Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Assam Womens'Football team

জীবনযুদ্ধে জয়ীরাই ভরসা অসমের মহিলা ফুটবল দলের

এ বারের সিনিয়র জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসেছে পাসিঘাটে। ২৯টি রাজ্য আর রেলের মহিলা দলের খেলোয়াড়রা অংশ নিয়েছেন প্রতিযোগিতায়।

নজরে: (বাঁ দিক থেকে) লিরবন, রিংখাশ্রী, অঞ্জনা এবং মৃণালী।—নিজস্ব চিত্র।

নজরে: (বাঁ দিক থেকে) লিরবন, রিংখাশ্রী, অঞ্জনা এবং মৃণালী।—নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:৩৪
Share: Save:

ওঁদের কেউ ইংল্যান্ডের ফুলহ্যাম, টটেনহ্যামের মতো ক্লাবে খেলেন। চোস্ত ফেসবুক, টুইটার আর ইংরাজিতে। কেউ বা ‘কাজের মেয়ে’। কেউ বাপে খেদানো, কেউ খেত মজুর। কিন্তু পাসিঘাটের গোড়ালি ডোবা স্টেডিয়ামে, কাদা মেখে বলের লড়াইতে ওঁরা সবাই সমান। একই দলে খেলছেন ‘মালকিন’ আর ‘পরিচারিকা’! মাঠের জলে বল গড়াতে চায় না। কিন্তু বল না গড়ালে তো দল জিতবে না। আর দল না জিতলেই তড়িঘড়ি ফিরে যেতে হবে সেই বাসন মাজা, ফসল তোলার দিন হাজিরায়। আসলে মাঠের খেলার পিছনে রিংখাংশ্রী বড়ো, অঞ্জনা শইকিয়া, লিরবন টিসপিতের এঁদো জীবনে সমান্তরাল একটা ফুটবল ম্যাচ চলছে। যেখানে রাজ্যকে জেতানোর গর্বকে দশ গোল দেয় আরও ক’টা দিনে অন্যের টাকায় খাওয়া আর পাকা ঘরে, সাফ বিছানায় ঘুমিয়ে নেওয়ার লোভটা।

এ বারের সিনিয়র জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসেছে পাসিঘাটে। ২৯টি রাজ্য আর রেলের মহিলা দলের খেলোয়াড়রা অংশ নিয়েছেন প্রতিযোগিতায়। কিন্তু নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে পাসিঘাট স্টেডিয়ামে মাঠের যা অবস্থা তাতে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ দূরের কথা পাড়া ফুটবলও সম্ভব নয়। উঠছে প্রতিবাদ, অসন্তোষের আওয়াজ। মহিলা ফুটবল বলেই কি এমন মাঠে খেলতে বাধ্য করাটা এত সহজ হয়ে গেল?

কর্নাটকের ভারতীয় বংশদ্ভুত ইংল্যান্ডের দলে খেলা তন্বী হান্স টুইটারে জলে ডোবা মাঠের ছবি আপলোড করে লেখেন, “এটা আর যাই হোক, ফুটবল নয়। বানভাসি মাঠে বল গড়ায়নি। ফুটবল পুরোপুরি দৈহিক খেলা। এমন মাঠে খেললে যে কোনও সময় খেলোয়াড়রা জখম হবে।” সেই টুইট ভাইরাল হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে অরুণাচল ফুটবল সংস্থা ও এআইএফএফ। রাজ্য ফুটবল সংস্থার সচিব কিপা অজয় জানান, প্রকৃতির উপরে কারও হাত নেই। বাকি খেলাগুলি ইন্দিরা গাঁধী গোল্ডেন হাইস্কুল, কিয়িত সেকেন্ডারি স্কুল ও ডেয়িং এরিং ফুটবল মাঠে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- অনেক পিছিয়ে সোবার্স, সচিন, বিরাটরা, টেস্টে স্মিথের রেকর্ড যেন অশ্বমেধের ঘোড়া

আরও পড়ুন - গভীর অনিশ্চয়তায় দীপার কেরিয়ার, এই মুহূর্তে অলিম্পিক্স নিয়ে ভাবছেনই না কোচ

অবশ্য এত অভিযোগের মধ্যে যেতেই চান না অসম দলের ৩২ বছর বয়সি মিডফিল্ডার রিংখাশ্রী বড়ো। ৩২ বছরের রিংখাশ্রী যে বছর ম্যাট্রিক পাশ করে রাজ্য দলে সুযোগ পান সেই বছরই অবাধ্য মেয়েকে খেলে বেড়ানোর ‘অপরাধে’ বাড়ি থেকে তাড়ানো হয়। রিংখাশ্রী নানা কাজ করে পেট চালাচ্ছেন। তাঁর চিন্তা, ২৪ তারিখ ফাইনাল পর্যন্ত টিকে গেলে তত দিনের খাওয়া নিশ্চিন্ত। ২৫ তারিখ থেকে ফের নতুন কোনও কাজ খুঁজতে হবে। অসম দলে মাঝমাঠ সামলাচ্ছেন মৃণালী বরা। আর দলের গোলরক্ষার ভার তাঁরই বাড়ির ‘কাজের মেয়ে’ অঞ্জনার হাতে। ডিব্রুগড়ের মেয়ে অঞ্জনাদের বাড়ি, জমি ভেসে যায় বন্যায়। ততদিনে অঞ্জনা অনুর্ধ-১৭ ভারতীয় দলে গোলকিপার হিসেবে সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু খেলা রইল শিকেয়। বাবার ভার কমাতে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সিকেলশন ট্রায়ালে অনেক আগে আলাপ হয়েছিল যোরহাটের মৃণালীর সঙ্গে। সেই ভরসায় জোরহাটে যান অঞ্জনা। থাকার জায়গা মেলে। শর্ত হয়, অঞ্জনাকে বাড়ির কাজকর্ম করতে হবে, হাত লাগাতে হবে চাষের কাজেও। বাকি সময় গ্রামে ছেলেদের ক্লাবেই ফুটবল অনুশীলন করে মৃণালী ও অঞ্জনা।

জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করা অঞ্জনা অবশ্য তাঁকে স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনা আর দেশের হয়ে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মৃণালীর পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। দলের রক্ষণভাগের স্তম্ভ লিরবন ২০০৭ সাল থেকে অসম দলে খেলছেন। ২০০৭ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে কার্বি আংলংয়ের খেরনিতে চাষের জমিতে কাজ করেন তিনি। খেটে খাওয়া মেয়েগুলো অযথা দুঃখের সাতকাহন বাড়াতে চান না। আপাতত শুধু চান, দল পৌঁছাক ফাইনালে। আর তত দিন ‘খেলে খাওয়া’র গর্বে মাথা উঁচু করে থাকতে চান তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assam Womens'Football team Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE