Advertisement
E-Paper

বেশি গোল না পেলেও বার্সেলোনা মুগ্ধই করল

বুধবার রাতে খেলা শুরু হওয়ার পরে তাই কিছুটা আতঙ্কিতই হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, ম্যান ইউয়ের প্রধান লক্ষ্য ঘরের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে না হারা। তাই ওলে গানার সোলসার ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজালেও খেলা শুরু হওয়ার পরে তা হয়ে যাচ্ছিল ৪-৫-১।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৭
গোলের পর উচ্ছাস মেসি-সুয়ারেজের। ছবি রয়টার্স।

গোলের পর উচ্ছাস মেসি-সুয়ারেজের। ছবি রয়টার্স।

ম্যান ইউ ০ • বার্সেলোনা ১

অবিশ্বাস্য! বুধবার রাতে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ৪৭ পাসে বার্সেলোনার গোল আরও এক বার প্রমাণ করল তিকিতাকা শুধু সুন্দর নয়, ভয়ঙ্করও।

বিশ্বের কঠিনতম প্রতিযোগিতা এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। তার উপরে প্রতিপক্ষ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম শক্তিশালী ম্যান ইউয়ের মতো দল। যাদের খেলার ঘরানাই হচ্ছে প্রেসিং ফুটবল। অর্থাৎ, বিপক্ষের ফুটবলারেরা বল ধরলেই দু’-তিন জন মিলে ঘিরে ধরে ছন্দ নষ্ট করে দেওয়া। তার পরে নিজেদের মধ্যে একটা-দু’টো পাস খেলে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে বল ভাসিয়ে দেওয়া। আর দূর পাল্লার শটে গোল লক্ষ্য করে শট নেওয়া। পল পোগবা, রোমেলু লুকাকুরা ঠিক সে ভাবেই শুরু করেছিল। এই ধরনের রণনীতিতে সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে বার্সেলোনা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো পাসিং ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত দলগুলো।

বুধবার রাতে খেলা শুরু হওয়ার পরে তাই কিছুটা আতঙ্কিতই হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, ম্যান ইউয়ের প্রধান লক্ষ্য ঘরের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে না হারা। তাই ওলে গানার সোলসার ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজালেও খেলা শুরু হওয়ার পরে তা হয়ে যাচ্ছিল ৪-৫-১। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, পায়ের জঙ্গলে লিয়োনেল মেসিদের বন্দি করে রাখা। চেনা ব্রিটিশ ছক। ক্রিস স্মলিং এক বার তো মেরে নাক ফাটিয়েই দিল আর্জেন্টিনা অধিনায়কের। তবে শিল্পীদের আটকানোর জন্য কোনও ফর্মুলাই যথেষ্ট নয়। রক্তাক্ত হওয়ার পরেও মাঠ ছাড়েনি অদম্য মেসি।

ম্যাচ শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে মেসি যখন দেখল, তার জন্য চক্রব্যুহ তৈরি করছে স্মলিংয়েরা, সঙ্গে সঙ্গে নীচে নেমে গেল। ওর সঙ্গে উঠে এল ম্যান ইউয়েরও দুই ফুটবলার। টিভিতে দেখছিলাম, উদ্বিগ্ন সোলসার বারবার ওদের রক্ষণে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছিলেন। বুঝে গিয়েছিলেন, লুইস সুয়ারেস ও ফিলিপে কুটিনহোদের খেলার জায়গা করে দেওয়ার জন্য মেসি ইচ্ছে করেই নেমে এসেছে।

সোলসারের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, বারো মিনিটেই প্রমাণ হয়ে গেল। আক্রমণের সূচনা হয় বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে তার স্তেগানের পাস থেকে। শেষ হল মেসির অনবদ্য সেন্টার থেকে নেওয়া সুয়ারেসের হেড লুক শ-র কাঁধে লেগে গোলে ঢোকার পরে। সময় লাগল মাত্র ১৯৪ সেকেন্ড! ম্যাচটা শেষ হওয়ার বারবার হাইলাইটস দেখছি প্রত্যেকবারই মুগ্ধ হয়েছি।

লাইন্সম্যান যদিও অফসাইডের কারণে গোলটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। রেফারি ভিডিয়ো অ্যাসিট্যান্ট রেফারির সাহায্য নিয়ে গোলের নির্দেশ দেন। ম্যান ইউ ভক্তেরা রেফারির উপরে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। আমি মনে করি, নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেফারি। কোনও অবস্থাতেই অফসাইডে ছিল না সুয়ারেস। কারণ, মেসি বলটা ধরে পেনাল্টি বক্সের ভিতরে বাঁ দিকে কিছুটা সরে গিয়েছিল। ওকে আটকাতে ম্যান ইউয়ের ডিফেন্ডারেরাও নেমে এসেছিল। এ ক্ষেত্রে অফসাইডের তত্ত্ব কোনও অবস্থাতেই খাটে না। এই কারণেই মেসি শিল্পী। ও বলটা ধরেই দেখেছিল, সুয়ারেস অফসাইডে রয়েছে। তাই কিছুটা সময় নিল যাতে ম্যান ইউয়ের ডিফেন্ডারেরা নেমে আসতে পারে। মেসির ফাঁদেই পা দিল ওরা। তবে গোলটা সুয়ারেসকে দিলেই ভাল হত।

সুয়ারেসের গোলটা প্রমাণ করল সাফল্যের নেপথ্যে দলগত সংহতিই আসল। বার্সার এগারো জন ফুটবলারেরই অবদান রয়েছে এই গোলে। লুক শ-র কাঁধে লেগে বল জালে জড়ানোর আগে প্রত্যেকেই বল স্পর্শ করেছে। এই কারণেই শুরুতে অবিশ্বাস্য শব্দটা ব্যবহার করেছিলাম। যদিও বিপক্ষকে পাসের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে এ রকম গোল এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আরও দু’বার করেছে মেসিরা। ক্যাম্প ন্যু-তে পিএসভি আইন্দহোভেনের বিরুদ্ধে চতুর্থ গোলটা মনে পড়ছে? আর টটেনহ্যাম হটস্পারের বিরুদ্ধে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অ্যাওয়ে ম্যাচে সেই তিন নম্বর গোল?

বার্সার দলগত সংহতি সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। রক্ষণ থেকে আক্রমণ ভাগ, প্রত্যেকের মধ্যে দুর্দান্ত বোঝাপড়া। অনেক দিন পরে ভাল লাগল জেরার পিকে-কে। স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে অনেক দিন ধরেই সেরা ছন্দে পাওয়া যায়নি। প্রচুর সমালোচনাও হচ্ছিল। বুধবার রাতে ম্যান ইউয়ের বিরুদ্ধে পুরনো পিকে-কে দেখলাম। পুরো ম্যাচে একটাও ভুল করেনি। দুর্দান্ত ভাবে সামলেছে পোগবা, র‌্যাশফোর্ড, লুকাকুকে। দুই সাইডব্যাক জর্ডি আলবা ও নেলসন সেমেদোর সঙ্গে ওর বোঝাপড়া এতটাই ভাল যে, কখনও বার্সা রক্ষণে শূন্যস্থান তৈরি হয়নি। অসাধারণ ইভান রাকিতিচ, সের্খিয়ো বুস্কেৎস ও আর্তুরো ভিদাল।

এই ম্যাচে ম্যান ইউয়ের চেয়ে বার্সা সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিল। বুধবার রাতে ৬২ শতাংশ বল ছিল মেসিদের দখলে। শুধু তাই নয়। ওরা পাস খেলেছে ৮০৭টি। যার মধ্যে নির্ভুল পাস ছিল ৭৪০টি। ভাবা যায়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে একটা দল প্রায় হাজারের কাছাকাছি পাস খেলছে!

কুর্নিশ করতে হবে বার্সা ম্যানেজার আর্নেস্তো ভালভার্দেকেও। ম্যাচটা শুরু করেছিলেন ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। কিন্তু পরে ৪-৪-২ ছকে চলে যান। ভাল কোচদের বিশেষত্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী রণকৌশল বদলে ফেলার ক্ষমতা। আমার তো মনে হয়, ক্যাম্প ন্যু-তে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে মেসিরা আরও বেশি গোলে জিতবে। কারণ, অ্যাওয়ে ম্যাচে চাপে থাকবে পোগবাদের। তার উপরে ঘরের মাঠে হেরে ওরা ০-১ হেরে পিছিয়ে রয়েছে। অবশ্য চাপমুক্ত থাকলেও ম্যান ইউয়ের জেতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী নই।

এই বার্সাকে হারানো সহজ নয়!

Football UCL UEFA Champions League Barcelona Manchester United
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy