Advertisement
E-Paper

টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বাঙালি কন্যা, সানিয়াকে আদর্শ মানা আকাঙ্ক্ষার সামনে বাধা শুধু অর্থ

টেনিসে অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাঙালি কন্যা আকাঙ্ক্ষা ঘোষ। সানিয়া মির্জ়াকে নিজের আদর্শ মানা আকাঙ্ক্ষা এ বার দেশের জন্য সোনা জিততে চায়।

দেবার্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ১৭:৫০
tennis

জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে ট্রফি হাতে আকাঙ্ক্ষা ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

প্রিয় টেনিস তারকা কে? এক মুহূর্তের জন্যও না ভেবে দুটো নাম এল তার মুখে। ভারতীয়দের মধ্যে সানিয়া মির্জ়া। পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে নোভাক জোকোভিচ। সানিয়ার সঙ্গে তার মিলও রয়েছে। কিশোরী বয়স থেকেই ভারতের টেনিস সার্কিটে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সানিয়া। ১৫ বছরের আকাঙ্ক্ষা ঘোষও সেই দিকেই এগোচ্ছে। অনূর্ধ্ব-১৬ ডাবলসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাঙালি কন্যা। সানিয়ার দেখানো পথেই এগোতে চায় সে। একমাত্র লক্ষ্য দেশের জন্য সোনা জেতা। সেই পথ এখনও অনেক দূর। কিন্তু এই বয়সেই আকাঙ্ক্ষার গলায় শোনা গেল সেই প্রত্যয়।

বেশ কয়েক বছর টেনিসে জাতীয় স্তরে বাঙালিদের তেমন সাফল্য নেই। সেই জায়গা ফিরিয়ে এনেছে আকাঙ্ক্ষা। গত বছর প্রথম বাঙালি হিসাবে অনূর্ধ্ব-১৬ এশিয়ান জুনিয়র টেনিসের ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সে। সিঙ্গলসে ফাইনালে হারতে হয়েছিল। তার পরে এ বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে লাল সুরকির কোর্টে হওয়া প্রতিযোগিতায় মহারাষ্ট্রের পার্থসারথি অরুণ মুন্ডের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিল সে। বিপক্ষে ছিল শীর্ষ বাছাই হরিয়ানার অনিন্দিতা উপাধ্যায় ও পঞ্জাবের রঞ্জনা সংগ্রাম। ফাইনালে তিন সেটের লড়াইয়ে (৪-৬, ৭-৫, ১১-৯) জেতে আকাঙ্ক্ষারা। প্রথম সেট হারার পরেও হাল ছাড়েনি তারা। ছাড়বেই বা কেন! আনন্দবাজার অনলাইনকে আকাঙ্ক্ষা বলেছে, “চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই নেমেছিলাম। অন্য কিছু ভাবিনি।”

আকাঙ্ক্ষার টেনিস শুরু ৬ বছর বয়সে। প্রথমে ‘ক্যালকাটা জিমখানা ক্লাব’। সেখানে অনুশীলন করে রাজ্য স্তরে অনূর্ধ্ব-৮ ও অনূর্ধ্ব-১০ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তার পরে আকাঙ্ক্ষা অনুশীলন শুরু করে শিবিকা বর্মণের কাছে। শিবিকা এ রাজ্যের টেনিসে বড় নাম। সানিয়া মির্জ়ার সঙ্গে খেলেছেন। ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু চোট ভুগিয়েছে তাঁকে। ফলে মাত্র ২৬ বছর বয়সে টেনিস ছেড়ে কোচিং শুরু করেছেন। সেই শিবিকার অধীনে গত পাঁচ বছর ধরে আছে আকাঙ্ক্ষা। এই সময়ের মধ্যে দু’বার রাজ্য স্তরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে।

এশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৬ স্তরে আকাঙ্ক্ষার র‌্যাঙ্কিং ১২। ভারতে ১৫। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে মেয়ে প্রথম দশে ঢুকে পড়বেন বলে নিশ্চিত বাবা সুরজিৎ ঘোষ। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আকাঙ্ক্ষার অনুশীলনের কথা ভাগ করে নিলেন তিনি। সুরজিৎ বললেন, “আগে আইসিএসই বোর্ডে পড়ত আকাঙ্ক্ষা। তখন অনুশীলন করতে সমস্যা হত বলে ওকে সিবিএসই বোর্ডে এনেছি। ন্যাশনাল হাই স্কুলে ও পড়ে। স্কুল ওকে খুব সাহায্য করে।”

দিনে ছ’ঘণ্টা অনুশীলন করে আকাঙ্ক্ষা। তার মধ্যে সাড়ে চার ঘণ্টা টেনিস খেলা। বাকি দু’ঘণ্টা ফিটনেস অনুশীলন। সপ্তাহে ছ’দিন এই রুটিন চলে। সুরজিৎ বললেন, “সকালে স্কুল করে। তার পরে ওখান থেকে অনুশীলন করতে চলে যায়। প্রথমে কিছু ক্ষণ টেনিস অনুশীলন করে। মাঝে বিশ্রাম থাকে। তার পর আবার টেনিস অনুশীলন। ওটাই ওর ধ্যানজ্ঞান। প্রতি মাসে একটা বা দুটো প্রতিযোগিতায় নামে। এ ভাবেই আকাঙ্ক্ষা এগিয়ে যাচ্ছে।”

আকাঙ্ক্ষার কোচ শিবিকা গর্বিত নিজের ছাত্রীকে নিয়ে। এই পাঁচ বছরে আকাঙ্ক্ষার কতটা উন্নতি হয়েছে তা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছে তিনি। শিবিকা বললেন, “পাঁচ বছর আগে ও যখন আমার কাছে এসেছিল, তখন খুব চুপচাপ থাকত। ওকে বুঝতে আমার কিছুটা সময় লেগেছিল। তার পরে আমরা একসঙ্গে অনেক অনুশীলন করেছি। তার ফল পাচ্ছি। এই পাঁচ বছরে ওর অনেক উন্নতি হয়েছে। আকাঙ্ক্ষা খুব পরিশ্রমী।” পরবর্তী লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছেন শিবিকা। তিনি বললেন, “জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ওর জীবনে খুব বড় কৃতিত্ব। এর পরে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার দিকে বেশি জোর দেব। তা হলে ওর আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংও ভাল হবে। আশা করছি, আগামী বছর ভারতীয় দলেও ঢুকতে পারবে আকাঙ্ক্ষা।”

সানিয়ার মতোই ফোরহ্যান্ড তার শক্তি। কিন্তু টেনিসে শারীরিক জোরের পাশাপাশি মানসিক জোর কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে কথা জানিয়েছে আকাঙ্ক্ষা। সে বলল, “এখানে শারীরিক জোরের থেকে মানসিক জোর বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যার মানসিক জোর যত বেশি সে জিতবে। আমাকে এখনও কিছু স্ট্রোকে উন্নতি করতে হবে।” এর পরে কী লক্ষ্য আকাঙ্ক্ষার? জবাব, “সিঙ্গলস ও ডাবলসে আরও ট্রফি জিততে চাই। দেশের হয়ে সোনা জেতা আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।”

কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা অর্থ। স্পনসর না পেলে কত দূর মেয়েকে নিয়ে যেতে পারবেন সেটা নিয়ে চিন্তায় থাকেন সুরজিৎ। তিনি বললেন, “গত চার-পাঁচটা প্রতিযোগিতায় বেঙ্গল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন সাহায্য করছে। ওরা ১০ হাজার টাকা করে দেয়। কিন্তু একটা প্রতিযোগিতা খেলতেই তো ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ। পাশাপাশি অনুশীলনের খরচ আছে। স্পনসর না পেলে কত দিন আর টানতে পারব? আশা করছি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে স্পনসর আসবে।” অনেক জায়গায় কথা বলেছেন সুরজিৎ। সামনে জুলাই মাসে আফ্রিকায় প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় নামার আগে স্পনসর জোগাড়ের চেষ্টা করছেন তিনি।

মেয়ে আকাঙ্ক্ষা অবশ্য এ সব বিষয়ে খুব বেশি ভাবে না। তার একটাই লক্ষ্য। কোর্টে নেমে টেনিস খেলা। নিজের সেরাটা দেওয়া। যে ভাবে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঠিক সে ভাবেই বিশ্ব স্তরে ট্রফি জেতা। সানিয়াকে আদর্শ মানা আকাঙ্ক্ষা এগিয়ে চলেছে নিজের লক্ষ্যে।

Indian Tennis Tennis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy