এক ফ্রেমে সেরারা। —নিজস্ব চিত্র।
টেবল টেনিসে মেয়েদের সোনার দিন ফিরল বাংলায়। কুড়ি বছর পর। বৃহস্পতিবার গুরুগ্রামে জাতীয় সিনিয়র টিটির ফাইনালে সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়-অনিন্দিতা চক্রবর্তীরা দাঁড়াতেই দিলেন না মহারাষ্ট্রকে। একতরফা খেলে ৩-০ ম্যাচে জিতলেন।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ফোনে ধরা হলে বাংলা দলের কোচ মিহির ঘোষ বললেন, ‘‘সেমিফাইনালে শক্তিশালী পিএসইবি হেরে যাওয়ার পর আমরা ধরে নিয়েছিলাম চ্যাম্পিয়ন হতে অসুবিধে হবে না। সুতীর্থার মতো দেশের এক নম্বর প্লেয়ার ছিল টিমে। আবার অনিন্দিতার মতো অভিজ্ঞ ছিল। ফলে টিমের ভারসাম্যটা ভাল হয়েছিল। তার সুফল পেলাম।’’
বাংলার টেবল টেনিস কর্তারা যখন সবাই এক হয়ে একটাই সংস্থা চালাতেন তখন জয়লক্ষ্মী কাপ বেশ কয়েক বার এসেছে বাংলায়। সেই স্বর্ণযুগে তো ১৯৯৪, ’৯৫, ’৯৭— চার বছরে তিন বার টিটিতে ভারতসেরা হয়েছিলেন বাংলার মেয়েরা। তিন বারই কোচ ছিলেন জয়ন্ত পুশিলাল। এবং তখনও টিমে ছিলেন অনিন্দিতা চক্রবর্তী। এই মুহূর্তে অনিন্দিতা আবার বাংলার নির্বাচন কমিটির অন্যতম সদস্যাও। শুধু টিটি-তে কেন, দেশের অন্য কোনও খেলায় সম্ভবত এমন নজির বিরল যে, একজন নির্বাচক চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্যও। দাপটে খেলছেন হাঁটুর বয়সিদের সঙ্গে। পৌলমী ঘটক, মৌমা দাসদের মতো বঙ্গ অলিম্পিয়ান টিটি তারকারাও যা করতে পারেননি। সে দিক দিয়ে অনন্য কৃতিত্ব দেখালেন বাংলার চল্লিশোর্ধ্ব টিটি প্লেয়ার অনিন্দিতা।
ফাইনালে বাংলার তিনটি ম্যাচে খেলেন সুতীর্থা, অনিন্দিতা এবং কীর্তিকা সিংহ রায়। কীর্তিকার ম্যাচ একমাত্র পাঁচ গেম পর্যন্ত গড়ায়। কোচ মিহিরবাবু জানাচ্ছেন, টিমের পিভট ছিলেন কাকিনাড়ার মেয়ে সুতীর্থা। আর সুতীর্থা ফোনে বললেন, ‘‘সিনিয়রে তো বরাবর পিএসইবি-র দাপট থাকত। এ বার ওরা সেমিফাইনালে মহারাষ্ট্রের কাছে হেরে যাওয়ায় একটা স্বস্তি ছিল আমাদের। আমি দু’নম্বর ম্যাচটা জিতে যাওয়ার পরেই ধরে নিয়েছিলাম চ্যাম্পিয়ন হতে চলেছি। দারুণ লাগছে। এত দিন পর বাংলা চ্যাম্পিয়ন।’’ উচ্ছ্বসিত শোনাচ্ছিল দেশের এক নম্বরের গলা। বয়স ভাঁড়ানোর দায়ে যিনি একটা সময় দু’বছর নির্বাসিত ছিলেন। নির্বাসন কাটিয়ে ফেরার পর এ রকম চমকপ্রদ সাফল্য পেলে তো উচ্ছ্বাস দেখানোই স্বাভাবিক।
মেয়েদের সোনার দিনে ছেলেদের অবশ্য ব্রোঞ্জ জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হল। এবং সেখানে বেরিয়ে পড়ল বাংলার টিটি কর্তাদের দৈন্যতার কঙ্কাল। কারণ বাংলা সেমিফাইনালে হারল দুই বঙ্গসন্তানের কাছে। বাংলার কর্তাদের উপর বিরক্ত হয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বহু খেলোয়াড়। এ বার জাতীয় টিটিতে হরিয়ানায় চলে যাওয়া দুই বঙ্গসন্তান সৌম্যজিৎ ঘোষ এবং সৌরভ সাহার কাছেই হারলেন অর্জুন ঘোষ-অনির্বাণ নন্দীরা। বাংলার ছেলেরা হারলেন ০-৩। যার পরে কোচ স্বীকার করলেন, ‘‘সৌম্যজিৎরা অভিজ্ঞতায় বেরিয়ে গেল। আমাদের টিমে জুনিয়রের সংখ্যা বেশি। সেটাই ফাইনালে না উঠতে পারার বড় একটা কারণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy