Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sakshi Malik

প্লেনে চড়ার স্বপ্নই এনে দিল অলিম্পিক্সের পদক

বাড়ির বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকতেন আকাশের দিকে। কখন একটা প্লেন উড়ে যাবে মেঘ কেটে। স্বপ্ন দেখতেন প্লেনে উঠে কোথাও পাড়ি দেবেন। সেই ছোট্টবেলা থেকেই। কিন্তু কোনও কারণে মাথায় ঢুকে গিয়েছিল প্লেনে চড়তে হলে খেলার ফিল্ডটাই বেছে নিতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ১৯:৪৬
Share: Save:

বাড়ির বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকতেন আকাশের দিকে। কখন একটা প্লেন উড়ে যাবে মেঘ কেটে। স্বপ্ন দেখতেন প্লেনে উঠে কোথাও পাড়ি দেবেন।

সেই ছোট্টবেলা থেকেই। কিন্তু কোনও কারণে মাথায় ঢুকে গিয়েছিল প্লেনে চড়তে হলে খেলার ফিল্ডটাই বেছে নিতে হবে। প্লেয়াররাই প্লেনে করে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান। সেখান থেকেই ক্রীড়া জগতে ঢুকে পড়া। ঢুকে পড়া স্বপ্নের জগতে। সেই স্বপ্নকে সঙ্গেই নিয়েই এতদিন ধরে এগিয়ে চলা। পৌঁছে যাওয়া অলিম্পিক্সের আসরে। অনেককে নিয়েই শুরু থেকে মাতামাতি থাকলেও সাক্ষীকে খুব একটা কেউ হিসেবের মধ্যে রাখেননি। ভেবেছিলেন শুধু সাক্ষী। হরিয়ানার গ্রাম থেকে মুখ বুজে তাই লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সেই লড়াই শেষ হল ভারতীয় ক্রীড়ার ইতিহাসে ঢুকে পড়ে। ২০১৬ অলিম্পিক্সে ভারতকে প্রথম পদক তো এনেই দিলেন, সঙ্গে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে কুস্তিতে নিজের নামে পদক লিখে নিলেন।

রোহতকের কাছে মোখরা গ্রামে বসে যখন একটা ছোট্ট মেয়ে শুধু প্লেনে চড়ার জন্য খেলার কথা ভাবছেন তখন সাক্ষী প্রথমে বেছে নিয়েছিলেন কবাডিকে। গ্রামের আর বাকি মেয়েদের মতো। কখনও সখনও ক্রিকেট ব্যাটও তুলে নিতেন হাতে। কিন্তু কিছুদিন পরেই পছন্দটা বদলাতে থাকে। আসক্ত হয়ে পড়েন কুস্তিতে। প্রথম বাউট জয়ের পর কুস্তির ভূত চেপে বসে মাথায়। কিন্তু অলিম্পিক্স কী জিনিস জানতেন না সাক্ষী। পদক জিতে সাক্ষী সেটা খোলসাই করলেন, ‘‘আমি জানতাম না অলিম্পিক্স কী, আমি ক্রীড়াবিদ হতে চেয়েছিলাম প্লেনে ওঠার জন্য। যদি আমি দেশের হয়ে খেলতে যাই তা হলে প্লেনে ওঠা যাবে।’’

সাক্ষীর বড় ভাই সচিন অবশ্য চাইতেন সাক্ষী ক্রিকেট খেলুক। কিন্তু পরিবার কিছু চাপিয়ে দেয়নি। ‘‘বাবা-মা কখনও কিছু চাপিয়ে দেননি। কুস্তিতেও আমাকে সমর্থন করেছিলেন। ব্রোঞ্জ জেতার পর যখন ফোন করেছিলাম তখন কেউ কথা বলার অবস্থায় ছিল না। আনন্দে, আবেগে গলা বুজে আসছিল। কেঁদে ফেলেছিলেন।’’ সাক্ষী বলেছিলেন, এটা উৎসব করার সময়। তার আগেই কোচের কাঁধে চেপে প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছিলেন ২৩ বছরের সাক্ষী। যেন আকাশকে সাক্ষী রেখে বুঝিয়ে দিলেন, ‘আমিও পারি’। গায়ে তখন ভারতের তেরঙা। বসে পড়েছিলেন হাঁটু গেড়ে। ক্যারিওকা এরিনা টুয়ের গ্যালারি তখন হাততালিতে ফেটে পড়ছে। দাঁড়িয়ে সকলে।

এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়া সাক্ষীর জন্য। এ ভাবেই উদ্‌যাপন করবেন ভেবে রেখেছিলেন। ‘‘পদক না জিতে দেশে ফিরতে চাইনি। আমি একদম চাপ নিয়ে খেলতে নামিনি। হেরে গেলে কী হত? কিন্তু যদি জিততে পারি তা হলে কী হতে পারে সেটাই ভেবেছিলাম। আমি জানি এখন আমার জীবনটা বদলে যাবে। এখন বুঝতে পারছি না, কিন্তু দেশে ফিরলে বুঝতে পারব আমার দিন-রাত কী ভাবে বদলে গিয়েছে।’’ বুলগেরিয়া ও স্পেনের শিবিরে খুব অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল সাক্ষীর। ওখানে বাকি যাঁরা ছিলেন সকলেই ছিলেন ফোগত। সাক্ষী একা ছিলেন মালিক। তবে সেই আর এক ফোগতকে দেখেই অলিম্পিক্সের স্বপ্ন দেখা শুরু। তিনি গীতা ফোগত। মে মাসেই অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন সাক্ষী। তখন থেকেই লক্ষ্য ছিল পোডিয়াম। সাক্ষীর প্রতিদিনের রুটিনে ছিল ৫০০ সিট আপ। কিন্তু আলু পরঠা আর কারি-ভাত খাওয়াটা ছাড়তে খুব কষ্ট হয়েছিল। বলছিলেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে কোনও দিন এগুলো খাইনি। ১২ বছরের লড়াইকে সাফল্য দিতে এটা দরকার ছিল।’’ এখন টোকিওর দিকে তাকিয়ে সাক্ষী।

আরও খবর

কুস্তিতে মাত রিও, দেশকে প্রথম পদক সাক্ষী মালিকের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shakshi Malik Rio Olympics Wrestling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE