Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ// ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ১ : চেলসি ০

পেপ-এর ফাঁদে পা দিয়ে হারতে হল চেলসিকে

রবিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসি বনাম ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র এই মহারণ দেখে আমার মনে হল, কন্তে যাতে ম্যান সিটির বিরুদ্ধেও সেই রণনীতি নেন, সেটাই চেয়েছিলেন চতুর কোচ গুয়ার্দিওলা।

ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে এগিয়ে দেওয়ার পথে সিলভা। ছবি: রয়টার্স

ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে এগিয়ে দেওয়ার পথে সিলভা। ছবি: রয়টার্স

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০৫:১৯
Share: Save:

ম্যাচের আগেই আসল চালটা দিয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ম্যানেজার পেপ গুয়ার্দিওলা। বলেছিলেন, আন্তোনিও কন্তে স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্স-এর ‘মাস্টার’। আর সেই টোপটাই গিলে ফেলেছিলেন চেলসি ম্যানেজার আন্তোনিও কন্তে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচে মেসিদের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক রণকৌশল নিয়ে শেষ পর্যন্ত মেসি-ইনিয়েস্তার যুগলবন্দির কাছে হেরে গিয়েছিল চেলসি। যে ম্যাচে এডেন অ্যাজার-কে ‘ফলস নাইন’-এর ভূমিকায় রেখে রক্ষণ ও মাঝমাঠে পায়ের জঙ্গল বানিয়ে রেখে দিয়েছিলেন চেলসি ম্যানেজার। যেটা তিনি বেশি করেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। ফলে অ্যাজারকে দ্বিতীয়ার্ধে স্বমহিমায় দেখা যায়নি।

রবিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসি বনাম ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র এই মহারণ দেখে আমার মনে হল, কন্তে যাতে ম্যান সিটির বিরুদ্ধেও সেই রণনীতি নেন, সেটাই চেয়েছিলেন চতুর কোচ গুয়ার্দিওলা। উদ্দেশ্যটা একদম পরিষ্কার। শুরু থেকেই চেলসি যদি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে, তা হলে একা পড়ে যাবে অ্যাজার। চেলসি মাঝমাঠ থেকে উইলিয়ানের কাছে কোনাকুনি যে বলগুলো আসে, সেগুলোও বন্ধ হবে। তখন দু’টো কাজ থাকবে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র সামনে। এক, আক্রমণের ঝাঁঝটা বজায় রাখতে হবে গোটা ম্যাচ। দুই, চেলসির ফুটবলাররা বল পেলেই তাড়া করতে হবে। অর্থাৎ প্রেসিং-টা ঠিক বজায় রাখতে হবে। তা হলেই মিস পাস করবে ড্রিঙ্কওয়াটার, ভিক্টর মোজেস-রা। সেই বল ধরেই গোলের রাস্তা খুলে ফেলতে হবে।

ম্যাচেও ঠিক সেটাই হতে দেখলাম। অলিভিয়ের জিহু, আলভারো মোরাতা দলে থাকা সত্ত্বেও এ রকম ম্যাচে কোন ‘মাস্টার’ তাঁদের প্রথম দলে রাখবে না তা জানা নেই। কন্তে ওদের প্রথম দলে না রেখে শুরু থেকেই জড়োসড়ো। তাই এই সুযোগে প্রথম থেকেই আগুয়েরো, বের্নার্দো সিলভা, লেরয় সানে-রা এমন আক্রমণের ঝড় তুলল, তাতে ঠিক সেই বার্সেলোনা ম্যাচের মতোই ৩-৪-৩ ফর্মেশনে নেমেও দ্রুত ৫-৪-১ ফর্মেশনে চলে গেলেন কন্তে। আর একা হয়ে গেল ‘ফলস নাইন’ অ্যাজার। আর ওকে যে গোলের বল বাড়াবে সেই উইলিয়ান, পেদ্রো-রা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ম্যানেজারের নির্দেশ মতো রক্ষণের সামনে সেই বিখ্যাত ‘বাস পার্কিং’ করতে। আর তার পরেই শুরু হল ম্যাঞ্চেস্টার সিটির প্রেসিং ফুটবল। ফলটা বুঝলাম বিরতিতে, যখন টিভিতে প্রথমার্ধের ম্যাচের তথ্য বিশ্লেষণ হচ্ছিল। সেখানে দেখে অবাক হলাম, প্রথমার্ধে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি গোল লক্ষ্য করে কোনও শট নেয়নি চেলসি।

গুয়ার্দিওলা জানতেন, কন্তের প্রশংসা করায় চেলসি কোচ ফের ‘বাস পার্ক’ করিয়ে আগুয়েরো-দের হতাশ করতে চাইবেন। তার পর দ্বিতীয়ার্ধে একটা ঝটিকা প্রতি-আক্রমণে গিয়ে গোলের রাস্তা খোলার চেষ্টা করবেন। তাই দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হতেই ‘প্রেসিং’-টা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন গুয়ার্দিওলা। বের্নার্দো সিলভার গোলটা তারই ফসল।

ম্যান সিটি-র গোলের সময় সেই বার্সেলোনা ম্যাচের মতোই ক্রিস্টেনসেন দায়সারা মনোভাব দেখাল। যার ফলে ‘লুজ’ বলটা পেতে অসুবিধা হয়নি দাভিদ সিলভার। আর সেই বল লক্ষ্য করে এসেই ফাকতালে গোলটা পেয়ে গুয়ার্দিওলার কাজটা আরও সহজ করে দিল ম্যান সিটি-র কুড়ি নম্বর জার্সিধারী বের্নাদো সিলভা। গোল হজম করতেই আরও কুঁকড়ে গেল চেলসি।

কন্তের এই সময় দরকার ছিল একটু আক্রমণাত্মক হয়ে উইং প্লে জোরদার করা। সাইডব্যাকদের ওভারল্যাপে যেতে বলা। কর্নারের সময় ড্রিঙ্কওয়াটার-দের বলা হেড নেওয়ার জন্য যেতে বা ‘সেকেন্ড বল’ ধরার জন্য। কিন্তু তা হল কোথায়! দরকার ছিল দ্রুত জিহু, মোরাতা-কে আনা। যে বদলটা ৫৫ মিনিটে করা দরকার ছিল, সেটা কন্তে করলেন ৭৮ মিনিটে। এর পরে পেপ-এর মতো ধুরন্ধর কোচের হাত থেকে কন্তে ম্যাচ বার করবেন তা আশা করাই ভুল। তা হয়ওনি।

ম্যাচটা জিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১৮ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শীর্ষেই রইল ম্যান সিটি। আর ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম চার দলের বাইরেই থেকে গেল চেলসি। তাই আমার কাছে কন্তে নন। আসল ‘মাস্টার’ পেপ গুয়ার্দিওলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bernardo Silva Chelsea Manchester City Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE