বিকেল চারটের সময় বৃষ্টির জন্য আম্পায়ারেরা যখন দিনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন, ঠিক তখনই বাংলার ড্রেসিংরুমের সামনে চলে যান জাতীয় নির্বাচক রুদ্রপ্রতাপ সিংহ। বাংলা শিবির থেকে ডেকে নেন মহম্মদ শামিকে। ভারতীয় পেসার এক গাল হেসে এগিয়ে যান নির্বাচকের সঙ্গে কথা বলতে। ইডেনের ড্রেসিংরুমের সামনে দু’টি চেয়ারে বসে প্রায় মিনিট কুড়ি কথা হয় দু’জনের মধ্যে।
সামনেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়। তার আগে রঞ্জি ট্রফিতে আগুন ঝরাচ্ছেন শামি। প্রথম ম্যাচে সাত উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এ দিন নতুন বল হাতে তুলে নেন দুই উইকেট। তাঁর গতি ও সুইং দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলেন জাতীয় নির্বাচক।
শামি এ দিন তিনটি স্পেলে বল করেন। প্রথম স্পেলে তাঁর পরিসংখ্যান ৫-৩-১০-১। প্রথম তিন ওভারে তাঁর বল ছুঁতে পারছিলেন না আর্য দেশাই ও অভিষেক দেশাই। দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করছিলেন। একই জায়গা থেকে একটি বল ঢুকছিল ভেতরে, একটি বাইরে। এই বৈচিত্র প্রয়োগ করেই দু’টি উইকেট তুলে নেন শামি। গুজরাত ইনিংসের পঞ্চম ওভারে অভিষেকের প্যাডে আছড়ে পড়ে শামির বল। নির্দ্বিধায় আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। দ্বিতীয় উইকেট আসে দ্বিতীয় স্পেলে।
মোট তিন ওভার বল করেন দ্বিতীয় স্পেলে। ১০ রান দিয়ে তুলে নেন এক উইকেট। এ বার শিকার বাঁ-হাতি সিদ্ধার্থ দেশাই। এ বার আর ইনসুইং নয়। সিদ্ধার্থের অফ-মিডলে বল ফেলে অফস্টাম্প উড়িয়ে দেন শামি। সিমের সামান্য নড়াচড়ায় বিভ্রান্ত হন সিদ্ধার্থ। লেগস্টাম্পের দিকে বল ঠেলতে যান তিনি। ততক্ষণে শামির বল ছিটকে দিয়েছে তাঁর অফস্টাম্প। এই ডেলিভারি দেখে হাততালি দিয়ে ওঠেন জাতীয় নির্বাচক।
তৃতীয় স্পেলে নিজের ফিটনেসের প্রমাণ দিয়ে দেন ভারতীয় পেসার। শেষ ম্যাচে পাঁচ ওভারের কোনও স্পেল করতে দেখা যায়নি তাঁকে। গুজরাতের বিরুদ্ধে তৃতীয় স্পেলে তিনি ছ’ওভার টানা বল করেন। বুঝিয়ে দেন, টেস্ট খেলতে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই।
শামির তিনটি স্পেল দেখেই তাঁর সঙ্গে একান্তে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন জাতীয় নির্বাচক। কী কথা হল তাঁদের মধ্যে? শামি বলছিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত কথাবার্তা হয়েছে।’’ আরপি সিংহ কিছু বলতে চাইলেন না।
শেষ ১০ দিন ধরে মহম্মদ শামি বনাম অজিত আগরকর বিতর্ক চলছে। সেই বিতর্কই কি থামাতে এলেন আরপি সিংহ? নাকি ভারতীয় পেসারের ভবিষ্যৎ আরও এক বার ইতিবাচক দিকে এগোতে চলেছে?
দেশের হয়ে শেষ বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছিলেন শামি। তার পর থেকে ভারতীয় দলের দরজা তাঁর জন্য খোলেনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দলীপ ট্রফি খেলেছিলেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে জায়গা হয়নি তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে কি তাঁর ভাগ্য খুলবে? জাতীয় নির্বাচকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক যে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।
শামির জাতীয় দলে ফেরার অপেক্ষায় ভক্তেরাও। এ দিন ইডেনে এক শামি ভক্ত ‘ডি’ ব্লক প্রান্ত থেকে মাঠে ঢুকে শামির সঙ্গে হাত মেলাতে ছুটে যান। ‘ডি’ ব্লকের গ্যালারির গেট খোলা ছিল। তাঁকে কোনও ফেন্সিং টপকাতেও হয়নি। নিরাপত্তার অভাবে শেষে আম্পায়ারকে গিয়ে পরিস্থতি সামাল দিতে হয়। শামির সেই ভক্ত আবার ‘ডি’ ব্লক প্রান্তে গিয়ে খোলা গেট দিয়ে গ্যালারিতে চলে যান।
রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে নিরাপত্তার কড়াকড়ি হয়তো সে রকম থাকে না। কিন্তু গ্যালারির গেট খোলা থাকবে কেন? সিএবি সচিব বাবলু কোলে বলছিলেন, ‘‘ছেলেটি শামির সঙ্গে হাত মেলাতে এসেছিল। ডি ব্লকের গ্যালারিতে অনেক সময় বল যায়। তাই গেটের লক খোলা ছিল। ও সেই সুযোগে মাঠে ঢুকে যায়। দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে ওকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)