Advertisement
E-Paper

শাপমুক্তি! পর পর দু’বার ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন সাবালেঙ্কা, দেড় ঘণ্টার লড়াইয়ে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দিলেন আনিসিমোভাকে

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফরাসি ওপেনের ফাইনালে হারতে হয়েছিল এরিনা সাবালেঙ্কাকে। অবশেষে সেই ইউএস ওপেনেই শাপমুক্তি হল তাঁর। কেরিয়ারের চতুর্থ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন বেলারুশের তারকা।

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৩:২২
sports

ইউএস ওপেন জিতে ট্রফিতে চুমু এরিনা সাবালেঙ্কার। ছবি: রয়টার্স।

২৩,৭৬৫ জনকে হারিয়ে ইউএস ওপেন জিতলেন এরিনা সাবালেঙ্কা! হ্যাঁ, বিশ্বের এক নম্বর মহিলা খেলোয়াড় শুধু আমান্ডা আনিসিমোভাকে হারালেন না, তাঁকে হারাতে হল আরও ২৩,৭৬৪ জনকে। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের ২৩,৭৭১ দর্শকের মধ্যে সাবালেঙ্কার দলের সাত জন বাদে বাকি কেউ চাইছিলেন না তিনি জিতুন। বিশ্বের আট নম্বর আনিসিমোভা আমেরিকার মেয়ে। ঘরের সমর্থন যে তিনি পাবেন তাতে কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু তাঁর প্রতিটি পয়েন্টে যা চিৎকার হল তা ছাপিয়ে গেল আগের দিনের জোকোভিচ-আলকারাজ় ম্যাচকেও। সেই চিৎকার থামিয়ে দিলেন সাবালেঙ্কা। দেড় ঘণ্টার লড়াইয়ে স্ট্রেট সেটে (৬-৩, ৭-৬) আনিসিমোভাকে উড়িয়ে দিলেন তিনি।

দু’মাস আগে আরও একটি ফাইনাল খেলেছিলেন আনিসিমোভা। উইম্বলডনের সেই ফাইনালে ইগা শিয়নটেকের কাছে ডবল ব্যাগেলে (০-৬, ০-৬) উড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই দুঃস্বপ্ন যে তিনি কাটিয়েছেন তা বোঝা গিয়েছিল তিন দিন আগেই। ইউএস ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে সেই শিয়নটেককেই হারান তিনি। ফাইনালে ওঠার পথে হারান আর এক প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন নাওমি ওসাকাকে। সেরিনা উইলিয়ামস, কোকো গফের পর ইউএস জেতার স্বপ্ন দেখছিলেন আমেরিকার আরও এক মেয়ে। সেই স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন সাবালেঙ্কা।

চলতি বছর এর আগে আরও দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছিলেন সাবালেঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফরাসি ওপেনের ফাইনালে হারতে হয়েছিল তাঁকে। উইম্বলডনের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম অবশ্য খালি হাতে ফেরাল না তাঁকে। ওপেন এরা-তে সেরিনার পর সাবালেঙ্কাই দ্বিতীয় মহিলা যিনি পর পর দু’বার এই ট্রফি জিতলেন।

tennis

ইউএস ওপেন ট্রফি হাতে এরিনা সাবালেঙ্কা। ছবি: রয়টার্স।

সাবালেঙ্কার লড়াই যে সহজ হবে না, তা বোঝা গিয়েছিল প্রথম গেমেই। তিন বার তাঁর সার্ভিস ভাঙার সুযোগ পেয়েছিলেন আনিসিমোভা। কিন্তু সাবালেঙ্কা শেষ পর্যন্ত সার্ভিস ধরে রাখেন। পরের গেমেই আনিসিমোভার সার্ভিস ভাঙেন তিনি। তৃতীয় গেমে ফিরে আসেন আনিসিমোভা। সাবালেঙ্কার সার্ভিস ভাঙেন তিনি। প্রথম সেটে সার্ভিস ধরে রাখতে সমস্যায় পড়েন দুই খেলোয়াড়ই। আরও এক বার করে দু’জনেই সার্ভিস খোয়ান।

এখনকার টেনিস সার্কিটে সাবালেঙ্কার শক্তিশালী ফোরহ্যান্ডের মোকাবিলা করা কঠিন। কিন্তু আনিসিমোভাকে দেখে মনে হল না সমস্যা হচ্ছে। এর আগে মুখোমুখি সাক্ষাতে ন’বারের মধ্যে ছ’বার সাবালেঙ্কাকে হারিয়েছেন তিনি। তার কারণও বোঝা যাচ্ছিল। সাবালেঙ্কার ফোরহ্যান্ডের পাল্টা আনিসিমোভা ব্য়াকহ্যান্ড কাজে লাগাতে শুরু করেন। সেই ব্যাকহ্যান্ডের জোর সামলাতে পারছিলেন না সাবালেঙ্কাও। ঠিক তখনই বুদ্ধি কাজে লাগালেন শীর্ষবাছাই। তিনি শুধু র‌্যালি চালিয়ে গেলেন। আনিসিমোভা উইনার মারতে গিয়ে বার বার আনফোর্সড এরর করলেন। শটের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলেন না তিনি। সেটাই কাজে লাগালেন সাবালেঙ্কা। অষ্টম গেমে সার্ভিস করতে গিয়ে ডবল ফল্ট করলেন আনিসিমোভা। সার্ভিস খোয়ালেন তিনি। সেই সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন সাবালেঙ্কা। পরের গেম জিতে প্রথম সেট জিতে গেলেন তিনি।

সাবালেঙ্কার মতো মেজাজি খেলোয়াড় টেনিসে খুব কম রয়েছে। প্রথম সেট জেতা মানেই যে তিনি ম্যাচ জিতবেন তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু ইউএস ওপেনে ছবিটা আলাদা। এই কোর্টে খেলতে ভালবাসেন তিনি। এর আগে ইউএস ওপেনে ২৯টি ম্যাচে প্রথম সেট জিতেছেন সাবালেঙ্কা। তার মধ্যে ২৭টি ম্যাচ জিতেছেন তিনি। সেটা আরও এক বার দেখা গেল। চাপের মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রাখলেন সাবালেঙ্কা। তিনি চেষ্টা করলেন, আনিসিমোভার যাতে ব্যাকহ্যান্ড বেশি মারতে না পারেন। সেই কাজে অনেকটা সফল তিনি।

আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের ছাদ ঢাকা থাকা ছিল। ছাদের নীচে লাগানো আলোর মধ্যে সার্ভিস করতে সমস্যা হচ্ছিল আনিসিমোভার। প্রথম সেটের পর চেয়ার আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। চেয়ার আম্পায়ার জানিয়ে দেন, এই পরিস্থিতিতেই খেলতে হবে। আলোর কারণেই হয়তো ম্যাচে সাত বার ডবল ফল্ট করলেন আনিসিমোভা। তার খেসারত দিতে হল তাঁকে।

তবে যে ভাবে দর্শকেরা আনিসিমোভাকে সমর্থন করছিলেন, তাতে কিছুটা হলেও বিরক্ত হচ্ছিলেন সাবালেঙ্কা। ধারাভাষ্যকারেরাও বলছিলেন, এ রকম সমর্থন শেষ কবে দেখা গিয়েছে তাঁরা মনে করতে পারছেন না। ওই পরিবেশে সাবালেঙ্কার পক্ষে খেলা যে কঠিন, তা স্বীকার করছিলেন তাঁরা। কিন্তু সাবালেঙ্কা ভয় পাননি। উল্টে প্রতিটি পয়েন্টের পর হুঙ্কার দেওয়া শুরু করেন তিনি। দর্শকেরাও বিদ্রুপ থামাচ্ছিলেন না। এক বার তো চেয়ার আম্পায়ারকেও ঘোষণা করতে হয়, সাবালেঙ্কার প্রথম ও দ্বিতীয় সার্ভিসের মাঝে চিৎকার না করতে। দ্বিতীয় সেটের দু’বার করে প্রতিপক্ষের সার্ভিস ভাঙেন দুই খেলোয়াড়। সাবালেঙ্কা এক সময় ৫-৩ এগিয়ে ছিলেন। নিজের সার্ভিস ধরে রাখলেই জিতে যেতেন। সেই অবস্থায় তাঁর সার্ভিস ভাঙেন আনিসিমোভাকে। লড়াই ছাড়েননি তিনি। দ্বিতীয় সেট গড়ায় টাইব্রেকারে।

চলতি মরসুমে এর আগের ১৮টি টাইব্রেকার খেলে সবগুলি জিতেছেন সাবালেঙ্কা। ফলে টাইব্রেকারে তাঁর সামনে আনিসিমোভার দাঁড়ানো সহজ ছিল না। সেটাই দেখা গেল। চোখের পলকে ৫-১ এগিয়ে গেলেন সাবালেঙ্কা। সেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব ছিল না আনিসিমোভার। হার মানতে হল তাঁকে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোর্টে হাঁটু মুড়ে কেঁদে ফেলেন সাবালেঙ্কা। আনিসিমোভাও কাঁদলেন। চুপ করে চেয়ারে বসে। খেলা শেষে অবশ্য আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের ২৩,৭৭১ দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানালেন সাবালেঙ্কাকে। ম্যাচের পাশাপাশি দর্শকদের মনও জিতে নিলেন তিনি।

US Open 2025 Aryna Sabalenka Amanda Anisimova
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy