Advertisement
E-Paper

দল গঠনে শেষ কথা বলবেন না প্রেসিডেন্ট

মনোজের সঙ্গে পরামর্শ না করে রঞ্জিতে প্রথম ম্যাচের দল গড়া নিয়ে সোমবার সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়া। ঘটনা হচ্ছে, নতুন গঠনতন্ত্র কার্যকর হলে এই ধরনের মনোভাব দেখানোর এক্তিয়ারই থাকার কথা নয় কর্তাদের।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৮
সিএবি-তে দল নির্বাচনের নয়া প্রক্রিয়া। —ফাইল চিত্র।

সিএবি-তে দল নির্বাচনের নয়া প্রক্রিয়া। —ফাইল চিত্র।

বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিকে নিয়ে তৈরি হওয়া অস্বস্তিকর পরিবেশ এবং রঞ্জি ট্রফির দল নির্বাচন ঘিরে বিতর্কের মধ্যেই জোরাল ধাক্কা খেল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা সিএবি।

মনোজের সঙ্গে পরামর্শ না করে রঞ্জিতে প্রথম ম্যাচের দল গড়া নিয়ে সোমবার সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সিএবি সচিব অভিষেক ডালমিয়া। ঘটনা হচ্ছে, নতুন গঠনতন্ত্র কার্যকর হলে এই ধরনের মনোভাব দেখানোর এক্তিয়ারই থাকার কথা নয় কর্তাদের। দু’টো জিনিস স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে নতুন গঠনতন্ত্রে। অধিনায়ক নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভাবে নির্বাচকদের হাতে থাকবে। ক্রিকেট বোর্ড বা কোনও রাজ্য সংস্থার প্রেসিডেন্টের এর মধ্যে কোনও ভূমিকা নেই। এমনকি, সচিবদেরও আহ্বায়ক হয়ে বৈঠকে বসার দরকার আছে বলে উল্লেখ নেই। যেটা সেই ঝাঁসির রানির আমল থেকে চলছে এবং কর্তারা এখনও উপভোগ করে চলেছেন। নির্বাচকেরা রিপোর্ট জমা দেবেন অ্যাপেক্স কাউন্সিলের কাছে। সেখানেও প্রেসিডেন্ট বা সচিবের ভূমিকার কোনও উল্লেখ নেই। নতুন প্রক্রিয়ায় অ্যাপেক্স কাউন্সিলই হবে ক্রিকেট সংস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

বোর্ডের ওয়েবসাইটে যে নতুন গঠনতন্ত্র ঝোলানো রয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, অধিনায়ক নির্বাচন হয়ে গেলে তাঁকে গুরুত্ব সহকারে বৈঠকে রেখে বাকি দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া সারতে হবে। আরও বলা হয়েছে, অধিনায়কের ভোটাধিকার না থাকলেও তাঁর মতামতকে ভীষণ ভাবেই গুরুত্ব দিতে হবে। নির্বাচক কমিটিতে সব চেয়ে অভিজ্ঞ প্রাক্তন ক্রিকেটার হবেন চেয়ারম্যান। তিনিই নির্বাচনী সভায় ‘চেয়ারপার্সন’ হিসেবে সভা পরিচালনা করবেন।

আরও পড়ুন
#মিটু: বোর্ডের সিইওকে নিয়ে তোপ সৌরভের

সিএবি কর্তারা নিজে থেকে এই সব সংস্কার তো আনবেনই না, উল্টে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো অধিনায়কের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়ে চলেছেন। তা নিয়ে অধিনায়ক অপমানিত বোধ করে নেতৃত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাওয়ায় কর্তারা হম্বিতম্বিও করছেন! সেটা যে সম্পূর্ণ এক্তিয়ার বহির্ভূত, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবারেই। এই মুহূর্তে বোর্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সুপ্রিম কোর্ট-নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ) আরও এক বার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, লোঢা কমিটির সংস্কার অনুযায়ী দল নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ ভাবেই বর্জনীয়। দল নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা না রেখে তাই সিএবি-কে ফের গঠনতন্ত্র তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন গঠনতন্ত্র নিয়ে তাদের সর্বশেষ স্টেটাস রিপোর্ট পেশ করেছে সিওএ। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, সিএবি তিনটি নিয়ম মানেনি। সেগুলি হল—

১) প্রেসিডেন্টের অনুমোদন না নিয়ে দল নির্বাচন করা যাবে না, এই প্রথা রাখা চলবে না। লোঢা সংস্কারে পরিষ্কার বলা হয়েছে, নির্বাচকদের স্বাধীন ভাবে দল গড়তে দিতে হবে। সিএবি তাদের গঠনতন্ত্রে রেখেছিল, দল নির্বাচন প্রেসিডেন্টের অনুমতি সাপেক্ষ। অর্থাৎ, আগেকার মতো বৈঠকের শেষে প্রেসিডেন্টের অনুমতি বা ছাপ্পা না নিয়ে দল ঘোষণা করা যাবে না। এই নিয়ম আগে ছিল বলেই মোহিন্দর অমরনাথদের সিদ্ধান্তকে উল্টে দিয়ে নিজের ক্ষমতাবলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে জোর করে অধিনায়ক রেখে দিয়েছিলেন এন শ্রীনিবাসন। অস্ট্রেলিয়ায় ০-৪ হোয়াইটওয়াশের পরে নির্বাচকেরা ধোনিকে সরিয়ে দিলেও সেই সিদ্ধান্ত বলবৎ হয়নি।

২) যোগ্যতামানে আটকে যাচ্ছেন এমন কোনও কর্তাকে বোর্ডে প্রতিনিধি করে পাঠানো যাবে না। যোগ্যতামান অর্থাৎ, যে সব সদস্য ৭০ বছর পেরিয়ে গিয়েছেন বা সংস্থার পদে নয় বছর কাটানো হয়ে গিয়েছে। সিএবি এই নিয়ম মানতে চায়নি।

৩) ট্রাস্টি বোর্ড রাখা যাবে না। সমস্ত সংস্থায় থাকবে শুধু পাঁচটি পদ। প্রেসিডেন্ট, সচিব, যুগ্ম-সচিব, কোষাধ্যক্ষ এবং এক জন ভাইস প্রেসিডেন্ট। অ্যাপেক্স কাউন্সিলে এই পাঁচ জনের সঙ্গে যোগ করা হবে আরও চার জনকে। সিএবি তাদের প্রাক্তন পদাধিকারীদের নিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড রেখে দেওয়ার প্রথা গঠনতন্ত্রে ঢুকিয়ে রেখেছিল (সিএবি-র এমন পরিকল্পনার কথা আগেই আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়েছিল যে, নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে ট্রাস্টি বোর্ড রাখার কথা হচ্ছে। স্টেটাস রিপোর্টে ঠিক সেটাই ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে)।

আরও পড়ুন
দল গঠনে শেষ কথা বলবেন না প্রেসিডেন্ট

তিনটি নিয়মকেই সংশোধন করে ফের গঠনতন্ত্র তৈরি করার কথা বলা হয়েছে সিএবি-কে। স্টেটাস রিপোর্টে তিনটি ভাগে রাজ্য সংস্থাগুলিকে ভাগ করেছে সিওএ। প্রথমে, একেবারেই যারা লোঢা সংস্কার মানতে চাইছে না। এই অংশে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য দু’টি নাম অনুরাগ ঠাকুরের রাজ্য হিমাচল প্রদেশ এবং অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ পরিচালিত গুজরাত ক্রিকেট সংস্থা। আছে হরিয়ানা এবং নতুন অনুমোদিত সংস্থা হিসেবে আসা মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশ। দ্বিতীয়, যারা আংশিক ভাবে মেনে নিয়েছে, পুরোপুরি মানেনি। এই অংশের মধ্যে বাংলার সঙ্গে রয়েছে গোয়া, মহারাষ্ট্র, বিহার, ছত্তিশগঢ়, মণিপুর এবং বিদর্ভ-সহ মোট ১০টি রাজ্য। তৃতীয়ত, খুব কমই যারা মেনে নিয়েছে অর্থাৎ ক্যাটেগরি সি। এই অংশে রয়েছে ১৭টি রাজ্য। সম্পূর্ণ ভাবে লোঢা সুপারিশ মেনে সংবিধান তৈরি করে তবেই রাজ্য সংস্থায় নির্বাচন করা যাবে বলে জানানো হয়েছে। না মানতে চাইলে সেই রাজ্য সংস্থা বোর্ডে ভোটাধিকার হারাতে পারে।

লোঢা কমিটির সুপারিশে সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সংস্থার সততা এবং স্বচ্ছতার উপরে। কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন, স্বচ্ছতা আনতে চাইলে সিএবি কেন নির্বাচনী বৈঠকের ভিতরকার আলোচনা ভিডিয়ো করে তাদের ওয়েবসাইটে দিচ্ছে না? দেশের প্রথম ক্রিকেট সংস্থা হিসেবে তাদের এই পদক্ষেপকে সকলে ধন্য ধন্যই করবে। দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের অবকাশও থাকবে না।

ইতিমধ্যেই নানা ব্যাপারে সিএবি-র স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন নির্বাচক নিয়োগ নিয়ে সওয়াল করায় ওম্বাডসমানকে পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। ওম্বাডসমান ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব ছেড়ে চলে গিয়েছেন, স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্ন ওঠা নির্বাচক এখনও রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দ্বৈত ভূমিকার অভিযোগের জবাব বা ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি সংস্থার ওয়েবসাইটে। অথচ, স্বচ্ছতা রাখতে সংস্থাগুলিকে এ সবই করার পরামর্শ দিয়েছিল লোঢা কমিটি। এ বার বাংলার দল নির্বাচন নীতি নিয়ে ধেয়ে আসা বাউন্সার কী ভাবে সামলায় ক্রিকেটার সৌরভের সিএবি, সেটাই দেখার।

CAB Cricket Association f Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy