Advertisement
E-Paper

কোহালির ইনিংসে যেন উদ্বুদ্ধ হন ব্যাটসম্যানরা

ভারতীয় সময় সকাল ৭.৫০ নাগাদ খেলাটা শুরু হতে অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের একটা সিদ্ধান্ত দেখে অবাকই হয়েছিলাম।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
আউট হয়ে ফেরার পথে বিরাট কোহালি।—ছবি পিটিআই।

আউট হয়ে ফেরার পথে বিরাট কোহালি।—ছবি পিটিআই।

ভারতীয় সময় সকাল ৭.৫০ নাগাদ খেলাটা শুরু হতে অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের একটা সিদ্ধান্ত দেখে অবাকই হয়েছিলাম। কোনও পেসার নয়, অফস্পিনার নেথান লায়নের হাতে বল তুলে দিলেন টিম পেন। লায়নের দ্বিতীয় বলে একটা রান নিয়ে অজিঙ্ক রাহানেকে স্ট্রাইক দিলেন কোহালি। লায়নের চতুর্থ বলটা একটু সোজা হয়ে রাহানের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটকিপার পেনের হাতে চলে গেল।

রাহানে আউট হতেই কোহালির ওপর চাপটাও ওই সময় দারুণ বেড়ে যায়। কিন্তু ব্যাটসম্যানের নামটা যে কোহালি। মনঃসংযোগ, সংযম, দৃঢ়তা এবং ধ্রুপদী ক্রিকেটের মিলন এখন কোহালির খেলায়। মিচেল স্টার্কের যে বলটায় স্ট্রেট ড্রাইভ মেরে টেস্টে ২৫তম সেঞ্চুরিতে পৌঁছলেন, সেটা এক কথায় ক্ল্যাসিকাল শট। ক্রিকেটের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। কোহালির এই পঁচিশটা সেঞ্চুরির বেশিরভাগগুলোই আমি হয় টিভি-তে না হয় মাঠে থেকে দেখেছি। কিন্তু এই সেঞ্চুরিটা যেন সবার চেয়ে আলাদা। এটা একটা রক্তক্ষয়ী সেঞ্চুরি। এই ইনিংস খেলতে গিয়ে কোহালির শরীরে আঘাত লেগেছে, কিন্তু খেলায় তার প্রভাব পড়েনি। একটা ইনসুইং তো ব্যাটের কানায় লেগে ডান হাতের কনুইয়ে লাগে। আমরা যারা ক্রিকেট খেলেছি, তারা জানি, এটা কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। কিন্তু কোহালি সেই যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করে লড়াই চালিয়ে গেলেন।

রবিবারের পার্‌থে অস্ট্রেলিয়া বনাম কোহালির লড়াইটা যেন জীবনসংগ্রামের এক প্রতীক হয়ে থাকল। অস্ট্রেলিয়া কখনও দুটো স্লিপ-দুটো গালি, কখনও তিনটে স্লিপ-দুটো গালি রেখে কোহালিকে আক্রমণ করে গেল। কিন্তু ভারত অধিনায়কের মনঃসংযোগে সামান্য ফাটলও ধরাতে পারেনি। আগেও বলেছি, কোহালির ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হল ফিটনেস। এই ফিটনেসই বারবার ধরা পড়েছে কোহালির খেলায়। সেটা সেকেন্ডের ভগ্নাংশে বলের কাছে পৌঁছনোই হোক কী, হনুমা বিহারীর সঙ্গে রান নেওয়ার ক্ষেত্রেই হোক। ব্যাট করতে নামার সময় কোহালির মুখের ভাব যে রকম থাকে, সেঞ্চুরি করার পরেও সেই মুখে কোনও ক্লান্তির ছাপ পড়তে দেখি না।

আশা করব, কোহালির এই সেঞ্চুরি দ্বিতীয় ইনিংসে বাকি ব্যাটসম্যানদেরও উদ্বুদ্ধ করবে ভাল করার ব্যাপারে। এই টেস্টে জিততে গেলে কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে অন্যান্য ব্যাটসম্যানকেও এগিয়ে আসতে হবে। কোহালির এই অসাধারণ ইনিংস যে ভাবে শেষ হল, সেটা দেখে অবশ্য মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি নিশ্চিত, তৃতীয় আম্পায়ার না থাকলে, প্রযুক্তির ব্যাপার না থাকলে, কোহালি আউট হতেন না। কোনও ভাবেই বোঝা যায়নি, পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাতে যাওয়ার আগে বলটা মাটি ছুঁয়েছিল কি না। অনেক বার টিভি রিপ্লে দেখার পরে আমার মনে হচ্ছে, বলটা মাটি ছুঁয়েছিল। মোদ্দা কথা হল, আম্পায়ারের মনে সন্দেহ থাকলে সব সময় ব্যাটসম্যানকে নট আউট দিতে হবে। এটাই ক্রিকেটের নিয়ম।

তৃতীয় দিনের শেষে এসে অনেকেই দেখলাম, অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখছে। কারণ পার্‌থের পিচ। যেখানে চতুর্থ ইনিংস খেলাটা সত্যিই কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ারও চার উইকেট পড়ে গিয়েছে। এগিয়ে ১৭৫ রানে। তার ওপর অ্যারন ফিঞ্চের আঙুলে চোট। রবিবার যশপ্রীত বুমরা যেমন বল করলেন, সেটা সোমবার সকালেও দেখা গেলে অস্ট্রেলিয়া বেশি রানে এগিয়ে যেতে পারবে না।

পেস বোলিংয়ের মুখে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের এ রকম অস্বস্তিতে পড়তে অনেক দিন দেখিনি। বোধ হয় সেই সত্তর-আশির দশকে ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণের সামনে এ রকম ভীতিপ্রদ দেখাত। এ দিন তো মার্কাস হ্যারিস হেলমেটে খেলেন, ফিঞ্চ আঙুলে। বিশেষ করে বুমরার সামনে রীতিমতো অসহায় দেখিয়েছে ব্যাটসম্যানদের। এ রকম আগুনে ফাস্ট বোলিং খুব কমই দেখা যায়। হ্যারিসকে যে বলে আউট করলেন, সেটা কিছুই বুঝতে পারেননি অস্ট্রেলীয় ওপেনার। বুমরার আউটসুইং বাঁ হাতি হ্যারিসের ইনসুইং ছিল। বলটা ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হলেন হ্যারিস। বুমরার দুর্ভাগ্য, দিনের শেষে ওঁর নামের পাশে মাত্র একটি উইকেট। একটু ভাগ্য ভাল হলে আরও কয়েকটা উইকেট পেয়ে যান বুমরা।

আমার মতে, এই টেস্ট এখনও ৫০-৫০ অবস্থায়। সোমবার সকালে ভারতীয় পেসাররা যদি অল্প রানে থামিয়ে দিতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংকে, তবে জয় আসতেই পারে।

Cricket Test Border-Gavaskar Trophy 2018 India Australia Virat Kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy