Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কলকাতার সব আছে নেই শুধু সেই সাদা শার্ট

ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেই যে ভাবে গনগনে রাগে ফেটে পড়লেন জিকো, তা দেখার পর মনে হচ্ছিল, এ কোন জিকো? ইনিই কি সেই তেলে সান্তানার বিখ্যাত ব্রাজিল টিমের সদস্য! আর্তুর আর্তুনেস কোইম্ব্রা ওরফে জিকো তখন বলেই চলেছেন, ‘‘জানতাম এ রকম হবে। প্রতিবার কলকাতা ম্যাচেই সব সিদ্ধান্ত আমার বিরুদ্ধে যায়। ভাল ফুটবল দেখতে হলে ভাল রেফারি আনুন আগে।’’

স্ত্রী ডোনাকে নিয়ে সৌরভ খেলা দেখতে এসেছিলেন।

স্ত্রী ডোনাকে নিয়ে সৌরভ খেলা দেখতে এসেছিলেন।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৪
Share: Save:

আটলেটিকো দে কলকাতা-১ (দ্যুতি)

এফসি গোয়া-১ (জোফ্রে-পেনাল্টি)

ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেই যে ভাবে গনগনে রাগে ফেটে পড়লেন জিকো, তা দেখার পর মনে হচ্ছিল, এ কোন জিকো? ইনিই কি সেই তেলে সান্তানার বিখ্যাত ব্রাজিল টিমের সদস্য!

আর্তুর আর্তুনেস কোইম্ব্রা ওরফে জিকো তখন বলেই চলেছেন, ‘‘জানতাম এ রকম হবে। প্রতিবার কলকাতা ম্যাচেই সব সিদ্ধান্ত আমার বিরুদ্ধে যায়। ভাল ফুটবল দেখতে হলে ভাল রেফারি আনুন আগে।’’

তেষট্টি বছর বয়সে ভারতীয় জনতার জন্য ইদানীং পান মশলার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন ‘টুমরো নেভার ডাইজ’, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’-এর মতো বন্ড ছবির নায়ক পিয়ার্স ব্রসনন। জিকো-ও তাঁর বয়সি। এ দিন ম্যাচের পর জিকোর কথা শুনে তখন মনে হচ্ছিল রবীন্দ্র সরোবরে প্রথম বার পা দিয়ে ব্রসনানের মতো জিকোও বোধহয় ব্রাজিলীয় মোড থেকে পাক্কা ভারতীয় মোডে ঢুকে পড়েছেন।

আসলে জিকোর রাগ অন্য জায়গায়। হাবাস বিদায়ের পর এ বার ভেবেছিলেন কলকাতা-বিজয় বোধহয় হয়ে য়াবে। কিন্তু আইএসএলের তৃতীয় বছরেও যে আটলেটিকো দে কলকাতা তাঁর কাছে সেই নেপোলিয়নের ওয়াটারলুর মতো অভিশপ্ত থেকে গেল। যা তাঁকে আজও তিন পয়েন্ট এনে দিতে পারল না। তা সে যতই এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে বলের দখল গোয়ার ত্রিনদাদদের পায়ে থাকুক বা আক্রমণে ঝাঁঝ দেখা যাক না কেন!

নিট ফল, হাবাস জমানাতেও যা দেখা গিয়েছে, মলিনা জমানাতেও তা পুরোপুরি বহাল। ম্যাচের শুরুতেই সামিঘ দ্যুতি যখন গোল করে এগিয়ে দিলেন আটলেটিকোকে, তখন টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল দুই কোচের মুখ। হলুদ টি-শার্ট গায়ে আটলেটিকো কোচ জোসে মলিনার মুখে তখন হাইভোল্টেজ হাসি। জিকো তখন ঘুসি পাকিয়ে নিজের হাতেই মারছেন। আর পেনাল্টি থেকে সমতা ফিরিয়ে জোফ্রেরা যখন উল্লাসে ব্যস্ত, তখনও জিকোকে দেখা গেল গম্ভীর মুখে টিমকে গলা ফাটিয়ে নিজেদের অর্ধে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। মুখে আনন্দের রেশ মাত্র নেই।

শনিবার জিকোর কলকাতা ফেরত মিডিও জোফ্রে জানিয়েছিলেন, কলকাতা-গোয়া ম্যাচ এ বার আর রক্তাক্ত হবে না আগের মতো। কিন্তু রক্তাক্ত না হলেও ঘটনার ঘনঘটায় যে কমতি রইল না। দ্বিতীয়ার্ধে আট মিনিটের মধ্যে মার্চিং অর্ডার পেলেন দুই টিমের দু’জন। প্রথমে কলকাতার পিয়ারসন। মেক্সিকান রেফারি ফের্নান্দো রামিরেজ তাঁকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে বার করে দিলেন। কেন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। ট্যাকল করতে গিয়ে তিনি কতটা বিধি ভেঙেছিলেন তা বেশ বিতর্কিত। তার পরে গোয়ার ডিফেন্সিভ স্ক্রিন সঞ্জয় বালমুচুকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে বার করে দিলেন তিনি। এর পরেই বিতর্কিত পেনাল্টি দিলেন গোয়াকে। যা নিয়ে কলকাতা শিবির মুখে কিছু না বললেও ক্ষুব্ধ।

পিয়ারসনের মার্চিং অর্ডার নিয়ে কলকাতা কোচ মলিনা রেফারির বিরুদ্ধে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে পেনাল্টি নিয়ে জিকোর মতো মারকাটারি না হলেও তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি দেখতে পাইনি। এখনও টিভিতেও দেখিনি। তবে বোরহা বলেছে ওটা পেনাল্টি ছিল না।’’

জিকো অবশ্য তা সত্ত্বেও রেফারির বিরুদ্ধে গজরাচ্ছেন। তাঁদের কলকাতায় থেকে জিতে না ফেরার কারণ রেফারি নন। কারণটা লুকিয়ে কিংবদন্তি ব্রাজিলীয়র ট্যাকটিক্স, স্ট্র্যাটেজির ভুলের ভেতর। এক, তাঁর আহত ব্রাজিলীয় মার্কি লুসিওর অভাব রক্ষণে পূরণ করতে পারেননি। দুই, সঞ্জয় বালমুচুকে এ দিন ডিফেন্সিভ স্ক্রিন বানিয়ে দেওয়া। ফুটবলে এই জায়গাটা ভাইটাল। যেখানে রপ্ত হতে হয় দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস করার পর। কারণ আক্রমণ ভাঙার সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউশনটাও ভাল করতে হয় এই জায়গার খেলোয়াড়কে। সঞ্জয় গোটা ম্যাচে না রাখলেন সেকেন্ড বলের দখল, না বাড়ালেন বল। এই সেকেন্ড বল থেকেই কলকাতার এগিয়ে যাওয়া। তিন, বালমুচুদের থেকে বল না পেয়ে রবিন সিংহ আক্রমণে একা পড়ে গেলেন। তার মধ্যেই যতটুকু সুযোগ এসেছিল গোয়ার সামনে, ফিনিশিংয়ের অভাবে কাজে লাগাতে পারেনি জিকোর দল।


এটিকের পেনাল্টি গোল খাওয়া।

আবার এখানেই কৃতিত্ব দিতে হয় এটিকে কোচ মলিনাকে। শনিবার জিকো বলেছিলেন, কলকাতার আক্রমণকে ভোঁতা করতে তাঁকে বিশেষ কিছু করে দেখাতে হবে। মলিনা তাই জিকোকে পাল্টা দিতে এ দিন ফিরে গিয়েছিলেন হাবাস জমানার কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর সেই ৪-২-৩-১ ছকে। বোধহয় বুঝে গিয়েছিলেন হাইলাইন ডিফেন্স খেলিয়ে জিকো নিজের গোটা টিমকে ফেলে দেবেন কলকাতার অর্ধে। তবে সেই চাল ভেস্তে দিয়েও হোম ম্যাচে কলকাতা কোচ কেন এত রক্ষণাত্মক তা বোঝা গেল না। চার ব্যাকের আগে দুই পিভট বোরহা আর পিয়ারসনকে নামিয়ে ডিফেন্সকে মজবুত করার ছক নিয়েছিলেন বটে। কিন্তু দুই সাইড ব্যাককে সে ভাবে ওভারল্যাপে পাঠালেন না কেন তাও বোধগম্য নয়। আক্রমণে লারা-দ্যুতি-হিউম ত্রিভূজের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন অবিনাশকে। এটিকে-র এই দুই উইংকে কব্জা করতে না পেরে গোয়া ম্যাচের শুরু থেকে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। বরং হিউম এ দিন বিবর্ণ। অনেকটা বেশি বাঁ দিকে সরে গিয়ে গোয়ার দুই স্টপারকে অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে দিলেন।

ফলে এ দিন গোল করেও সেই গোল না ধরে রাখতে না পারার জন্য হতাশ কলকাতা শিবির।

ম্যাচ শেষে কলকাতার প্লে অফ ভাগ্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল মলিনাকে। স্প্যানিশ কোচ দার্শনিকের মতো বলে গেলেন, ‘‘এক সেকেন্ডের গোলেও তো হারতে পারি। এখনই কী ভাবে বলি! আপাতত স্রেফ পরের ম্যাচটা জেতা ছাড়া আর কিছু ভাবছি না।’’

কলকাতা কোচের এই মন্তব্যই বলে দেয় এটিকে কোচের নাম এ বার পাল্টে গিয়েছে। এখন আর চার ম্যাচে ছয় পয়েন্ট পেয়েও আগে থেকে প্লে অফের ম্যাজিক নম্বর বলে দেওয়ার সাদা শার্টটা নেই!

আটলেটিকো দে কলকাতা: দেবজিৎ, প্রীতম, সেরেনো, অর্ণব, প্রবীর, পিয়ারসন, বোরহা, অবিনাশ (বিক্রমজিৎ), লারা,দ্যুতি, হিউম (বেলেনকোসো)।

ছবি: উৎপল সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATK FC Goa ISL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE