Advertisement
E-Paper

বেলিস-বিশ্বাসে নাইট সংসারে বিগ ব্যাশ কাঁপিয়ে আসা নায়ক

উনিশ বছর আগে ফিরোজশাহ কোটলার বাইশ গজে যে দিন কোনও এক শেন ওয়ার্নের জায়গায় আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি, কুলদীপ যাদব তখন হামাগুড়ি দিচ্ছেন! সূর্যকুমার যাদব হাঁটতে শিখেছেন মাত্র, মেরেকেটে বছর ছয়েক। সুরেশ রায়না একটু যা বড়। হাফপ্যান্ট পরে স্কুল-টুল যাচ্ছেন!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৪:১৩

উনিশ বছর আগে ফিরোজশাহ কোটলার বাইশ গজে যে দিন কোনও এক শেন ওয়ার্নের জায়গায় আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি, কুলদীপ যাদব তখন হামাগুড়ি দিচ্ছেন! সূর্যকুমার যাদব হাঁটতে শিখেছেন মাত্র, মেরেকেটে বছর ছয়েক। সুরেশ রায়না একটু যা বড়। হাফপ্যান্ট পরে স্কুল-টুল যাচ্ছেন!

জর্জ ব্র্যাডলি হগকে নিঃসন্দেহে বৃহস্পতিবারের ইডেন দর্শনের পর ক্রিকেটের রজার মিল্লা বলা যায়! বিয়াল্লিশ বছরে বিশ্বকাপ খেলে যদি ফুটবল-পৃথিবীর চোখ কপালে তুলে দিয়ে থাকেন মিল্লা, তা হলে তো ক্রিকেট-দুনিয়ার চলমান বিস্ময় বলে হগকেও ধরতে হবে। যে বয়সে ক্রিকেটাররা ঢুকে পড়েন ‘বার্ধক্যে’র অলিগলিতে, যে বয়সে গড়পড়তা জীবন বিচরণ করে সংসার আর সঞ্চয়ের চক্রব্যূহে, সেখানে আজও জিমে যাওয়া তাঁর রোজকার ‘টু ডু’ লিস্টে থাকে। পঁচিশের ক্রিকেটারের পিছনে এমন লাগেন যে, প্রসঙ্গ উঠতে হাসতে হাসতে তিনি বলে ফেলেন, অফুরান এনার্জিতে অস্ট্রেলীয় চায়নাম্যানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া অসম্ভব নয়, দুঃসাধ্য!

কে বলল, ব্র্যাড হগ এখন চুয়াল্লিশ! কে বলল, ক্রিকেটে বয়স বলে একটা ফ্যাক্টর আছে। যার পর মনে হবে, ব্যস এ বার সব তুলে রাখা দরকার? কে বলল, টি-টোয়েন্টি শুধু নতুন প্রজন্মের খেলা যেখানে ব্যাট নামক ‘গদাধারী’দের সামনে বোলার হিসেবে নামলে তুমি গেলে?

বৃহস্পতিবারের ইডেনে শুধু সিএসকেকে ধ্বংস করে দেননি ব্র্যাড হগ। শুধু কোনও এক সুনীল নারিনের যোগ্য পরিবর্ত হিসেবে নিজের নামটা কেকেআর ম্যানেজমেন্টের হাতে তুলে দিয়ে যাননি। ক্রিকেটের কয়েকটা গোঁড়া বিশ্বাস, অধুনা টি-টোয়েন্টির ধর্মকেও ধূলিসাত্‌ করে দিয়ে গেলেন! বুঝিয়ে গেলেন, টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যান সব নয়। ক্ষমতা থাকলে সিএসকের পরাক্রমী ব্যাটিং-দৈত্যকে বিমূঢ় করে সজোরে নিক্ষেপ করা যায় গঙ্গাবক্ষে। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, ফাফ দু’প্লেসি, জাডেজা সবশুদ্ধ।

রাতের ইডেনে প্রেস কনফারেন্স রুমে দেখা গেল, চেন্নাই কোচ স্টিভন ফ্লেমিং বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে বসে। গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না, চেন্নাই একটা সময় কেন তাড়াহুড়ো করল জিজ্ঞেস করায় ফ্যাকাশে ভাবে বললেন, “একটা সময় তাড়াহুড়ো... যাক।” ফ্লেমিং মেনে নিচ্ছেন হগ নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রয়োগে গোল্লা পেয়েছে টিম। বললেন, ওই তো আসল প্লেয়ার। যে কেকেআরকে ম্যাচে নিয়ে এল। ফ্লেমিংয়ের কথা ধরলে কেকেআর এমন এক যোদ্ধা দিয়ে ম্যাচ বার করেছে ‘হু কেম আউট অব দ্য কোল্ড’।

হিমঘর থেকে বাইশ গজে!

ঘটনা হল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শ্বশুরবাড়ির মাঠ তাঁকে দেখল আজ। কেকেআর ম্যানেজমেন্ট হগকে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে অনেক আগে। নিলামেরও আগে। কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের গত বছর থেকে যা রণনীতি, তার নির্যাস: যত পারো বৈচিত্র আনো টিমে। যাতে বোলার বুঝতে বুঝতেই গোটা চারেক ওভার বেরিয়ে যায় বিপক্ষের। কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট বিশ্বাস করে, টি-টোয়েন্টি জেতায় আসলে বোলাররা। ব্যাটসম্যানরা নয়। তাই সেখানে বৈচিত্র যত বেশি থাকবে, তত ভাল। যে কারণে টিমে সুনীল নারিন। যে কারণে টিমে কুড়ি বছরের চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব। যে কারণে টিমে আনকোরা কেসি কারিয়াপ্পা। যে কারণে টিমে বর্ষীয়ান চায়নাম্যান। জর্জ ব্র্যাডলি হগ।

নারিনের চেয়ে হগ অন্য ধরনের বোলার, কিন্তু সমান কার্যকর। মানুষ হিসেবে ভীষণ মজার।
প্রচুর এনার্জি । সানিকে (নারিন) যখন মিস করছি, তখন ও দারুণ বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে।
ভেবে দেখুন ওরা একসঙ্গে বল করলে আমাদের বোলিং কী বিষাক্ত হয়ে উঠবে!

রবিন উথাপ্পা

ম্যাচের মাঝপথে এক কেকেআর কর্তাকে ইডেন ক্লাবহাউসে দেখা গেল, হগের বোলিং নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়তে। ক্রুদ্ধ হুঙ্কার দিতে এটা বলে যে, একবার নারিন আসুক। হগের সঙ্গে লেলিয়ে দেবে কেকেআর। তখন বাকিরা বুঝবে নাইট বোলিং কী বস্তু। প্রশ্ন হচ্ছে, সুনীল নারিন থাকলে কি আর হগকে নামতে দেখা যেত? উত্তরটা সম্ভবত না। আইপিএল আটে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দু’টো। দু’টোই সিএসকে ম্যাচ। দু’টো ম্যাচ মিলিয়ে তাঁর উইকেট সংখ্যা ছয়! চেন্নাইয়ে দুই, আর ইডেনে চার। কেকেআর তো এখন তাঁকে ‘নতুন নারিন’ বলছে!

মজার হচ্ছে, বিগ ব্যাশ বলে একটা টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলীয় টি-টোয়েন্টি সমাজে না থাকলে হগের কেকেআর সংসারে আসাই হত না। গত বছর বিগ ব্যাশে পারথ স্কর্চার্সের হয়ে রীতিমতো আতঙ্ক তুলে দিয়েছিলেন হগ। ফাইনালে একাই টিমকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টে তাঁর ইকনমি রেটও অবিশ্বাস্য: ৬.১৯। কেকেআর কোচ ট্রেভর বেলিস তখন আবার সিডনি সিক্সার্সের কোচ। বিগ ব্যাশে হগকে দেখে নাকি মনে ধরে বেলিসের। আর তাঁকে নাইট সংসারে আনার কাজ শুরু হয়ে যায়। কেকেআর সরাসরি সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বেলিসের হাতে তুলে দিচ্ছে না। তবে অধিকাংশটা দিচ্ছে।

সুনীল নারিন— তাঁর অভাব নিয়ে মনে হয় না আজকের পর খুব ভাববে কেকেআর। নারিন এখনও টিমের সঙ্গে নেই। এখনও চেন্নাইয়ে। এ দিন সকালে আবার তাঁকে পরীক্ষায় নামতে হয়েছে। এ বার অফস্পিনের। রিপোর্ট কবে আসবে, বোর্ড নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। কেকেআর আশা করছে তাড়াতাড়ি। কিন্তু বোর্ডের কেউ কেউ বললেন, আর ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। একেবারে নিঃসন্দেহ না হয়ে ক্লিনচিট দিয়ে দেওয়া নাকি কঠিন। পরে উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে গেলে চরম বিতর্কের মুখে পড়বে বোর্ড। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া রবিন উথাপ্পাকে অবশ্য নারিন-জটে তুমুল টেনশনাক্রান্ত মনে হল না।

ক্যারিবিয়ান জাদুগরকে নিয়ে রবিন অসম্ভব সংবেদনশীল। মনে করেন, নারিন কোনও না কোনও দিন নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন। কোনও না কোনও দিন নিশ্চয়ই নারিন-হগ জুটিকে মাঠে নামতে দেখা যাবে। তত দিন পর্যন্ত একা হগই বা মন্দ কী।

চুয়াল্লিশের চায়নাম্যান নাকল বল-টল ছাড়াই ব্যাটসম্যানদের যা নাকাল করা শুরু করেছেন!

Roger Milla George Bradley Hogg roger milla and brad hogg bigh bash superstar hogg ipl hero hogg IPL8
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy