রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি আইপিএলের মাঝে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন। মনে করা হয়েছিল, নতুন টেস্ট অধিনায়ক হবেন জসপ্রীত বুমরাহ। কিন্তু তিনি নিজেই এই দায়িত্ব নিতে চাননি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিসিআই) জানিয়ে দেন নিজের সিদ্ধান্ত।
রোহিত অধিনায়ক থাকার সময় টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন বুমরাহ। রোহিতের অনুপস্থিতিতে কয়েকটি টেস্টে দেশকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। গত বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতেও দু’টি টেস্টে বুমরাহই ছিলেন অধিনায়ক। স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হয়েছিল, রোহিতের অবসরের পর টেস্ট দলের অধিনায়ক হবেন তিনি। কিন্তু বিসিসিআই টেস্ট নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে শুভমন গিলের হাতে।
কেন অধিনায়ক হলেন না বুমরাহ? গুরুত্বপূর্ণ ইংল্যান্ড সিরিজ়ের আগে কেন দায়িত্ব নিতে রাজি হননি? সিরিজ় শুরুর তিন দিন আগে মুখ খুলেছেন দেশের অন্যতম সেরা জোরে বোলার। বুমরাহ জানিয়েছেন, রোহিত-কোহলির এক সঙ্গে অবসর নেওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আইপিএলের মাঝে রোহিত-কোহলি অবসর ঘোষণা করার আগেই বোর্ডের সঙ্গে নিজের চাপ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ে আমাকে কতটা চাপ নিতে হতে পারে, সেটা নিয়েই কথা হয়েছিল। আমার পিঠের চোটের চিকিৎসা যাঁরা করছিলেন, তাঁদের মতামতও নিই। কথা বলেছিলাম শল্যচিকিৎসকের সঙ্গেও। চাপ সামলানোর ব্যাপারে উনি আমাকে সব সময় পরামর্শ দেন। আমার চাপ বাড়তে পারে, এমন কিছু না করার কথা বলেছিলেন তিনি। সকলের সঙ্গে কথা বলার পর বোর্ড কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছিলাম, আমার পক্ষে নেতৃত্বের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ের সব ম্যাচ খেলা আমার পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে।’’
আপনাকে কি অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল? বুমরাহ বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, বোর্ড আমাকে অধিনায়ক করতে চেয়েছিল। প্রথমেই আমি না বলেছিলাম। কারণ এই সিদ্ধান্তটা দলের জন্য ঠিক হত না। পাঁচ টেস্টের সিরিজ়ের তিনটে ম্যাচে এক জন নেতৃত্ব দেবে, বাকি দু’টি ম্যাচে অন্য কেউ নেতৃত্ব দেবে, এটা ঠিক নয়। দলের জন্য ভাল নয়। দলের স্বার্থকেই সব সময় অগ্রাধিকার দিই। তাই নিজেই অধিনায়ক হতে চাইনি।’’
বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির শেষ টেস্টে পিঠের অস্ত্রোপচারের জায়গায় নতুন করে চোট পান বুমরাহ। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সকালেই মাঠ থেকে উঠে যান তিনি। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেই ম্যাচে আর মাঠে নামতে পারেননি বুমরাহ। রোহিত না খেলায় সেই টেস্টে তিনিই ছিলেন অধিনায়ক। চোটের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও খেলা হয়নি বুমরাহের। খেলতে পারেননি আইপিএলের প্রথম দিকের কয়েকটি ম্যাচও।
ভারতীয় দলের অধিনায়ক না হতে পারায় কোনও আক্ষেপ নেই বুমরাহের। স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘অধিনায়ক হিসাবে নয়, এক জন ক্রিকেটার হিসাবে দলকে আমি বেশি কিছু দিতে পারি। অধিনায়ক একটা পদ। দলের নেতৃত্বে স্থানীয় অনেক ক্রিকেটার থাকতে পারে। সে ভাবেই থাকতে চেয়েছি।’’
নিজের ক্রিকেটীয় ভবিষ্যতের স্বার্থেই অধিনায়ক হতে চাননি। তাঁর লক্ষ্য যত বেশি দিন সম্ভব ভারতীয় দলের হয়ে খেলা। বুমরাহ বলেছেন, ‘‘নিজেকেই সতর্ক থাকতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে অনিশ্চিত হতে পারে। আমাকে টেস্ট খেলাই ছেড়ে দিতে হবে, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই না। ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য এবং দলের স্বার্থে যেটা ভাল মনে হয়েছে, সেটাই করেছি। দল দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারবে। আমিও সাহায্য করতে পারব।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘অধিনায়ক হওয়ার আলাদা তাৎপর্য তো আছেই। এই জায়গায় পৌঁছোনোর জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য। কখনও কখনও বৃহত্তর স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হয়। নেতৃত্ব দেওয়ার চেয়ে ক্রিকেট খেলতে অনেক বেশি ভালবাসি। এক জন ক্রিকেটার হিসাবে ভারতীয় দলের জন্য আরও অবদান রাখাই আমার প্রধান লক্ষ্য। উচ্চাকাঙ্ক্ষা সকলেরই থাকে। তবু নিজেই বোর্ডকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম, অধিনায়ক হতে চাই না।’’
আরও পড়ুন:
বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার হিসাবে বিবেচিত হন বুমরাহ। পিঠে দ্বিতীয় বার চোট পাওয়ার পর তিনি এখন অনেক বেশি সতর্ক। চান না তাঁর জন্য দল সমস্যায় পড়ুক। যতটা সম্ভব দলের জন্য ততটাই দিতে চান তিনি। তাই নেতৃত্ব ছাড়া নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই বুমরাহের।