শনিবারই ঝুলন গোস্বামী এবং সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, স্মৃতি মন্ধানার রান পাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা। অপেক্ষা করালেন না স্মৃতি। পর দিন, রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বোলিংকে ছারখার করে দিয়ে একগুচ্ছ রেকর্ড করলেন।
জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে বিশ্বকাপের কঠিনতম ম্যাচটিকেই বেছে নিয়েছিলেন স্মৃতি। গত বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৬৬ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেললেন ভারতীয় দলের এই ওপেনার। তৈরি করলেন ইতিহাস। ভারতীয় ব্যাটারেরা প্রচুর বল নষ্ট করছেন বলে যে সমালোচনা হয়েছিল, রবিবার তারও জবাব দিলেন স্মৃতিরা। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ভারত তুলল ৩৩০ রান।
এক বছরে ১০০০ রান
মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসাবে এক ক্যালেন্ডার বছরে ১,০০০ রান করলেন স্মৃতি। এক ক্যালেন্ডার বছরে সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার বেলিন্দা ক্লার্কের। তিনি ১৯৯৭ সালে ১৬টি এক দিনের ম্যাচে ৯৭০ রান করেছিলেন। তারপর থেকে এই ২৮ বছরে আর কেউ ৯০০ রানের গণ্ডিও পার করতে পারেননি। ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার লরা উলভার্ট (১৮ ম্যাচে ৮৮২ রান) কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। স্মৃতি সকলকে ছাপিয়ে গেলেন।
দ্রুততম হিসেবে ৫০০০ রান
৫৮ রানের মাইলফলক স্পর্শ করার পর, মান্ধানা মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম হিসেবে ৫,০০০ রান করার কৃতিত্বও অর্জন করলেন স্মৃতি। ১১২ ইনিংসে এই মাইলফলকে পৌঁছলেন স্মৃতি। আগের রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের স্টেফানি টেলরের। ১২৯ ইনিংসে ৫,০০০ রান করেছিলেন তিনি। এরপর রয়েছেন সুজি বেটস (নিউ জ়িল্যান্ড, ১৩৬ ইনিংস)। রবিবার বিশাখাপত্তনমের মাঠে যাঁর নামে গ্যালারির উন্মোচন হল সেই মিতালি রাজ ছিলেন ভারতীয়দের মধ্যে এই তালিকায় সকলের উপরে। মিতালি ১৪৪টি ইনিংসে ৫,০০০ রান করেছিলেন। রবিবার ধারাভাষ্য দিতে দিতে দেখলেন স্মৃতির ইনিংস।
কনিষ্ঠতম হিসেবে ৫,০০০ রান
শুধু দ্রুততম হিসাবেই নয়, কনিষ্ঠতম হিসাবেও মহিলাদের এক দিনের ক্রিকেটে ৫,০০০ রান করার রেকর্ড গড়লেন ২৯ বছরের স্মৃতি।
স্মৃতির ইনিংস
স্মৃতিদের রান না পাওয়া নিয়ে বিশ্বকাপের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে মিতালি বলেছিলেন, ‘‘ওরা তাড়াহুড়ো করছে। এটা ৫০ ওভারের খেলা। একটু দেখে নিয়ে হাত খুললে ভাল।’’ কিন্তু দেখে নেওয়ার ধার ধারেননি স্মৃতি এবং তাঁর সঙ্গী ওপেনার প্রতিকা রাওয়াল।
ইনিংসের একেবারে প্রথম ওভারের শেষ বলে কিম গার্থকে বাউন্ডারি মেরে ঝড় শুরু করেন স্মৃতি। এরপর পরিকল্পনা করে প্রতিকাকে স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন কখন তাঁর আরসিবি সতীর্থ সোফি মোলিনিউ বল করতে আসবেন। অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি স্পিনার আসতেই আক্রমণের দায়িত্ব নেন স্মৃতি। মোলিনিউকেই একটি বাউন্ডারি এবং একটি ছক্কা মেরে এই বছর ১০০০ রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন তিনি।
স্মৃতির ৬৬ বলে ৮০ রানের ইনিংসে ৯টি চার এবং ৩টি ছক্কা রয়েছে। অফস্টাম্পের বাইরে মোলিনিউয়ের বলে স্লগ সুইপ করতে যান। কিন্তু বাউন্ডারি পার করতে পারেননি। ডিপ মিড উইকেটে ফোব লিচফিল্ডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
এ বারের বিশ্বকাপে স্মৃতি
ভারতীয় ওপেনারের জন্য রবিবারের আগে বিশ্বকাপ একেবারেই ভাল যায়নি। প্রথম তিনটি ম্যাচে ৫৪ রান করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ বলে ৮ রান, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩২ বলে ২৩ রান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩২ বলে ২৩ রান করে আউট হন।
২০২৫ সালে স্মৃতি
এই বছর এক দিনের ক্রিকেটে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন স্মৃতি। ১৮টি ম্যাচে ৪টি শতরান এবং ৪টি অর্ধশতরান করেছেন। সর্বোচ্চ স্কোর ১৩৫। বিশ্বকাপের ঠিক আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫০ বলে শতরান করেন। এটি এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম শতরানের ভারতীয় রেকর্ড। সেই সিরিজ়ে প্রথম ম্যাচে ৫৮ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ১১৭ রান করেন।
ভারতের ইনিংস
ভারতীয় ব্যাটারেরা প্রচুর ডট বল নষ্ট করছেন বলে সমালোচনা হয়েছিল। সেটা একেবারেই অমূলক ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ১৮০-র বেশি ডট বল (যে বলে রান হয় না) খেলেছিল ভারত। অর্থাৎ, ৫০ ওভারের ম্যাচে ৩০ ওভারের বেশি কোনও রান হয়নি।
রবিবার সেই সমালোচনার জবাব দিয়ে ভারত তুলল ৩৩০ রান। স্মৃতির ৬৬ বলে ৮০ রান ছাড়াও ভারতকে বড় রানে পৌঁছে দেওয়ার নেপথ্যে অবদান প্রায় সকলের। প্রতিকা ৯৬ বলে ৭৫ রান করেন। স্ট্রাইক রেট ৭৮.১২। খুব বড় রান করতে না পারলেও হরলিন দেওল (৪২ বলে ৩৮), হরমনপ্রীত কৌর (১৭ বলে ২২), জেমাইমা রদ্রিগেজ় (২১ বলে ৩৩), রিচা ঘোষ (২২ বলে ৩২), আমনজ্যোৎ কৌর (১২ বলে ১৬) কেউই বল নষ্ট করেননি।