Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ডব্লিউপি নাইন ঝড়ে বিধ্বস্ত মুম্বই

বাগান সমর্থকরা কি তাঁকে এ বার ‘ঘর শত্রু বিভীষণ’ বলতে শুরু করবেন! সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে একসময় খেলে গিয়েছেন কলকাতায়। কিন্তু চলতি মরসুমে নিজের পুরনো টিম ভুলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মুখের হাসিই তিনি চওড়া করেছেন।

গোলের পরে প্লাজা। বুধবার বারাসত স্টেডিয়ামে। -শঙ্কর নাগ দাস

গোলের পরে প্লাজা। বুধবার বারাসত স্টেডিয়ামে। -শঙ্কর নাগ দাস

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৫
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল-২ : মুম্বই এফসি-০

(প্লাজা-২)

বাগান সমর্থকরা কি তাঁকে এ বার ‘ঘর শত্রু বিভীষণ’ বলতে শুরু করবেন!

সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে একসময় খেলে গিয়েছেন কলকাতায়। কিন্তু চলতি মরসুমে নিজের পুরনো টিম ভুলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মুখের হাসিই তিনি চওড়া করেছেন। বুধবার বারাসতে তাঁর ‘উপহার’ দেওয়া ডব্লিউপি-নাইন ওরফে উইলিস প্লাজার হাত ধরে দীর্ঘ তিন বছর পর লাল-হলুদের বুকে গেঁথে বসা মুম্বই এফসি নামের কাঁটা উপরে ফেলল মর্গ্যান ব্রিগেড।

সরস্বতী পুজোর রাতে বারাসতের গ্যালারিতে তাই কোনও কোনও ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে দেখা গেল উইলিস প্লাজার মেন্টর সেই স্টিভন আবারোয়িকে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়ির পথ ধরতে। তাঁর পরামর্শেই তো প্লাজা লাল-হলুদে ডানা মেলার সুযোগ পাওয়া।

আর তিনি স্টিভন আবারোয়ি ততক্ষণে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে গোটা গোটা হরফে তাঁর প্রিয় ডব্লিউপি-নাইন সম্পর্কে লিখে ফেলেছেন শংসাপত্র। আই লাভ দিজ বয় কলড উইলিস ডিওন প্লাজা।

মাথায় যেন টনটন বরফ চাপানো। ঠোটের কোণ সব সময় ঝুলছে বিনয়ী হাসিটা। আর ম্যাচের সময় এক বার বক্সের ভিতর ঢুকে পড়লে তেকাঠিকে নিশানায় রাখেন পাখির চোখের মতো।

চুম্বকে এটাই লাল-হলুদের নয়া হার্টথ্রব ডব্লিউপি-নাইন ওরফে উইলিস প্লাজা। জামশিদ, মজিদ, চিমা, এমেকা, ডগলাস, মাইক ওকোরো, টোলগে ওজবের পর এ বারের আই লিগে তিনিই টোকিও থেকে টরোন্টোর তামাম লাল-হলুদ সমর্থকদের ভালবাসা, আশা, ভরসা—সবকিছু।

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে কেন তিনি সুযোগ তৈরি করলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোল করতে পারছেন না তা জানতে চাওয়া হলে ঈষৎ রেগে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আসা ডব্লিউ পি নাইন কিন্তু এক বারও মেজাজ হারাননি। বরং তিনি বলে যান, ‘‘আমি গোল করতে পারছি কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল কাজটা হল টিমের কাজে লাগতে পারছি কি না। আমার পাস থেকে গোল তো হচ্ছে। আমি তাতেই খুশি।’’

শাহরুখ খানের ভক্ত ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর স্ট্রাইকার মঙ্গলবার দুপুরেই ‘রইস’ দেখে বাড়ি ফিরেছিলেন। বুধবার লাল-হলুদের সাম্প্রতিক সময়ের গাঁট মুম্বই এফসি-র বিরুদ্ধে তাতেই কি জোশ পেয়ে গেলেন লাল-হলুদ জার্সি গায়ে নিজের গোলের সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়ার। এ দিন ম্যাচের শুরুতেই যে দু’টো গোল তিনি করলেন তা চোখের সুখ বাড়ায় বই কি!

প্রথম গোলের সময় ওভারল্যাপে আসা ইস্টবেঙ্গল রাইট ব্যাক রাহুল ভেকের বক্সে ভাসিয়ে দেওয়া বল ধরে শালুম পিরেসকে শান্ত মাথায় ড্রিবল করে সেটা গোলে রাখলেন। আর দ্বিতীয় গোলের সময় বাজপাখির মতো লালরিন্দিকার বাড়ানো এরিয়াল বলটা রিসিভ করে তা মুম্বইয়ের দুই ডিফেন্ডারকে ছোট্ট টোকায় কাটিয়ে করলেন এ বারের আই লিগে তাঁর চতুর্থ গোলটা।

হেডটা তেমন জোরালো নয়। কিন্তু গতি, ড্রিবল, দু’তিনজনকে টেনে বেরোনো, উইদাউট দ্য বল জায়গা নেওয়া সবই ঝকমকে। বক্সের মধ্যে চকিতে শাফলিং— এ দিনের দু’টো গোলে তার ছাপ স্পষ্ট।

যদিও বাড়ি যাওয়ার সময় এ দিনের জোড়া গোলের নায়ক বিনয়ের অবতারের মতো বলেও গেলেন, ‘‘আমার কাজই তো গোল করা। আর সেটাই করলাম। আর এটা দলগত সাফল্য। আমাদের টিমে ডিকা, নিখিল, রবিনদের মতো অনেক ভাল প্লেয়ার রয়েছে।’’

মুম্বই এফসি কোচ সন্তোষ কাশ্যপ আই লিগের অন্য দলগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিলেও কলকাতার দল দেখলেই আল্ট্রা ডিফেন্সিভ হয়ে পড়েন। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু তাঁর সেই স্ট্র্যাটেজির বিষ দাঁত এ দিন শুরুতেই ভেঙ্গে দেন প্লাজাই। হতাশ মুম্বই কোচ তাই বলে গেলেন, ‘‘অভিজ্ঞতার কাছে হেরে গেলাম।’’

দু’গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর থই সিংহদের সামনে রেখে মুম্বই এফসি কোচ এরিয়াল বলের রণকৌশল সাজিয়েছিলেন। কিন্তু বুকেনিয়া, গুরবিন্দরদের উচ্চতার সামনে তা আর হালে পানি পায়নি।

নিট ফল, সরস্বতী পুজোর দিনে ট্রেভর মর্গ্যানের টিমের টানা পঞ্চম ম্যাচে জয়।

কিন্তু এ সবই প্রথমার্ধে। বিরতির পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিট দেখার পর লাল-হলুদ সমর্থকদের বদলে উল্টে মুখের হাসি চওড়া হতে পারে সনি নর্ডি, কাতসুমিদের। এই সময় হঠাৎই রাহুল আর নারায়ণের ওভারল্যাপ বন্ধ। আর এই সুযোগেই আক্রমণাত্মক ফুটবলে মুম্বইয়ের ম্যাচে ফেরা। মেহতাবও এই চাপের সামনে রক্ষণ বাঁচাতে দুই স্টপারের মাঝে চলে গিয়েছিলেন। ফলে মিডল করিডরকে গড়ের মাঠের মতো ব্যবহার করছিলেন ডেনসিল থিওবাল্ডরা।

আর সেই চাপের সামনে গুরবিন্দরের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ওয়েডসনের ডিস্ট্রিবিউশনও তথৈবচ। একে তিনি কখন বল ছাড়বেন তা জানেন না। উল্টে সব বল ফাইনাল পাস বাড়াতে গিয়ে একের পর এক মিসপাস। বাধ্য হয়ে মর্গ্যান শেষ পর্যন্ত তাঁকে তুলে রোমিওকে নামিয়ে পাল্টা চাপ দেওয়ার ফের পিছু হঠে মুম্বই। ইস্টবেঙ্গল কোচ এ দিন ম্যাচের পরে বলে গেলেন, ‘‘ক্লান্তি সরিয়ে দু’গোলে জয় প্লাস ক্লিনশিট। ভালই তো খেলল ছেলেরা।’’ তিনি বুঝে গিয়েছেন এ বারের আই লিগে তাঁর টিমে ম্যাজিক দেখিয়ে ম্যাচ জেতানোর একজন দেবদূত এসেছেন। তিনি উইলিস প্লাজা। যাঁর উপর ভরসা করা যায়।

লাল-হলুদ কোচ ছ’ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট পেয়ে লিগ শীর্ষে থেকে স্বস্তি পেতেই পারেন। কিন্তু রক্ষণ ও মাঝমাঠ নিয়ে বেশ কিছু মেরামত দরকার। না হলে রোজ রোজ কিন্তু বিপক্ষ দ্বিতীয়ার্ধে ঘাড়ে চেপে বসে হেরে নাও ফিরতে পারে। ভাগ্য এক দিন বিপক্ষে গেলে আই লিগের স্বপ্ন ধাক্কা খেতেই পারে মর্গ্যান ব্রিগেডে।

ইস্টবেঙ্গল: রেহনেশ, রাহুল, গুরবিন্দর, বুকেনিয়া, নারায়ণ, মেহতাব, নিখিল (রবার্ট), ওয়েডসন (রোমিও), লালরিন্দিকা, রবিন (হাওকিপ), প্লাজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE