Advertisement
E-Paper

নৈশজীবন, কেচ্ছা, প্রতারণা! অ্যাশেজ়ের আগেই চাকরি যাবে ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ কলিংউডের?

ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল ক্রিকেট অধিনায়ক পল কলিংউড। বিতর্কিত চরিত্র। একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে একা হয়ে গিয়েছেন। জাতীয় দলের সহকারী কোচের চাকরিও হারাতে পারেন তিনি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:০৮
Picture of Paul Collingwood

পল কলিংউড। ছবি: এক্স।

পল কলিংউড। তাঁর নেতৃত্বেই ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। প্রাক্তন অলরাউন্ডারের প্রতি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালবাসা রয়েছে। আলাদা গুরুত্ব রয়েছে তাঁর। ২২ গজে ঘাম ঝরিয়ে অর্জিত সেই গুরুত্ব নিজেই নষ্ট করেছেন কলিংউড। পরিস্থিতি এমন করে ফেলেছেন যে, জাতীয় দলের সাজঘরে তাঁর উপস্থিতিও এখন অস্বস্তিকর।

অবসরের পর কোচিংয়ে এসেছেন কলিংউড। ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) তাঁকে জাতীয় দলের জন্য সাদা বলের ক্রিকেটের পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করে। এক সময় জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ ছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি জাতীয় দলের সহকারী কোচ। তবু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাশেজ় সিরিজ়ের আগেই চাকরি খোয়াতে পারেন কলিংউড। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ‘ডেলি মেল’ তাদের প্রতিবেদনে এমনই দাবি করেছে।

ইংল্যান্ডের সাজঘরে নিজেকে অপছন্দের করে তুলেছেন কলিংউড। কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম এবং ইসিবি কর্তারাও তাঁকে চাইছেন না। কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল? একাধিক কারণ রয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন কলিংউড। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার গ্রেম সোয়ান একটি পডকাস্টে কলিংউডের কুকীর্তি ফাঁস করে দিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন,কলিংউডের ২ ঘণ্টার একটি অডিয়ো ক্লিপ রয়েছে বহু ক্রিকেটারের কাছে। ওই ২ ঘণ্টায় কয়েক জন মহিলার সঙ্গে যৌনালাপ করেছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক। বিতর্ক তৈরি হলেও সোয়ানের দাবির বিরোধিতা করেননি কলিংউড। তার আগে ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের অন্তর্বর্তিকালীন প্রধান কোচ হিসাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে দল নিয়ে গিয়েছিলেন। সিরিজ় নির্ণায়ক তৃতীয় টেস্টে ১০ উইকেটে হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরের দিনই বার্বাডোজ়ের সমুদ্রসৈকতে এক স্বল্পবসনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গিয়েছিল কলিংউডকে। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সমাজমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর মানসিকতা নিয়ে।

ক্রিকেটজীবনেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। ২০০৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৯৬ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২ কোটি টাকা) কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। আদালতেও হেরে গিয়েছিলেন। একাধিক স্পনসর সংস্থার সঙ্গে চুক্তি খেলাপ করেছেন। প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন কেপ টাউনের একটি নৈশক্লাবে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় ১০০০ পাউন্ড (প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা) জরিমানা হয় তাঁর। এ ছাড়া কয়েক মাস আগে প্রাপ্তবয়স্কদের একটি ক্লাবের সদস্য হয়েছেন।

নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে ইংল্যান্ড ২-০ এগিয়ে থাকার পর কলিংউড তৃতীয় টেস্টের আগে বেন স্টোকসকে সম্পূর্ণ ফিট ঘোষণা করে বলেছিলেন, স্টোকস স্বাভাবিক বল করতে পারবেন। কিন্তু সেই ম্যাচে কয়েক ওভার বল করার পরই হ্যামস্ট্রিংয়ের যন্ত্রণায় মাঠ ছাড়তে হয়েছিল স্টোকসকে। নিউ জ়িল্যান্ডকে চুনকাম করার বদলে ৪২৩ রানে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। ১০ মাস আগের সেই হ্যামিলটন টেস্টের সময়ই কলিংউডকে শেষ বার সাংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে দিয়েছিল ইসিবি।

ইংল্যান্ডের কোচ ম্যাকালামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবেই পরিচিত কলিংউড। তিন বার অ্যাশেজ়জয়ী ক্রিকেটারকে সহকারী করেছিলেন। কিন্তু কলিংউডের সঙ্গে তালমিল হচ্ছে না ম্যাকালামের। সহকারী কোচ হিসাবে কলিংউডের ভূমিকায় খুশি নন ম্যাকালাম। তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ক্রিকেটারদের মধ্যেও।

শুধু জাতীয় দলের সাজঘরেই নয়, কলিংউড তাঁর সতীর্থদের কাছেও অপ্রিয় হয়ে পড়েছেন। কয়েক মাস আগে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ়জয়ী দলের ক্রিকেটারেরা লর্ডসে মিলিত হয়েছিলেন। সকলে মিলে কয়েক ঘণ্টা খাওয়া-দাওয়া সহযোগে আড্ডা দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই দলের অন্যতম সদস্য মাইকেল ভন একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন সমাজমাধ্যমে। একমাত্র কলিংউডকে সেই ছবিতে দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটমহল থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন ৪৯ বছরের প্রাক্তন ক্রিকেটার। একের পর এক বিতর্ক কলিংউডের ব্যক্তিগত জীবনেও অস্থিরতা তৈরি করেছে। স্ত্রী ভিকির সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের তিন মেয়েও মায়ের সঙ্গে চলে গিয়েছে। পারিবারিক জীবনেও একা হয়ে গিয়েছেন কলিংউড। পরিবার, বন্ধু সকলে দূরে সরে গিয়েছেন। বিতর্কিত প্রাক্তন ক্রিকেটারকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন সকলে।

গত মে মাসে জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে নটিংহ্যাম টেস্টের আগে ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি চেয়েছিলেন কলিংউড। ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের সিরিজ়েও তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন না। ইসিবি কর্তারা তাঁর উপর বিরক্ত। কলিংউডকে নিয়ে অসন্তোষের কথা ইসিবি কর্তাদের জানিয়েছেন ম্যাকালাম। ইসিবি সূত্রে খবর, কলিংউডকে সরকারি ভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাশেজ় সিরিজ়ের আগেই প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন ইসিবি কর্তারা।

ECB
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy