Advertisement
E-Paper

‘মেসি দেখলেই খোঁড়া’ রোগ সারাতে হবে আর্জেন্তিনাকে

দুটো ব্যালান্সড দল। দুটো দলেই তারকা ফুটবলারের ছড়াছড়ি। এক দলের ফরোয়ার্ড লাইন বিশ্বমানের তো আর এক দলের রক্ষণ আঁটোসাঁটো। ব্যস আর কী চাই? আশা করেছিলাম একটা হাড্ডাহাড্ডি, ওপেন ম্যাচ দেখব। অনেক গোলও হয়তো হবে। নব্বই মিনিট শেষে আমার মনে হল আর্জেন্তিনা-জামাইকা ম্যাচের অ্যাকশন রিপ্লে দেখলাম। কলম্বিয়া হয়ে উঠেছিল এ দিনের জামাইকা।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:৩১
মেসিকে রোখার চিরন্তন ছবি। কোপায় কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে শেষ চারের দৌড়ে। ছবি: এপি

মেসিকে রোখার চিরন্তন ছবি। কোপায় কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে শেষ চারের দৌড়ে। ছবি: এপি

আর্জেন্তিনা ০(৫) : কলম্বিয়া ০(৪)

দুটো ব্যালান্সড দল। দুটো দলেই তারকা ফুটবলারের ছড়াছড়ি। এক দলের ফরোয়ার্ড লাইন বিশ্বমানের তো আর এক দলের রক্ষণ আঁটোসাঁটো। ব্যস আর কী চাই? আশা করেছিলাম একটা হাড্ডাহাড্ডি, ওপেন ম্যাচ দেখব। অনেক গোলও হয়তো হবে।
নব্বই মিনিট শেষে আমার মনে হল আর্জেন্তিনা-জামাইকা ম্যাচের অ্যাকশন রিপ্লে দেখলাম। কলম্বিয়া হয়ে উঠেছিল এ দিনের জামাইকা। আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে যে ছক কষেছিল জামাইকা, সেটাই করল কলম্বিয়া। শুরুর থেকেই দশ জন নীচে নেমে গেল। ডিপ ডিফেন্ড করল। আর্জেন্তিনা ফুটবলারদের কোনও জায়গা দিল না। আর আর্জেন্তিনার মধ্যে আবার দেখতে পেলাম সেই রোগটা। প্রায় পনেরোটার মতো শট মেরেও গোল নেই। আক্রমণ তৈরি করেও কোনও ফিনিশিং টাচ নেই।
লিওনেল মেসি দলে থাকা মানেই আমরা একটা আশা নিয়ে ম্যাচ দেখতে বসি। অবিশ্বাস্য কোনও মুহূর্ত দেখা যাবে। স্বপ্নের একটা গোল দেখতে পাব। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধেও আশা ছিল, মেসি কোনও অভিনব মুহূর্ত তৈরি করবে। আফসোস, সেটা হল না। প্রতিটা বলের জন্য লড়াই করল ঠিকই, কিন্তু সতীর্থদের থেকে সাহায্য না পাওয়ায় সে ভাবে ছাপ রেখে যেতে পারল না।

এই আর্জেন্তিনার একটা বড় রোগ আছে। ওই একটা কথা আছে না, ‘ঘোড়া দেখলে খোঁড়া।’ মেসি আর আর্জেন্তিনার ক্ষেত্রে এটাই বলা চলে। মেসি দলে থাকা মানে পুরো চাপটাই ওর ঘাড়ে পড়ে। বাকি ফুটবলাররা অনবরত ওকে পাস দিতে চায়। কেউ দেখে না ও আদৌ ভাল পজিশনে আছে কি না। ‘ওই তো মেসি আছে, সব সামলে নেবে’ মানসিকতাটায় খেলছে আর্জেন্তিনা।

কলম্বিয়ার কোচ হোসে পেকারম্যান খুব ভাল করেই জানেন মেসিকে। জানতেন, মেসিকে ম্যান মার্ক করা সম্ভব নয়। তাই প্ল্যান বি-তে চলে গেলেন। অর্থাত্ জোনাল মার্কিং। মেসি যে জায়গায় যাচ্ছিল, সেখানেই ভিড় বাড়িয়ে দিচ্ছিল জাপাতা-মুরিয়ো-আরিয়াস-জুনিগা। কলম্বিয়া ৪-৪-২ নিয়ে শুরু করলেও আস্তে আস্তে সেটা ৪-৫-১ ফর্মেশনে বদলে যায়। পাঁচ জন মিডফিল্ড নিয়ে কলম্বিয়া লোক বাড়িয়ে দেয়। তিন জন মেসিকে আটকালে বাকি দু’জন সাপোর্টে যাচ্ছিল। অন্য ম্যাচে যেমন উইংয়ে জায়গা না পেয়ে মিডফিল্ডে চলে আসছিল মেসি, এ দিন সেই সুযোগও পায়নি। পেকারম্যান জানতেন মেসির সঙ্গে বাকি ফরোয়ার্ডদের কম্বিনেশন বন্ধ করা মানে আর্জেন্তিনার আক্রমণ পঞ্চাশ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া। কয়েক বার দি’মারিয়ার সঙ্গে কম্বাইন করলেও ফাইনাল থার্ডে এসে সেটা শেষ হয়। মেসিকে আটকাতে কুয়াদ্রাদোর মতো ফরোয়ার্ডও রাইট ব্যাকে নেমে খেলে।

মেসির জন্য আরও যে দাওয়াইটা পেকারম্যান ব্যবহার করেছিলেন, সেটা হল ‘পাওয়ার গেম।’ কড়া ট্যাকল। কাঁধ দিয়ে ধাক্কা। কোনও ফুটবলারের মাথা গরম করার জন্য যা যা দরকার আর কী।

মেসি অবশ্য সেই ফাঁদে পা দেয়নি। এমন রক্ষণাত্মক ছকের মধ্যেও নিজের প্রতিভার প্রমাণ রেখে গেল। কলম্বিয়া ডিফেন্ডাররা শারীরিক ভাবে মেসির থেকে বড় হতে পারে, কিন্তু স্কিলে সবাই ওর থেকে একশো গুণ পিছিয়ে। পায়ের জঙ্গলের মধ্যে কী সুন্দর কয়েকটা ড্রিবল করল। গোলটাও হয়তো পেয়ে যেত, যদি না সামনে থেকে ওর হেড ও রকম দুর্দান্ত সেভ করত কলম্বিয়া গোলকিপার ডেভিড ওসপিনা। প্রথমে সের্জিও আগেরোর শটটা যখন ওসপিনা বাঁচাল তখন মনে হল খুব সহজেই মেসি রিবাউন্ডটা জালে জড়িয়ে দেবে। কিন্তু ওসপিনার রিফ্লেক্সটা দেখে দারণ লাগল। যেমন ভাবে ও বলটা বাঁচাল, সেটা খুব সহজ কাজ নয়।

হতে পারে কলম্বিয়া খুব ফিজিকাল খেলেছে। কিন্তু এমন নয় মেসি কোনও ফিজিকাল দলের বিরুদ্ধে আগে খেলেনি। ক্লাব ফুটবলে বহু বার প্রিমিয়ার লিগ, বুন্দেশলিগার ক্লাবগুলোর সঙ্গে খেলেছে। আসল কথা হচ্ছে আর্জেন্তিনায় ওর কোনও ভাল সাপোর্ট নেই। ও যত বার বলটা নিয়ে ভাল জায়গা তৈরি করছিল, সাপোর্টে কেউ আসছিল না। রোখো-জাবালেতা-বিগলিয়ার মতো ফুটবলাররা সে ভাবে পজিশন নিতে জানে না। আগেরো-পাস্তোরেও নীচে নামতে চায় না বেশি। ব্যক্তিগত প্রতিভা থাকতেই পারে। কিন্তু ফুটবল মানেই তো টিমওয়ার্ক। বার্সেলোনায় যে সাপোর্টটা পায় সেটা আর্জেন্তিনায় পাচ্ছে কোথায়? ব্রাজিলে রোনাল্ডোর পাশে তো একটা রোনাল্ডিনহো ছিল। ফান বাস্তেনের পাশে একটা খুলিট ছিল। মেসির পাশে কে আছে? দি’মারিয়া ছাড়া তো ওর মুভমেন্ট কেউ বুঝতেই পারছে না।

কলম্বিয়া তো দেখলাম ম্যাচটা টাইব্রেকারে নিয়ে যেতেই চেয়েছিল। পুরো ম্যাচ ভাল রক্ষণ করেছে ঠিকই তবে আক্রমণাত্মক খেলায় শূন্য। পেনাল্টি শ্যুটআউটে গিয়েও কী বাজে বাজে শট মারল। জুনিগা, মুরিয়োর আরও ভাল করা উচিত ছিল। আগেই বলেছিলাম আর্জেন্তিনা গোলরক্ষক সের্জিও রোমেরোর রিফ্লেক্স খুব ভাল। জুনিগার শটটা কী দুর্দান্ত বাঁচাল।

গোটা টুর্নামেন্টে দেখছি আর্জেন্তিনা প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেললেও বিরতির পরে ঘুমিয়ে পড়ছে। অনেকে বলছেন, ক্লাব মরসুমের জন্য নাকি ধকল পড়ছে আর্জেন্তিনার উপর। পুরো নব্বই মিনিট খেলার দম নেই। আমি সে সব মনে করি না। জার্মান ফুটবলাররাও তো চুটিয়ে ক্লাব ফুটবল খেলে বিশ্বকাপ জিতেছে। তা হলে আর্জেন্তিনা ফুটবলারদের কী সমস্যা?

Copa America Argentina Colombia quarter-final
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy