আকর্ষণ: হাবাস, আলেসান্দ্রোরা পাল্টে দিয়েছেন দিশা। ফাইল চিত্র
ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের অভিমুখ হঠাৎ-ই স্পেন মুখী!
দেশের দু’টি প্রধান লিগের ক্যানভাস জুড়ে শুধুই স্পেনের কোচ আর ফুটবলারদের সাফল্যের ছবি।
গত বছর ভারতের তিনটি বড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনেই স্প্যানিশ কোচ এবং ফুটবলারদের হাত।
আইএসএল চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফরি-র কোচ কার্লেস কুদরত, সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন এফসিগোয়ার প্রশিক্ষক সের্জিও লোবেরা— দু’জনেই স্পেনীয় কোচ। আবার আই লিগে চেন্নাই সিটি এফসিকে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে প্রধান কৃতিত্ব চার স্প্যানিশ ফুটবলারের—পেদ্রো মানজ়ি, নেস্তর গার্দিলো, সান্দ্রো রদরিগেস, রবের্তো এসলাভা।
চিমা ওকোরি, ওকোলি ওডাফা, র্যান্টি মার্টিন্স, স্যামি ওমোলো, ইউসিফ ইয়াকুবুর দেশের ফুটবলারদের দাপাদাপির যুগ শেষ। নাইজিরিয়া, ঘানা, ক্যামেরুন, টোগোর দিক থেকে কার্যত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এ দেশের ক্লাব ফুটবল কর্তারা। বিশেষ করে, আইএসএলের ক্লাবগুলো। ক্রমশ ব্রাত্য হয়ে যাচ্ছে হোসে ব্যারেটোর দেশের ফুটবলাররাও।
শুধু ফুটবলারই নয়, তাঁদের গুরু তালিকাতেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর আইএসএলে দশ দলের মধ্যে পাঁচটি ক্লাবের কোচই ছিলেন স্পেনের। বেঙ্গালুরু, গোয়া, জামশেদপুর, দিল্লি এবং পুণে আস্থা রেখেছিল স্প্যনিশ কোচের উপর। নতুন মরসুমে সেই সংখ্যা বাড়ছে। কারণ এটিকেতে আন্তোনিও হাবাস ফিরে আসছেন। শোনা যাচ্ছে কেরল ব্লাস্টার্সে যোগ দিচ্ছেন আলবার্তো রোকা। আই লিগে গত বার থেকে ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে এসেছেন স্পেনের কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস। এ বার মোহনবাগানেও এসে যাচ্ছেন স্প্যানিশ কোচ কিবু। আইএসএল এবং আই লিগ মিলিয়ে অন্তত ২৭ জন স্পেনের ফুটবলার গত বছর খেলছেন বিভিন্ন ক্লাবে। কোনও দেশের এত ফুটবলার কখনও ভারতীয় ফুটবলে একসঙ্গে খেলেননি।
এবং মজার ব্যাপার হল ভারতীয় ফুটবলের এই স্পেন আবহে গা ভাসাতে শুরু করেছেন কলকাতা ফুটবলের কর্তারাও। আইএসএল দেখে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে গিয়েছে। লাল-হলুদের পথে এ বার মোহনবাগানও হাঁটছে। এটিকেও ফের আস্থা রাখছে স্প্যানিশ কোচের উপর। ফিরিয়ে এনেছে হাবাসকে। যাঁর হাত ধরেই উদ্বোধনী আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এটিকে।
ক্লাব কর্তারা প্রায় সবাই মানছেন, ভারতীয় ফুটবলে স্পেনের প্রভাব বাড়তে শুরু করে এটিকে এবং হাবাস জুটির সাফল্য থেকেই। দ্বিতীয়বার কলকাতা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল জোসে মলিনার হাত ধরে। আতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে তখন চুক্তি ছিল কলকাতার। ফলে ফুটবলার জোগান দিয়েছিল মাদ্রিদ। যে সুবিধা এখন পাচ্ছে জামশেদপুর। স্পেনের কোচ রাখার আরও একটা সুবিধা পাচ্ছে ক্লাবগুলো। তারা ক্লাবের জন্য মনোমত ফুটবলার বেছে আনছেন দেশ থেকে। স্পেনের তৃতীয় বা চতুর্থ ডিভিশনের খেলতেন মানজ়ি-পেদ্রোরা। তাঁরাই তো আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করে দিলেন চেন্নাইকে।
স্পেনের এই ঢেউ আছড়ে পড়াকে স্বাগত জানাচ্ছেন চুনী গোস্বামী। ‘‘আমাদের এখানকার ফুটবলপ্রেমীরা পাসিং ফুটবল দেখে বারবারই আনন্দ পান। স্পেনের কোচ ও ফুটবলাররা এসে সেটাই দেখাচ্ছে। দলগুলোও সাফল্য পাচ্ছে। সে জন্যই ওদের কদর বাড়ছে। এটা তো ভাল,’’ বলছিলেন কিংবদন্তী ফুটবলার চুনী। তাঁর মতে, ‘‘কলকাতার ক্লাবগুলোর দৃষ্টিভঙ্গী বদলাচ্ছে। স্পেনের কোচেরা যদি কিছু ভাল ফুটবলার নিয়ে আসেন, তা হলে আমাদের রাজ্যের ফুটবলও সমৃদ্ধ হবে।’’ চুনীর মতোই ভারতীয় ফুটবলে স্পেনের কোচ ও ফুটবলারদের এই আসাকে সমর্থন করেছেন ডেরিক পেরিরা। এফসি গোয়ার সহকারী কোচের দায়িত্বে আছেন ডেরেক। দেশের অন্যতম সফল কোচ ফোনে বলছিলেন, ‘‘স্পেনের কোচ ও ফুটবলারদের বড় গুণ ওরা খুব পেশাদার। ভারতীয় ফুটবলারদের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। তাদের নতুন খেলার স্টাইল শেখাতে পারে।’’
ডেরেকের সমসাময়িক কোচ সঞ্জয় সেন। তিনিও এটিকেতে কাজ করছেন সহকারী হিসাবে। তবে স্প্যানিশ স্রোত নিয়ে সতর্ক শোনাচ্ছে তাঁকে। সঞ্জয় বলছেন, ‘‘যে দলে স্পেনের কোচ আছেন, সেখানেই দেখবেন আফ্রিকার ফুটবলার নেই। ওঁরা নিজেদের দেশের ফুটবলারদের আনছেন এই দেশে খেলানোর জন্য। যত দিন সাফল্য থাকবে এটা চলবে। ইস্টবেঙ্গল আলেসান্দ্রোকে এনেছে বলে মোহনবাগানও পাল্টা স্প্যানিশ কোচ আনল। সাফল্য না পেলেই দেখবেন সব ভালবাসা উড়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy