আটলেটিকো গোলে দিল্লির ঝড়। রবিবার। ছবি: উত্পল সরকার
মাঠে তিনি সেই বহু আলোচিত আগুন ছড়াতে পারেননি। কিন্তু তাঁর পেপ টকেই আটকে গিয়েছেন ফিকরু-গার্সিয়ারা!
তাঁর ফুটবল-জাদু দেখতে এসে হতাশ হয়েছেন যুবভারতীর হাজার-হাজার দর্শক। তা সত্ত্বেও দিল্লি ডায়নামোসের সতীর্থরা তাঁকেই ম্যাচের নেপথ্য নায়ক বলছেন!
ম্যাচের আগে দেল পিয়েরো যে ভাবে টিমকে উজ্জীবিত করেছেন, তাতেই নাকি তেতে উঠেছিলেন পাভেল ইলিয়াস, তুলুঙ্গা, স্টিভন ডায়াসরা। নিট ফল, কলকাতার বুক থেকে আটলেটিকোর দু’পয়েন্ট কেড়ে নিয়ে ফিরছে দিল্লি।
ডায়নামোস অন্দরমহলের খবর, এ দিন খেলা শুরুর আগে দেল পিয়েরো সতীর্থদের বলেন, “কোনও ভাবেই হারা চলবে না। আটলেটিকোর জয়ের ধারা আজ আটকাতেই হবে।” হাফটাইমেও ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের সতীর্থদের জন্য তাঁর পেপ টক ছিল, “নিজেদের খেলাটা খেলে যাও। ফল পাবেই।” এমনকী দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও সতীর্থদের মাঠের মধ্যে নানা ভাবে উজ্জীবিত করে গিয়েছেন দেল পিয়েরো।
ম্যাচ শেষে তুলুঙ্গা বলছিলেন, “সত্যিই যোগ্য নেতা। ম্যাচের মধ্যেও যে ভাবে আমাদের তাতিয়েছে তাতেই কিন্তু আমরা শেষমেশ উঠে দাঁড়িয়েছিলাম।” ডায়াসও বললেন, “প্রকৃত টিমম্যান। দেল পিয়েরোর মতো ফুটবলার যখন মাঠে থেকে দলকে উজ্জীবিত করে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়।”
জুভেন্তাসের সাদা-কালো জার্সিতে গায়ে এ রকম কত অগ্নিপরীক্ষাতেই তো দলকে সসম্মানে উত্তীর্ণ করেছেন দেল পিয়েরো। ২০০৬-এ ম্যাচ গড়াপেটা বিতর্কে জড়িয়ে জুভেন্তাস দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে গিয়েছিল। সেই সময় দলের তারকা ফুটবলাররা প্রায় সবাই সেরি এ খেলার তাগিদে জুভেন্তাস ছেড়ে চলে গেলেও বুফোঁর সঙ্গে থেকে গিয়েছিলেন একমাত্র দেল পিয়েরো। এবং তাঁর অধিনায়কত্বেই এক বছরের মধ্যেই সেরি এ-তে ফিরে এসেছিল জুভেন্তাস। ইতালি দলে তোত্তিকে নিজের দশ নম্বর জার্সি ছেড়ে দিতে দ্বিতীয় বার ভাবেননি। তোত্তি তখন সেরা ফর্মে। দেল পিয়েরোর সময় তখন ভাল যাচ্ছিল না। তাই দশ নম্বর জার্সি তোত্তিকে দিয়ে নিজে সাত নম্বর পরে খেলেছিলেন। দিল্লি ডায়নামোসের জার্সি গায়েও বদলাননি টিমম্যান দেল পিয়েরো। তাই এক ভারতীয় টিমেও দেল পিয়েরোর সতীর্থরা তাঁকে ‘ফেনোমেনো ভেরো’ বলে ডাকছেন! যে ডাকনামে তিনি জুভেন্তাস বা ইতালি দলে বিখ্যাত ছিলেন।
উইং ধরে দেল পিয়েরোর সেই পরিচিত দৌড় এ দিন দেখা যায়নি। দেখা যায়নি তাঁর নিখুঁত সেন্টার বা শটগুলো। এমনকী আটলেটিকোর ডেঞ্জিলের সঙ্গে এক বার ঝামেলাতেও জড়িয়ে পড়লেন ছ’বার সেরি এ-তে ভদ্র ফুটবলার-এর ট্রফি জেতা দেল পিয়েরো। দেখা গেল রেফারির সিদ্ধান্তে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করতেও!
এমনকী বলে দিলেন, “রেফারিং নিয়ে কোনও দিনই কিছু বলি না। তাই এ দিন আমাকে বক্সে ফাউল করা সত্ত্বেও কেন পেনাল্টি পেলাম না তা নিয়েও কিছু বলতে চাই না। তবে আমাকে হলুদ কার্ড দেখানোটা বাড়াবাড়ি সিদ্ধান্ত। জীবনে কখনও প্লে অ্যাকটিং করিনি। ওটা কী করে হলুদ কার্ড হয়?”
এ হেন দেল পিয়েরোকেও কিন্তু একটি বার সামনে থেকে দেখার প্রত্যাশায় ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক পরেও যুবভারতীর বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেল অগণিত ভক্তকে।
তিনি যে আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো!
তাই টিম বাসে ওঠার আগে যেন সেই চিরপরিচিত দেল পিয়েরো। “এক পয়েন্ট পেয়েই সন্তুষ্ট। দল ভাল খেলেছে। আমি খুশি।” একেবারে যোগ্য ‘টিমম্যান’সুলভ মন্তব্য কিংবদন্তি ইতালীয় বিশ্বকাপারের। বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy