Advertisement
১১ মে ২০২৪
২০০৭ কাপ বিপর্যয় নিয়ে ধোনির ‘হেলিকপ্টার’

দেশে ফিরে নিজেদের খুনি বা জঙ্গি মনে হয়েছিল

তিনি চেয়েছিলেন, বায়োপিক তাঁর জীবনটা ধরুক। জীবনের পথটা তুলে ধরুক সবার কাছে। তাঁকে নয়। তিনি চেয়েছিলেন কেরিয়ারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁকে যে যুদ্ধটা করতে হয়েছে, বায়োপিক সেটা বলুক। তাঁকে অযথা গৌরবান্বিত না করে।

ধোনি ওয়ান। ধোনি টু। পর্দার এমএসের সামনে বাস্তবের ক্যাপ্টেন কুল। নিউ ইয়র্কে। ছবি: পিটিআই।

ধোনি ওয়ান। ধোনি টু। পর্দার এমএসের সামনে বাস্তবের ক্যাপ্টেন কুল। নিউ ইয়র্কে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

তিনি চেয়েছিলেন, বায়োপিক তাঁর জীবনটা ধরুক। জীবনের পথটা তুলে ধরুক সবার কাছে। তাঁকে নয়। তিনি চেয়েছিলেন কেরিয়ারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁকে যে যুদ্ধটা করতে হয়েছে, বায়োপিক সেটা বলুক। তাঁকে অযথা গৌরবান্বিত না করে।

বায়োপিকটা নাকি বেশ ভালও লেগেছে তাঁর। দেখতে দেখতে ছোটবেলা আবার মনে পড়ে গিয়েছে, ফিরে এসেছে স্কুলের দিনগুলো, ক্রিকেট মাঠে শৈশবের সময়টুকু। ক্রিকেট-পৃথিবী বলে, অদ্ভুত লোক তিনি। আবেগ তাঁর মধ্যে দেখা যায় না মোটে। সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছে যেমন নির্লিপ্ত থাকতে পারেন, তা বদলায় না ব্যর্থতার পাকদণ্ডী বেয়ে নামার সময়। চরম অন্ধকার সময়েও না।

লোকে বোধহয় ভুল বলে। ক্রিকেট-পৃথিবীও বোধহয় ভুল জানে। সত্যিটা হল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আবেগে আক্রান্ত হন। ছোটবেলাকে সিনেমার পর্দায় চোখের সামনে ফিরে আসতে দেখলে নির্বাক হয়ে যান। হাঁটতে থাকেন শৈশব থেকে কৈশোরে, কৈশোর থেকে যৌবনে। সব যে সুখস্মৃতি, তা নয়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি রক্তাক্তও হন। বায়োপিক নিয়ে বলতে বসে মনে পড়ে যায় কালান্তক ২০০৭। ক্যারিবিয়ান বিশ্বকাপ।

দেশে ফিরে সে দিনের এমএস ধোনির তো মনে হয়েছিল, বোধহয় কোনও অপরাধ করে তাঁরা ফিরছেন। কাউকে খুন করে, বা জঙ্গিহানা ঘটিয়ে!

ম্যানহাটানের ফক্স বিল্ডিংয়ে এ দিন যে সাংবাদিক সম্মেলন ছিল, তা আদতে তাঁর বায়োপিক ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’-র প্রাক্-রিলিজের। কিন্তু সেখানে যে এত খোলামেলা ভারত অধিনায়ককে পাওয়া যেতে পারে, ভাবা যায়নি। নিজের জীবন নিয়ে এত অকপট শেষ কবে হয়েছেন ধোনি? কবে শেষ তাঁকে এত খোলাখুলি ভাবে বলতে শোনা গিয়েছে যন্ত্রণাবিদ্ধ পর্বের কথা?

বাংলাদেশের কাছে হারের সেই ছবি।

ন’বছর আগে নয়াদিল্লি নেমে পুলিশ ভ্যানটা ভোলেননি এখনও। ক্যারিবিয়ানে কাপ-স্বপ্নের প্রাসাদ চূর্ণ হওয়ার পর দেশে ফেরার দিনটা। প্রথম রাউন্ডেই বিদায়ের পর দেশে ফিরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়েছিল গোটা টিমকে। ‘‘দিল্লিতে নামলাম যখন, প্রচুর মিডিয়া ছিল। নামার পর মনে আছে, আমাদের পুলিশ ভ্যানে করে বেরোতে হল। বিকেল বা রাত হবে। বীরু (বীরেন্দ্র সহবাগ) পাজির পাশে বসেছিলাম আমি,’’ বলে ফেলেছেন ধোনি। ‘‘গাড়ির স্পিডটাও মনে আছে। ঘণ্টায় ষাট বা সত্তর কিলোমিটার হবে। ভারতের রাস্তায় বেশ ভাল স্পিড। সরু রাস্তাঘাট ধরলে তো আরওই। মিডিয়া ঠিক পিছু পিছু তাড়া করে আসছিল। ক্যামেরা নিয়ে, আলো জ্বালিয়ে। দেখে মনে হয়েছিল, আমরা যেন বড় কোনও অপরাধ করেছি। আমরা খুনি বা জঙ্গি গোছের কেউ!’’

ধোনি বলতে থাকেন, তার পর তাঁরা একটা পুলিশ স্টেশনে ঢোকেন। মিনিট কুড়ি সেখানে থেকে আবার নিজেদের গাড়িতে ফিরে আসেন। ‘‘ওই ঘটনাটা আমার জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। তার পর নিজের আগ্রাসনকে ব্যবহার করতাম নিজেকে ভাল ক্রিকেটারের পাশাপাশি ভাল মানুষও করে তুলতে। কখনও কখনও লোকে ভাবে, আমরা বোধহয় যথেষ্ট আবেগপ্রবণ নই। কিন্তু আমার বরাবর মনে হয়, ক্রীড়াবিদ হিসেবে আপনাকে সব কিছু সামলানোর শক্তি রাখতে হবে। আর সেটা রাখতে হবে ভেতরে ভেতরে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে কেঁদে ফেলা বা মাঠে বাড়তি আবেগ দেখানো— ও সবে কী হয়?’’

জীবনে এমন ওঠা-নামা দেখেছেন বলে কি না কে জানে, পরিচালক নীরজ পাণ্ডেকে প্রথমেই বলে দিয়েছিলেন, বায়োপিকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে বেশি ঝকঝকে ভাবে পরিবেশন করার কোনও প্রয়োজন নেই! ‘‘বলেছিলাম, সিনেমাটা হবে পেশাদার ক্রীড়াবিদের জীবনযাত্রার। সেটাই তো হওয়া উচিত,’’ বলে ভারত অধিনায়ক আরও জুড়ে দেন, ‘‘গল্পটা খুব সহজ। আর সেটাই তার সৌন্দর্য। প্রথম প্রথম এটা নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু একবার পুরো ব্যাপারটার মধ্যে ঢুকে পড়ার পর আর চিন্তা ছিল না। নীরজকে আমি শুধু নিজের গল্পটা বলছিলাম।’’ প্রাক-এডিটিং সিনেমাটা দেখার পর অপার শূন্যতায় ডুবে গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুল। ‘‘সব আবার নতুন করে ফিরে আসছিল আসলে। কিছুক্ষণের জন্য অতীতে ফিরে গিয়ে আমাকে নিয়ে সবাই কী ভাবত, জানতে পারাটা বেশ সুন্দর। বাবা মা-র সঙ্গে কখনও ক্রিকেট নিয়ে কথা বলিনি। ওঁরা আমাকে নিয়ে কী ভাবতেন, তার আঁচ পেয়ে ভাল লেগেছিল।’’

ভাল তো দেশেরও লাগছে। ক্রিকেটের মহানায়ককে নতুন ভাবে পেয়ে। রিয়েল লাইফের পর এমন রিল লাইফে পেয়ে। ইউটিউবে তাঁর সিনেমার ট্রেলার দেখতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে লক্ষ-লক্ষ, প্রতীক্ষা চলছে রিলিজের। ধোনির আশেপাশেও কি কম কিছু হচ্ছে? সিনেমার প্রযোজক ধোনির বন্ধু কাম বিজনেস পার্টনার অরুণ পাণ্ডে বলে দিয়েছেন, কী ভাবে এক শিশুর জীবনে ধোনি-প্রভাব দেখে ভারত অধিনায়কের কাহিনি নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে হয়েছিল তাঁর। সিনেমায় ধোনি-চরিত্রের অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত বলে দিয়েছেন, ধোনি নিজে অভিনয় করলে তাঁদের নাকি প্ল্যান বি ভাবতে হত! ব্যতিক্রমী কিছুর আন্দাজ মিডিয়াও পেয়েছিল। ম্যানহাটানের ফক্স বিল্ডিংয়ের বাইরে হাসি-হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ধোনি সমর্থককে দেখে, পরিচিত ‘৭’ নম্বর ভারত জার্সির বদলে ধুসর কালো স্যুট-রুপোলি টাইয়ের সস্ত্রীক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে প্রেস কনফারেন্স রুমে ঢুকতে দেখে মিডিয়ারও মনে হয়েছিল, আজ বোধহয় একটু অন্য রকম সব হবে।

শুধু একটা ব্যাপার তারা বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারেনি, বায়োপিক রিলিজের আগে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নিজেই প্রচুর ‘আনটোল্ড স্টোরি’ দিয়ে যাবেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahendra Singh Dhoni Helicopter Shot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE