রায়ডু ও অক্ষর: সুযোগের অপেক্ষায়।
দীর্ঘ চুয়াল্লিশ দিনের বিশ্বকাপ অ্যাডভেঞ্চার শেষ। এত যুক্তি-তর্ক, এত আলোচনা, এত বিশ্লেষণ চার বছরের মতো আবার সব বন্ধ। জানি না আপনাদের মনে হচ্ছে কি না, আমার কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আনন্দবাজারে বিশ্বকাপ নিয়ে এটা আমার শেষ কলাম। আমার দেশ বিশ্বকাপে কেমন করল, সেটাই বোধহয় এই কলমটার বিষয় হওয়া উচিত।
জানি দেশবাসী এখনও হতাশার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু ভেবে দেখুন, ভারতের কাছ থেকে এ বার এত ভাল পারফরম্যান্স কি আশা করা গিয়েছিল? বিশ্বকাপের আগের সময়টা একটু মনে করুন। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ বিপর্যয়, ত্রিদেশীয় ওয়ান ডে সিরিজেও জয়ের মুখ দেখেনি টিম ইন্ডিয়া। তাই আমি তো বলব, সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের পারফরম্যান্স। টিমটাকে এত আত্মবিশ্বাসী বিশ্বকাপের আগে অনেক দিন দেখিনি। প্রথমেই পাকিস্তানকে ও ভাবে হারিয়ে দেওয়া, তার পরপরই অন্যতম ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একপেশে জয় এর চেয়ে ভাল শুরু আর কী হতে পারত! ওই ম্যাচদুটোই গোটা বিশ্বকাপে ভারতের পারফরম্যান্সের রং ঠিক করে দিয়েছিল। তার পর আরও পাঁচটা জয়। গত বৃহস্পতিবার যদি শিখর ধবন আর একটু মন দিয়ে খেলত, তা হলে কিন্তু সেমিফাইনালটাও আমরা জিতে যেতে পারতাম। যাই হোক, এ সব ব্যাপার এখন অতীত। কী হতে পারত, সেটা নিয়ে না ভেবে বরং আসুন, ভারতের পারফরম্যান্সের কয়েকটা প্লাস পয়েন্ট আর মাইনাস পয়েন্ট নিয়ে একটু বলি।
২০১৫ বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় পাওনা হল, ক্রিকেটের সব বিভাগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। প্রায় সব ব্যাটসম্যানই বড় স্কোর পেয়েছে। বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, শিখর, রোহিত শর্মা, ধোনি নিজে। এক রবীন্দ্র জাডেজাকে বাদ দিলে কাউকে দেখেই মনে হয়নি ছন্দে নেই। বোলারদেরও দেখলাম অস্ট্রেলীয় গ্রীষ্মের সব ব্যর্থতা ভুলে নতুন এনার্জি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে। উমেশ যাদব, মহম্মদ শামিরা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে বল করেছে। আর কী ফিল্ডিং! ভারতীয় জার্সির এই ফিল্ডিং কোনও দিন দেখব, বিশ্বাস করুন ভাবতে পারিনি।
ক্রিকেট মাঠে নেগেটিভ কিছু না থাকলেও টিম ম্যানেজমেন্টের একটা ব্যাপার আমাকে খুব হতাশ করেছে। সেটা হল, রিজার্ভ প্লেয়ারদের একদম না খেলানো। আমিরশাহি ম্যাচ শামি চোটের জন্য খেলতে পারেনি বলে বাধ্য হয়ে ভুবনেশ্বর কুমারকে ওটায় খেলাতে হয়েছিল। কিন্তু ওই একটা ম্যাচ বাদ দিলে রিজার্ভ প্লেয়ারদের খেলানোর সাহসটাই দেখাতে পারল না টিম ম্যানেজমেন্ট। অক্ষর পটেল, অম্বাতি রায়ডুরা তো পুরো বিশ্বকাপ বসে বসেই কাটিয়ে দিল।
অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়াকে দেখুন। জর্জ বেইলি, জেভিয়ার ডোহার্টিদের পরিস্থিতি বুঝে একটা করে ম্যাচ ঠিক খেলিয়েছে। এই যে মাইকেল ক্লার্ক ওয়ান ডে থেকে অবসর নিল, ওর জায়গাটা কিন্তু মোটেই খালি পড়ে থাকবে না। ওদের সিস্টেমটা এত ভাল যে, কোনও প্লেয়ার অবসর নিলে বা ছিটকে গেলে টিম সে ভাবে সমস্যায় পড়ে না। কারণ ওদের হাতে একাধিক বিকল্প সব সময় মজুত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনও বলা যায় নাকি যে, আমার হাতে কোনও বিকল্প নেই?
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের এই ব্যাপারটা আমি মানতে পারি না। গত কয়েক বছরের কথা ভাবুন। সেই এক টিম খেলিয়ে যাচ্ছে নির্বাচকরা। সচিন-দ্রাবিড়রা অবসর নেওয়ার পর ক’টা নতুন ছেলে এসেছে টিমে? এই যে অক্ষর পটেলদের কথা বলছিলাম, এদের টিমে নিচ্ছ খুব ভাল। কিন্তু ম্যাচ না খেলালে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার আত্মবিশ্বাস ওরা পাবে কোথা থেকে? ব্যাপারটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, ইন্ডিয়া টিমটা একটা ছোট ক্লাব হয়ে গিয়েছে। যে ক্লাব নতুন সদস্য নিতে চায় না বা নতুন কাউকে নেওয়ার সাহসটা তাদের নেই। মানছি সেট টিম ভাঙতে চায় না অনেকেই। কিন্তু যে ম্যাচগুলোর কোনও গুরুত্ব ছিল না, সেগুলোয় কি নতুন ছেলেগুলোকে দেখে নেওয়া যেত না? বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে পারলে ওদের আত্মবিশ্বাসটা কত বাড়ত ভাবুন। এ ভাবেই যদি চলে তা হলে টিমটার তো ভবিষ্যত্ই তৈরি হবে না। যাক গে, সব শেষে আসি ধোনির কথায়। এই বিশ্বকাপে ওর নেতৃত্বে আমি মুগ্ধ! একই সঙ্গে খুব গর্বও হচ্ছে। কারণ এই ছেলেটাকে যারা অধিনায়ক করেছিল, সেই নির্বাচক প্যানেলের প্রধান ছিলাম আমি। কিন্তু একটা সত্যি কথা বলব? আমার মনে হয় টেস্ট থেকে অবসরটা না নিলেই পারত ধোনি। ওর ফিটনেস এখনও দুর্দান্ত। টেস্ট না খেলার কোনও কারণ ওর ছিল না। শুধু সেটা নয়। এই যে টেস্টে অধিনায়ক হবে বিরাট, আবার ওয়ান ডে খেলবে ধোনির নেতৃত্বে, এটা কি খুব ভাল হবে? কে জানে, আমার তো বেশ অস্বস্তিই লাগছে।
দুঃখিত, আমার শেষ কলামটা একটু সিরিয়াস হয়ে গেল। তবে আশা করব আমার আশঙ্কাটা স্রেফ আশঙ্কাই থাকবে। বাস্তব হয়ে দাঁড়াবে না। আর এটাও আশা করব যে, ভবিষ্যতে আবার আপনাদের সঙ্গে এ রকম আড্ডায় বসতে পারব। এই যাত্রাটা আমি যতটা উপভোগ করেছি, ততটা যদি আপনারাও করে থাকেন তা হলে খুব ভাল লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy