দলীপ ট্রফিতে চার বলে চার উইকেট নিয়ে কপিল দেবের রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা থেকে উঠে আসা এক ক্রিকেটার হঠাৎই নজর কেড়েছেন ভারতীয় নির্বাচকদের। ঘণ্টায় ১৩৫ কিমি গতিতে বল করতে পারেন। দু’দিকেই বল সুইং করাতে পারেন। তাঁর বোলিংয়ের সামনে যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন আরশদীপ সিংহ, হর্ষিত রানার মতো পেসাররা। তিনি— আকিব নবি।
২৮ বছরের পেসার প্রথম বার দলীপ ট্রফিতে খেলছেন উত্তরাঞ্চলের হয়ে। আর প্রথম ম্যাচেই চার বলে চার উইকেট নিয়ে নজির গড়েন তিনি। আকিব ফিরিয়েছিলেন বিরাট সিংহ, মণীষী, মুখতার হুসেন ও সূরজ সিন্ধু জায়সওয়ালকে। শেষে মহম্মদ শামিকে আউট করে পাঁচ উইকেট পূরণ করেন তিনি। মাত্র ২৮ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন আকিব। ম্যাচের সেরাও ঘোষণা করা হয় তাঁকে।
বেঙ্গালুরুর সেন্টার অব এক্সেলেন্সে পেসাররা খুব একটা ফায়দা তুলতে পারছিলেন না। কারণ, পিচ ব্যাটিং-সহায়ক ছিল। ফলে শামি, হর্ষিত, আরশদীপরা প্রত্যাশা অনুযায়ী উইকেট পাননি। কিন্তু দু’দিকে সুইং করানোর ক্ষমতা আকিবকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছিল। ২০২৪-‘২৫ রঞ্জি মরসুমে মাত্র আট ম্যাচে ৪৪টি উইকেট নিয়েছেন আকিব। পেসার হিসেবে গত বার সর্বোচ্চ শিকার ছিল তাঁর। কী ভাবে শিখলেন এই সুইং? আনন্দবাজারকে আকিব বলছিলেন, ‘‘ইরফান (পাঠান) ভাইয়ের কাছেই সুইং শিখেছি। আমার গতি আগে বেশি ছিল না। ১২৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায় বল করতাম। ইরফান ভাই বলেছিলেন, এই গতিতে যদি সুইংও না করাতে পারি, রঞ্জি ট্রফি খেলার কথা ভুলে যেতে হবে। ইরফান ভাই অনেক পরিশ্রম করেছেন আমার জন্য।’’ যোগ করেন, ‘‘ভিডিয়ো করে দেখাতেন আউটসুইং করাতে গেলে কব্জি কোন জায়গায় রাখা উচিত। ইনসুইংয়ের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মানা উচিত।’’
জম্মু ও কাশ্মীরের মেন্টর ছিলেন ইরফান পাঠান। সেই রাজ্যের হয়ে খেলেছেনও। সেই সময়ই জম্মু ও কাশ্মীর দলে আসেন আকিব। ইরফানের প্রশিক্ষণে জীবন পাল্টে যায় তাঁর। বলছিলেন, ‘‘সুইং আয়ত্তে আনার পরে ইরফান ভাই বলেছিল গতি বাড়াতে। তার জন্য আমার খাদ্যাভাস থেকে শুরু করে ব্যায়াম, সব পরিবর্তন করতে হয়েছিল। পেশি শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রোটিন-যুক্ত খাবার বেশি খেতে হত। ইরফান ভাইয়ের কাছে এখনও পরামর্শ নিই। কোনও সমস্যা হলেই ফোন করি। বরোদায় ইরফান ভাইয়ের বাড়িতেও গিয়েছি।’’
দলীপ ট্রফির ম্যাচে মহম্মদ শামির সঙ্গেও দেখা হয়েছে আকিবের। কী বললেন আপনার বোলিং দেখে? আকিবের উত্তর, ‘‘খুব খুশি হয়েছেন। শামি ভাইকে তো আমিই আউট করেছিলাম। বেশ কিছু মূল্যবান পরামর্শও পেয়েছি। রিভার্স সুইং নিয়ে আমাকে অনেক কিছু বলেছে শামি ভাই। চেষ্টা করব সে সব মূল্যবান পরামর্শ মেনে চলতে।’’
আকিব যদিও ভক্ত ডেল স্টেনের। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি পেসারকে দেখেই জোরে বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত স্টেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের চেষ্টায় কোনও খামতি রাখছেন না। বলছিলেন, ‘‘স্টেন স্যর আমার স্বপ্নের নায়ক। তাঁকে দেখেই পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এখনও পর্যন্ত আইপিএলে সুযোগ পাইনি, না হলে নিশ্চয়ই দেখা হয়ে যেত। স্টেন স্যরের সঙ্গে দেখা হলে পাশে দাঁড়িয়ে একটি ছবিতুলতে চাই।’’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের মাইলফলক থেকে আর পাঁচ উইকেট দূরে আকিব। সে সব নিয়ে অবশ্য ভাবছেন না। তাঁর স্বপ্ন ভারতের হয়ে টেস্ট খেলার। যদিও এখনই বেশি দূর ভাবতে চান না। একটি করে ম্যাচ ধরে এগোতে চান। আকিবের কথায়, ‘‘আপাতত দলীপ ট্রফি জিততে চাই। ভারতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলার লক্ষ্যেই এত পরিশ্রম করছি। তবে তাড়াহুড়ো করতে চাই না। ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে গেলে আমায় রাজ্য স্তরে আরও ভাল খেলতে হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)