বাবা মায়ের সঙ্গে ভারতীদেবী। নিজস্ব চিত্র।
বয়সে কী আসে যায়?
ছোটবেলা থেকেই মাঠের প্রতি টান। কঠোর অনুশীলনের ফল মিলছিল। রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে সাফল্য আসে। চাকরি মেলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য আসেনি। কিন্তু জেদ ছাড়েননি বাদুড়িয়ার আটুরিয়া গ্রামের মেয়ে ভারতী দে। ঊনচল্লিশ বছর বয়সে এসেও ভারতীদেবী দেশের হয়ে পদক আনার স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। আড়ালে অনেকেই হাসতেন।
কিন্তু আজ তিনি সত্যিই দেশের হয়ে পদকজয়ী ক্রীড়াবিদদের একজন। ১৯তম এশিয়া মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়ানশিপে একটি রুপো এবং দু’টি ব্রোঞ্জ পেয়েছেন তিনি।স্থানীয় কাটিয়াহাট বাজারে আলু ব্যবসায়ী অশোক দে’র পাঁচ মেয়ের অন্যতম ভারতীদেবী বর্তমানে সিআইএসএফে কর্মরত। পোস্টিং অসমে। মাস কয়েক আগে সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগিতার খবর আসে তাঁর কাছে। কিন্তু এশিয়া সেরা হওয়ার এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হলে আগে ভারত সেরা হতে হবে। সেই কারণে গত মার্চে সর্বভারতীয় মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সে যোগ দেন। কঠোর অনুশীলনের ফলে সাফল্য পেতে অসুবিধা হয়নি ভারতীদেবীর। সেখানে ৪০০ মিটার এবং ১০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হয়ে আদায় করে নেন সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগিতায় ছাড়পত্র। তারপর তো ইতিহাস। ৮০০ মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় এবং ৪০০ মিটার দৌড়
ও ৪০০/১০০ মিটার রিলেতে তৃতীয় হয়েছেন তিনি।
চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে কীভাবে এল এই সাফল্য? ভারতীদেবীর বাবা অশোকবাবু এবং মা রেখাদেবী জানালেন, নবম শ্রেণিতে পড়বার সময় থেকেই মাঠের প্রতি টান ভারতীর। তখন স্থানীয় প্রশিক্ষক আরশাদ আলির তত্ত্বাবধানে অনুশীলন শুরু করেন। সেই সময়ে রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের কয়েকটি প্রতিযোগিতায় সফল হয়েছিলেন। স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে সিআইএসএফে চাকরি পান। তার পরেও অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন।
ভারতীদেবীর কথায়, ‘‘দেশের হয়ে পদক জয়ের স্বপ্ন ছিল। তাই প্রতিদিন কাজের ফাঁকে ২ ঘণ্টা করে অনুশীলন করেছি। বিদেশের মাটিতে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। বয়সকে সংখ্যা ছাড়া কিছুই ভাবিনি।’’
ভারতীদেবীর ছোটবেলার প্রশিক্ষক আরশাদ আলির কথায়, ‘‘কয়েক বছর আগেও এই এলাকার অনেকে মনে করতেন অ্যাথলেটিক হয়ে কোনও লাভ নেই। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। ভারতী আমাদের অনুপ্রেরণা।’’
ইচ্ছেশক্তি থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়। মনে করাচ্ছেন ভারতীর ‘ক্ষিদ্দা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy