Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ছয়ের স্বপ্নপূরণের প্রথম পদক্ষেপেই ইস্টবেঙ্গলের চ্যালেঞ্জ বদলার বেড়া

বিরল নজির স্পর্শের স্বপ্ন বনাম বদলার আগুন! এক দিকে গৌতম, সুভাষ সুরজিৎদের মতো টানা ছ’বার লিগ জিতে ইতিহাসের পাতায় নতুন করে ঢুকে পড়ার লাল-হলুদ জোশ। অন্য দিকে এমন সম্ভাব্য ঐতিহাসিক মরসুমে ইস্টবেঙ্গলে ঠাঁই না হওয়ার যন্ত্রণা মাঠে উগরে দেওয়ার তাগিদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০৪:১৪
Share: Save:

বিরল নজির স্পর্শের স্বপ্ন বনাম বদলার আগুন!

এক দিকে গৌতম, সুভাষ সুরজিৎদের মতো টানা ছ’বার লিগ জিতে ইতিহাসের পাতায় নতুন করে ঢুকে পড়ার লাল-হলুদ জোশ। অন্য দিকে এমন সম্ভাব্য ঐতিহাসিক মরসুমে ইস্টবেঙ্গলে ঠাঁই না হওয়ার যন্ত্রণা মাঠে উগরে দেওয়ার তাগিদ।

শনিবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে বৈকালিক নব্বই মিনিট উগা ওপারার কি সেটাই ফোকাস? প্রশ্নটা শুনে গত পাঁচ বছরে চার বারই লাল-হলুদ রক্ষণের সেনাপতি গম্ভীর থেকে আরও বেশি গম্ভীর হয়ে যান। কেবল বলেন, ‘‘নো কমেন্টস।’’ কিন্তু উগার শরীরীভাষা চুঁইয়ে বেরিয়ে আসে দাবদাহের রেশ।

তাঁর নাইজিরিয়ার বাড়িতে যে দিন টালিগঞ্জ অগ্রগামীর প্রস্তাব যায়, সে দিন নাকি উগার প্রথম প্রতিক্রিয়াই ছিল, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ! ইস্টবেঙ্গল মাঠে? আমি খেলবই।’’

গত পাঁচ বছরে লাল-হলুদের পাঁচটা লিগ জয়ের স্মারক ঝাড়খণ্ডের সুবোধ কুমারের বাড়িতে। গত বার এরিয়ানের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে তিনি গোল করে না জেতালে টানা পঞ্চম লিগ খেতাবটা ঢুকত না ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। সেই সুবোধ এ বার লাল-হলুদে ব্রাত্য। তাঁরও উগার মতোই ময়দানে বর্তমান ঠিকানা টালিগঞ্জ অগ্রগামী। যেখানে শুক্রবার সকালে প্র্যাকটিসে সতীর্থদের সামনে তাঁর পেপটক, ‘‘হমলোগ কিসিসে কম নেহি।’’

সুবোধ-উগাদের কোচ রঞ্জন চৌধুরীও লাল-হলুদে গত পাঁচটা লিগ জয়ের মধ্যে তিনটের সহকারী কোচ। কখনও মর্গ্যানের, কখনও ফালোপার, কখনও বা আর্মান্দোর। সেই রঞ্জনও বলে দিচ্ছেন, ‘‘ছেলেদের বলেছি, কাউকে অপমান না করে মাঠে খেলে জবাব দে।’’

সল্টলেকের বাড়িতে বসে এই বৃত্তান্ত শুনে নিজের জমানার সঙ্গে মিল খুঁজে পেলেন পঁচাত্তরে ইস্টবেঙ্গলে রেকর্ড টানা ষষ্ঠ বার লিগ এনে দেওয়া কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘সে বার আমার রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল! পঁচাত্তরে আমারও হাবিব-আকবর চলে গিয়েছিল মহমেডানে!’’

তা হলে সে বার রেকর্ড গড়ার রসায়ন কী ছিল? সিঁথির বাড়ি থেকে সেই টিমের গৌতম সরকার বললেন, ‘‘একে আমাদের সেই দুর্দান্ত টিম। সঙ্গে প্রদীপদার কোচিং। ড্রেসিংরুমে রোজ লিখে রাখত, ‘ইস্টবেঙ্গল হারতে পারে না।’ রেকর্ড হবে না মানে!’’

ঐতিহাসিক রেকর্ড স্পর্শের দৌড়ের স্টার্টিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে এ বারের লাল-হলুদ কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য কী বলছেন? এমনিতেই ম্যুর অ্যাভেনিউয়ের ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের শক্ত গাঁট বরাবর। সেই একাত্তরে আইএফএ শিল্ডে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে লাল-হলুদের টানা ছ’বার শিল্ড চ্যাম্পিয়নের নজির গড়া আটকে দেওয়া থেকে শুরু। তার পরেও টালিগঞ্জের কাছে কয়েক বার মোক্ষম সময়ে আটকে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। শুক্রবার সকালে বারাসতে দেড় ঘণ্টা অনুশীলনের পর বিশ্বজিৎ তাঁর সহকারী সঞ্জয় মাঝি আর দেবজিৎ ঘোষকে পাশে নিয়ে বললেন, ‘‘ওদের টিমের ধার-ভার জানি। তার থেকেই থেকেই বলছি, প্ল্যান তো আমাদেরও কিছু আছে। ডংকে বলে দিয়েছি, উগার টার্নিংটায় মরচে পড়েছে।’’

একটু থামলেন। তার পর মিলোভানের প্রিয় ছাত্র পিকে-র ঢঙে বললেন, ‘‘সামাদ-প্রহ্লাদদের আজ হাডলের সময় বললাম, টানা ছ’বার কেউ লিগ পেয়েছে ইস্টবেঙ্গল বাদে? তোরা ফের সেটা করতে পারলে কিন্তু রেকর্ড বইয়ে কিংবদন্তিদের সঙ্গে চিরকাল বাস করবি।’’

বিশ্বজিতের ভোকাল টনিকেই কি না কে জানে, লাল-হলুদ প্র্যাকটিস শেষে চোয়াল শক্ত র‌্যান্টি, বেলোদের। বাগানকে আই লিগ দিয়ে লাল-হলুদে চলে যাওয়া বেলো বলছিলেন, ‘‘টালিগঞ্জ বেশ টাফ। আর কলকাতা লিগ দেশের কঠিন ঘরোয়া লিগ। তা সত্ত্বেও আমাদের পাখির চোখ টানা ছ’বার লিগ দেওয়া এই ক্লাবকে।’’

যদিও এ দিনের অনুশীলনের আভাস বেলো নন। স্টপারে অর্ণব মণ্ডলের সঙ্গে খেলবেন আর এক মণ্ডল— দীপক। ধোঁয়াশা র‌্যান্টি নিয়েও। র‌্যান্টি মাঠ ছাড়লেন মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলেই। ইস্টবেঙ্গল কোচ মিডিয়ার সামনে দেখিয়ে দিচ্ছেন বেলোকে। যদিও সূত্রের খবর, বিশ্বজিৎ ভরসা রাখছেন র‌্যান্টির উপরেই। কেননা কোরিয়ান ফরোয়ার্ড ডু ডংয়ের শনিবার ময়দানে একে প্রথম ম্যাচ, তার উপর পেটের গোলমাল চলছে। ডং ক্লান্ত হলে নামবেন র‌্যান্টি।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

আর হেক্সা লিগ অভিযানের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বিশ্বজিৎও প্রস্তুত নিজের ইস্তাহার নিয়ে। বলে গেলেন, ‘‘বাঙালি কোচরাও যে ট্যাকটিক্স, স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নাড়াচাড়া করে শনিবার সেটা বোঝানোর লড়াই শুরু আমার। ওদের রঞ্জনেরও।’’

শনিবার কলকাতা লিগ

ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জ অগ্রগামী (ইস্টবেঙ্গল, ৩-৩০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE