Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ডিকার দুরন্ত গোলে খেতাব যুদ্ধে ফিরল ইস্টবেঙ্গল

মিজোরামের লালরিন্দিকা রালতে, না স্প্যানিশ খাইমে স্যান্টোস কোলাদো—বৃহস্পতিবার গোয়ার মাটিতে ইস্টবেঙ্গলকে খেতাব যুদ্ধে ফেরানোর নায়ক আসলে কে?

উল্লাস: চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে আই লিগ টেবলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের পরে ড্রেসিংরুমে উচ্ছ্বাস ফুটবলারদের। বৃহস্পতিবার। টুইটার

উল্লাস: চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে আই লিগ টেবলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের পরে ড্রেসিংরুমে উচ্ছ্বাস ফুটবলারদের। বৃহস্পতিবার। টুইটার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৬
Share: Save:

মিজোরামের লালরিন্দিকা রালতে, না স্প্যানিশ খাইমে স্যান্টোস কোলাদো—বৃহস্পতিবার গোয়ার মাটিতে ইস্টবেঙ্গলকে খেতাব যুদ্ধে ফেরানোর নায়ক আসলে কে?

ম্যাচের সেরা বাছার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন নির্বাচকেরা। শেষ পর্যন্ত আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের পুরনো ছাত্র খাইমেকেই বেছে নেওয়া হল। তাঁর অসাধারণ গোলটার জন্য। বক্সের ভিতর উড়ে আসা বল মাটিতে পড়ার আগেই দুরন্ত শটে গোল করেছিলেন লাল-হলুদ জার্সিতে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা ফুটবলার। প্রায় আঠারো গজ দূর থেকে মাটি ঘেঁষা শট যখন গোলে ঢোকে, তখন চার্চিল গোলকিপার বিগ্নেশ্বরন ভাস্করন শুধু দর্শকই নন একেবারে উল্টো পোস্টে দাঁড়িয়ে!

ধারাভাষ্য দিতে দিতে রেনেডি সিংহের মতো শান্ত ফুটবলারও উত্তেজিত। ‘‘আই লিগের অন্যতম সেরা গোল ধরা যেতে পারে এই গোলটাকে,’’ বলে ফেললেন তিনি। কিন্তু তাঁর চোখ এড়ায়নি ডিকার ক্রসের ব্যাপারটি। নিজের সময়ে মাঝমাঠে দেশের সেরা রেনেডি গোলটার সঙ্গে সঙ্গে তাই ডিকার পাসটিরও প্রশংসা করলেন উচ্ছ্বসিত হয়ে।

খাইমের গোল ইস্টবেঙ্গলকে অক্সিজেন দিল। ০-১ পিছিয়ে থাকা ম্যাচে সমতায় ফেরালো ঠিকই, কিন্তু আসল কাজটা তো ডিকারই। কী অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিক! মগজাস্ত্রের কী দুর্দান্ত প্রয়োগ! সাইড লাইনের একটু ভিতর থেকে প্রায় তিরিশ গজের একটা বল উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এমন জায়গায় ফেললেন যে, ধন্দে পড়ে গেলেন চার্চিল কিপার। বল তাড়া করেছিলেন লাল-হলুদের একাধিক ফুটবলার। এবং বোঝাই গেল, সেটা বিপক্ষ কিপারকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য। বলটা চার্চিল গোললাইনের ঠিক সামনে ড্রপ খেয়ে গোলে ঢুকল। গোল করিয়ে এবং করে নিজের দলকে এমন একটা ম্যাচ জেতালেন ডিকা, যা খেতাব যুদ্ধে ফিরিয়ে দিল আলেসান্দ্রোর দলকে।

চেন্নাই সিটি এফসির সঙ্গে খেতাবের যুদ্ধে টক্কর দিচ্ছিল চার্চিল ব্রাদার্স। ইস্টবেঙ্গলের বাতিল দুই ফুটবলার উইলিস প্লাজা এবং খালিদ আউচো দুরন্ত ফর্মে। প্লাজা তো এখন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আট গোল করে। এই অবস্থায় ভাবা হচ্ছিল ভাস্কোর মাঠে গোয়ার পারিবারিক ক্লাবটিকে হারানো অসম্ভব ব্যাপার। শুরুতে ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ স্টপার বোরখা ফার্নান্ডেজ ও গোলকিপার রক্ষিত দাগারের ভুলে সেটা শুরুও হয়ে দিয়েছিল। প্লাজা তাঁর আট নম্বর গোলটা করে এগিয়ে দিয়েছিলেন চার্চিলকে। রক্ষিতের হাত থেকে বল পিছলে বেরিয়ে গিয়ে গোললাইন পেরোল। ০-১ পিছিয়ে পড়ার পরেও জনি আকোস্তা বা কাশিম আইদারারা হাল ছাড়েননি। বরং পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন তাঁরা। বল পজেশন থেকে গোলে শট— সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল কলকাতায় ডার্বি জিতে যাওয়া ক্লাব। আর সেই সময়ই খাইমের মনে রাখার মতো গোল। বিরতির এগারো মিনিট আগে ১-১ হয়ে যাওয়ায় ইস্টবেঙ্গলের উপর থেকে চাপ কমে গিয়েছিল। ফলে ম্যাচটা বেশ উপভোগ্য হল এবং হাড্ডাহাড্ডিও। ডিকার গোলটা দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি। গোল খাওয়া ছাড়া ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ বেশ ভাল খেলল। অ্যান্টনি উলফ বা দাওদা সিসেরা তাই থেমে গেলেন গোলের সামনে এসে।

ধাক্কাধাক্কি এবং মারকুটে মেজাজ দেখালেন দু’দলের ফুটবলাররা। ৯০ মিনিটে ২৯টা ফাউল। এ বারের আই লিগের কোনও ম্যাচে কি এ রকম দৃশ্য দেখা গিয়েছে? হলুদ কার্ড হল প্রচুর। লাল কার্ড দেখে নির্ধারিত সময়ের দু’মিনিট আগে বেরিয়ে যেতে হল ইস্টবেঙ্গলের বালি গগনদীপকে। বদলি হিসাবে নেমে তিনি দু’বার হলুদ কার্ড দেখার জন্য শাস্তি পেলেন। রেফারি মারিও আর্কিও জোসেফকে ধাক্কা মেরে পার পেয়ে গেলেন চার্চিলের খালিদ আউচো।

লাল-হলুদের প্রাক্তন এই ফুটবলার যেন মারামারি করতেই নেমেছিলেন। চার্চিল পিছিয়ে পড়ার পর আরও বিশ্রী আচরণ করতে শুরু করলেন উগান্ডার এই মিডিয়ো। রেফারি তা সত্ত্বেও কিছু করেননি। এ বার দেশের সেরা রেফারিরা চলে গিয়েছেন আইএসএল খেলাতে। আই লিগ যারা খেলাচ্ছেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্লাবগুলি ক্ষুব্ধ।

কঠিন এই ম্যাচ জিতে যাওয়ায় হঠাৎই খেতাব যুদ্ধে প্রবলভাবে ফিরে এল ইস্টবেঙ্গল। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে লিগ শীর্ষে থাকা চেন্নাই সিটি এফসির সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্টের পার্থক্য রয়ে গেল মাত্র তিন। লিগ টেবলে দু’নম্বরে উঠে এলেন জনি আকোস্তারা। আট ম্যাচ খেলে চেন্নাইয়ের পয়েন্ট ১৮। ইস্টবেঙ্গলের ১৫। হারের হ্যটট্রিকের পর টানা তিনটি ম্যাচে জয়। লাল-হলুদের বারান্দায় হঠাৎই বর্ষশেষে খুশির আলো।

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত দাগার, সামাদ আলি মল্লিক, জনি আকোস্তা, বোরখা গোমেস, মনোজ মহম্মদ, ব্র্ন্ডেন ফার্নান্ডেজ (লালরাম চুলোভা), কাশিম আইদারা, লালরিন্দিকা রালতে, লালডানমাউইয়া রালতে (বালি গগনদীপ), খাইমে সান্তোস কোলাদো (কমলপ্রীত সিংহ) ও জবি জাস্টিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE