Advertisement
১৬ মে ২০২৪
গুরুর স্মৃতিচারণ

ভাবিনি জগু আমাকে ড্রিবল করে চলে যাবে

অনুরাগীদের কাছে এত দিন তিনি পরিচিত ছিলেন জগু বা জগুদা নামে। বিদায় লগ্নে সেই জগমোহন ডালমিয়াকেই তাঁর ক্রিকেট প্রশাসনের গুরু বিশ্বনাথ দত্ত আখ্যা দিলেন টিনা!’’ টিনা? সেটা আবার কী? ডালমিয়ার বিশুদার জবাব, ‘‘ব্রিটিশরা তাঁদের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে সংক্ষেপে বলতেন টিনা (দেয়ার ইজ নো অল্টারনেটিভ)। ভারতীয় ক্রিকেটে জগু আমার টিনা—যার বিকল্প হয় না।’’ রবিবার রাতেই শুনেছিলেন দুঃসংবাদটা।

নিজের বাড়িতে বিশ্বনাথ দত্ত। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

নিজের বাড়িতে বিশ্বনাথ দত্ত। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

অনুরাগীদের কাছে এত দিন তিনি পরিচিত ছিলেন জগু বা জগুদা নামে। বিদায় লগ্নে সেই জগমোহন ডালমিয়াকেই তাঁর ক্রিকেট প্রশাসনের গুরু বিশ্বনাথ দত্ত আখ্যা দিলেন টিনা!’’
টিনা? সেটা আবার কী?
ডালমিয়ার বিশুদার জবাব, ‘‘ব্রিটিশরা তাঁদের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে সংক্ষেপে বলতেন টিনা (দেয়ার ইজ নো অল্টারনেটিভ)। ভারতীয় ক্রিকেটে জগু আমার টিনা—যার বিকল্প হয় না।’’
রবিবার রাতেই শুনেছিলেন দুঃসংবাদটা। রাতে ভাল করে ঘুমোতে পারেননি ভবানীপুরের নব্বই বছরের বৃদ্ধ। সোমবার না পড়েছেন সংবাদপত্র। না শুনেছেন টিভির খবর। বিকেলে আকাশের মতো মুখ ভার করে ছলছলে চোখে বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে ডালমিয়ার মেন্টর বিলাপ করছিলেন, ‘‘ওকে বলতাম, আমি যখন থাকব না...জগু আমাকেই ড্রিবল করে চলে গেল।’’ কিলোমিটার দু’য়েকের ব্যবধানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট তখন কেওড়াতলায় পঞ্চভূতে বিলীন হচ্ছেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের এক বিকেল। তৎকালীন আইএফএ সচিব বিশ্বনাথের সঙ্গে রাজস্থান ক্লাবের জগমোহনের আলাপ আইএফএ শিল্ডে একটা ম্যাচ পণ্ড হওয়া নিয়ে। যার জল গড়িয়েছিল আইন-আদালত পর্যন্ত। ময়দান জানে এখানেই শেষ বিশু-জগুর বৈরিতা। তার পর সেই সাতাত্তর সাল থেকে সিএবি-র অলিন্দে দুই সফল ক্রীড়া প্রশাসকের মহাজোট। সিএবি-র গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। গুরুকে ছাড়িয়ে শিষ্য আবার হাতের মুঠোয় এনেছিলেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আইসিসির মসনদও।
তারই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিশ্বনাথবাবুর স্বগতোক্তি, ‘‘প্রথম বার সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ হয়ে বলেছিল, ইংল্যান্ডের বাইরে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেব। সেটা ঠিক করে দেখিয়েছিল। এটাই জগমোহন ডালমিয়া দ্য গ্রেট।’’
ক্ষমতার অলিন্দে ঘুরপাক খেতে গিয়ে দূরত্ব তৈরি হয়নি? বিশ্বনাথ প্রথমে বললেন, না। মনে করিয়ে দিতে হল, নয়ের দশকের শুরুতে তাঁর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে তৃতীয় বার প্রেসিডেন্ট হতে গিয়ে হারার বছরেই তো ডালমিয়ার সচিব হিসেবে বোর্ডে আত্মপ্রকাশ। ময়দান যেখানে ‘অন্য গন্ধ’ খুঁজে পায়। কিছুক্ষণ চুপ। তার পর বললেন, ‘‘একটু খারাপ লেগেছিল।’’ পরক্ষণেই দুঁদে ক্রীড়া প্রশাসকের মতো নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘‘ও কথা আজ থাক।’’
প্রিয় জগুর বিরুদ্ধে লড়েছেন? এ বার উত্তর এল হ্যাঁ। ‘‘সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে এক বার ওর বিরুদ্ধে সমর পালকে দাঁড় করেছিলাম। কিন্তু সমর মোটে ১৪ ভোট পেয়ে হারে।’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘জগু কিন্তু ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ছাড়া কিছুই বলেনি। ওই মুহূর্তগুলো আজ তাড়া করেছে!’’

তা হলে জগমোহনকে কেন ভোটের পর ভোট জিততে সাহায্য করেছিলেন? সরিয়েই তো দিতে পারতেন। উত্তর এল—‘‘ও কথা ভুলেও ভাবিনি। ওর মতো বুদ্ধি আর যুক্তির জাল বুনে দ্রুত কাজ সফল করার বুকের পাটা কারও ছিল! ইডেনের ফ্লাড লাইট বসানো হোক বা রিলায়্যান্স কাপের ফাইনাল কলকাতায় আনা। এ জন্যই জগু টিনা। তাই অন্ধ সমর্থন।’’

দু’বছর আগে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের সৌজন্যে ১০ নম্বর আলিপুর রোডের বাসিন্দা যখন বোর্ডে কক্ষচ্যুত তখন গুরুকে ফোন করেছিলেন। গুরুর ভোকাল টনিক ছিল— ‘‘ধৈর্য ধর। বাকিরা দমকা হাওয়ায় উড়ে যাবে।’’

সেই দমকা হাওয়ায় বোর্ডের রাজ্যপাট ফের ফিরে এসেছিল বিশুদার ‘টিনা’র কাছে। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বর, রবিবারের পর সেই সাম্রাজ্যে মুকুটটা পড়ে রয়েছে। কিন্তু রাজা নেই! তিনি যে ইতিমধ্যেই ঠাঁই নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায় ।

ডালমিয়ার চাণক্যের তাই আক্ষেপ, ‘‘ফুটবলে অশোক (ঘোষ) আর ক্রিকেটে জগুকে নিয়ে এসেছিলাম। বাংলার খেলার মাঠে আজ একটা বড় পাঁচিল চোখে পড়ছে। ওটা টপকাতে একটা টিনা চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE