এশিয়া কাপ নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা থেকে ভারতের নাম তুলে নেওয়ার একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু ঘোষণা করেনি। তবে যদি ভারত প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ায় তা হলে ক্ষতি হবে পাকিস্তানের।
আইসিসি বা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের কোনও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলি সেই প্রতিযোগিতা থেকে হওয়া লাভের ভাগ পান। এশিয়া কাপ সম্প্রচারের দায়িত্ব সোনি স্পোর্টস নেটওয়ার্কের। ২০২৪ সালে আট বছরের জন্য এশিয়া কাপের সম্প্রচারস্বত্ব নিয়েছে তারা। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে স্বত্ব বাবদ ১৪৫৩ কোটি টাকা দিয়েছে তারা। পাশাপাশি স্পনসরের কাছ থেকেও টাকা পায় কাউন্সিল।
জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে যে লাভ হয় তার ২৫ শতাংশ নিজেদের কাছে রাখে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। বাকি ৭৫ শতাংশ কাউন্সিলের পাঁচ পূর্ণ সদস্য ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি দেশ ১৫ শতাংশ টাকা পায়। যদি ভারত এ বার এশিয়া কাপ না খেলে তা হলে সম্প্রচারস্বত্ব কমানোর দাবি জানাতে পারে সোনি স্পোর্টস। কারণ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না হলে আগ্রহ হারাবে তারা। পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতার বেশির ভাগ স্পনসর ভারতের। তারাও পিছিয়ে আসতে পারে। সব মিলিয়ে প্রায় ২২০ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে পাকিস্তানের। সেই কারণেই এই মুহূর্তে ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
আরও পড়ুন:
সোমবার সকালে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইতিমধ্যেই এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে ভারতীয় বোর্ড। শুধু পুরুষদের এশিয়া কাপ নয়, মহিলাদের এমার্জিং এশিয়া কাপ থেকেও নাম তুলে নেবে ভারত। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক আধিকারিক বলেন, “পাকিস্তানের এক মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট কাউন্সিলের আয়োজিত কোনও প্রতিযোগিতায় ভারত খেলবে না। এটা একটা দেশের আবেগের বিষয়। আমরা এশিয়া কাপ ও মহিলাদের এমার্জিং এশিয়া কাপ থেকে নাম তুলে নেওয়ার বিষয় মৌখিক ভাবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে জানিয়ে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এই সব প্রতিযোগিতায় যোগ দেব কি না তা-ও ভেবে দেখা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি।”
পরে ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা হয়নি। সেখানে বোর্ডের সচিব শইকীয়া বলেন, “সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় খবর হচ্ছে যে ভারত এশিয়া কাপ ও মহিলাদের এমার্জিং কাপ থেকে নাম তুলে নেবে। কিন্তু এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে কিছু জানানো হয়নি। এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা হয়নি। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য আইপিএল ও তার পরে ইংল্যান্ড সফর।” শইকীয়া আরও জানিয়েছেন, এই বিষয়ে বোর্ড কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তা ঘোষণা করা হবে।
এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা না হলেও শইকীয়া কিন্তু স্পষ্ট করে বলেননি যে ভারত এশিয়া কাপে খেলবেই। এ বার ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে এশিয়া কাপ হওয়ার কথা। সেপ্টেম্বর মাসে সেই প্রতিযোগিতা। অর্থাৎ, হাতে এখনও চার মাস রয়েছে। তার মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক কোন খাতে গড়ায় তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আইসিসিকে জানিয়েছিল, কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতাতেও যেন ভারত ও পাকিস্তানকে এক গ্রুপে রাখা না হয়। এই কথা থেকে স্পষ্ট যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে চাইছে না। তা হলে এশিয়া কাপে দু’দল কী ভাবে খেলবে? আয়োজক দেশ ভারত কি পাকিস্তানকে এই প্রতিযোগিতায় খেলতে আমন্ত্রণ জানাবে? কেন্দ্রীয় সরকারের উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাই বলা যেতে পারে, এশিয়া কাপের ভবিষ্যৎ নিয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে। তাতে সমস্যা বাড়ছে পাকিস্তানের।