদ্ধান্ত নেন আবেদন করবেন। কারণ, মনোনীত হওয়াটা শুধু নিয়ম রক্ষার।

ধর্মশালায় এ দিন কোচ নির্বাচনের সাংবাদিক সম্মেলনের শেষে প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর বলেই ফেললেন, শাস্ত্রীর পারফরম্যান্সে আমরা খুব খুশি। এর আগে শিলংয়ে আনন্দবাজারের সাক্ষাৎকারেও একই কথা বলেছিলেন। প্রশ্ন হল, যে কোচের উপর বোর্ড খুশি, তাঁকে সরাবে কেন?

এখানেই কুম্বলে কাহিনীর আকস্মিকত্ব যে, বোর্ডের ফেভারিট না হয়ে, কোনও রকম হিসেবের মধ্যে না থেকেও তিনি আচমকা বাজি জিতে বেরিয়ে গেলেন। ভারতীয় ক্রিকেটে কুম্বলেকে কিছু দিন আগেও ধরা হয়েছে শ্রীনি শিবিরের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে। ডালমিয়ার নেতৃত্বে নতুন জমানার বোর্ড ক্ষমতায় এসে দ্রুত একটা পরিবর্তন করে। টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে কুম্বলেকে সরিয়ে দেয়।

ডালমিয়া না-থাকলেও বোর্ডে থেকে গেছে একই জমানা। তাদেরই আমলে কি না কুম্বলের এই অকল্পনীয় প্রত্যাবর্তন!

বিশ্বকাপ ফাইনালে যে অধিনায়ক তাঁকে খেলাতে পারেননি, শোনা যাচ্ছে তিনিই নাকি কুম্বলেকে ফিরিয়ে আনলেন ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোতে। তিন সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি এত জোরালো ভাবে কুম্বলের নাম সুপারিশ না-করলে তিনি কিছুতেই হেড কোচ হতেন না। ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির প্রতি বোর্ডের কী মনোভাব, তা প্রমাণ হয়ে যায় কোচের জন্য প্রাথমিক বাছা একুশ জনের তালিকা থেকে।

চূড়ান্ত বিস্ময়কর ভাবে সেই একুশ জনে কুম্বলেকে রাখা হয়নি। কী ভাবে সেই তালিকা আবার বদলাল। কী ভাবে লন্ডনের আইসিসি বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া কুম্বলে হঠাৎ ঠিক করলেন তিনি আবেদন করবেন, সে সব নিয়ে চূড়ান্ত তথ্য এক দিন নিশ্চয়ই প্রকাশ পাবে। এ’টুকু বলা যেতে পারে তাঁর মতো বড় নাম চাকরিতে আবেদন করার পরেও নানা অনিশ্চয়তা ছিলই।

আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৯৫৬ উইকেটের অধিকারী কুম্বলে প্রার্থী হিসেবে সব সময়েই হেভিওয়েট। অসামান্য প্রেজেন্টেশনও করেছেন। কিন্তু তাঁরও আগে কমিটির প্রভাবশালী সদস্যরা তুলে ধরেন কিছু যুক্তি। বলা হয়, বিদেশে ভারত বেশির ভাগ সময় জিতছে না। বিদেশে রেকর্ডের উন্নতি করতে কুম্বলেই যোগ্যতম। দুই, কমিটির মনে হয়েছে, ভারতের প্রধান অস্ত্র হলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অথচ তাঁকে দেখার জন্য কোনও স্পিন বোলিং কোচ নেই। কুম্বলে হতে পারেন অশ্বিনের মেন্টর। বিদেশের উইকেটের জন্য তাঁকে আরও ভাল করে তৈরি করাবেন। অশ্বিন-কুম্বলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাও খুব। অশ্বিন বরাবর বলেছেন, কুম্বলে আমার ইনস্পিরেশন। আর কুম্বলে এ দিন আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘অশ্বিনকে দেখে আমি বরাবরই এক্সাইটেড হই। এই গোটা টিমটাই একটা দারুণ সম্ভাবনা।’’

কমিটি চায় কুম্বলের সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে ব্যাটিং কোচ হ’ন রবি শাস্ত্রী। তাইল্যান্ডে থাকা রবির সঙ্গে কথা বলা গেল না। তবে অবনমনের এমন প্রস্তাবে তিনি রাজি হলে বিস্ময়কর হবে। রবি রাজি না-হলেও ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের হয়তো চাকরি যাচ্ছে। শাস্ত্রীর পছন্দের বোলিং কোচ ভরত অরুণও চাকরি টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না সন্দেহ। কুম্বলে অবশ্যই প্রথম চাইবেন জাহির খানকে।

সৌরভ-সচিনরা বার বারই বলেন এমন কারওর কথা আমাদের ভাবতে হবে যে এই টিমকে তিন বছর পর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জেতানোর ক্ষমতা রাখে। এমন কেউ— যে শুধু কোচ নয়, দিশারিও।

শাস্ত্রী-কোহালি কম্বিনেশন ভারতীয় ক্রিকেটে ব্রিয়ারলি-বোথামের মতোই বিখ্যাত। কুম্বলে-কোহালি এই কে স্কোয়ারের কম্বিনেশন কী দাঁড়ায়, তার দিকে এখন ভারতীয় ক্রিকেট মহল কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে থাকবে।

সমান্তরাল কৌতূহলের বিষয় হল— কোচ নির্বাচনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কী করে এমন অস্পৃশ্য হয়ে গেলেন। খাতায়-কলমে ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টিতে তিনিই ভারত অধিনায়ক। অথচ কোহালিকে এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে কোচ চূড়ান্ত করা হল। এটা কি ধোনিকে সঙ্কেত দেওয়া যে, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সময় তোমার প্রাক্তন হয়ে যাওয়াই উচিত।

ভারতীয় মিডিয়া জগতে ফিসফাস, সৌরভ নতুন কিংগমেকার হিসেবে উদয় হলেন। তিনি নিজে এটা উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘কী বলছেন? এ সব ভুল করেও লিখবেন না।’’

অনেকেই বলছেন— অধিনায়ক হিসেবে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে গুছিয়ে দিয়েছিলেন। ধোনি-পরবর্তী সময়কেও যেন আগাম গুছিয়ে দিলেন।

ও আর একটা কথা! কুম্বলেকে যিনি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলাতে পারেননি, পোয়েটিক জাস্টিসটা এল তাঁর হাত ধরেই।

সৌরভ অবধারিত ভাবেই বলবেন, ‘‘আপনারা যে কী সব লেখেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anil Kumble Team India head coach
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE