ঋদ্ধিমানের ক্লাবের সামনে উল্লাশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
টি-টোয়েন্টির মতো পাড়ায় পাড়ায় টিভির সামনে বসে উন্মাদনা ছিল না। তবে, ঘরের ছেলে বিদেশের মাঠে নেমেছে শুনে অনেকেই সন্ধ্যে থেকে লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে বসে যান। পঞ্চাশ পার হতেই সাদা জার্সি-লাল বলের টেস্ট ম্যাচ ঘিরে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে টানটান উত্তেজনা।
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে দশটা ছুঁইছুঁই। ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাটে সেঞ্চুরি আসতেই উচ্ছ্বাসে ভাসতে শুরু করল দুই শহর। তা তিনি সাধারণ মানুষই হোন বা রাজনীতিবিদ। এই একটা জায়গায় এসে এ দিন সকলেই সমান। পাপালির সেঞ্চুরির খবরে আবেগে ভেসে গেল উত্তরের এই দুই প্রধান শহর। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে রাস্তায় নেমে হুল্লোড়, ঋদ্ধিমানের শতকে সবই যেন উপচে পড়তে শুরু করল এত রাতে। এক সময় যাঁরা খেলেছেন ঋদ্ধির সঙ্গে, তাঁদের কেউ কেউ মিষ্টি খাওয়াতে শুরু করলেন আশপাশের লোকজন ডেকে।
ভারতীয় টেস্ট দলের ঋদ্ধিমান শিলিগুড়িতে ডাকনাম পাপালি বলেই পরিচিত। রাজনীতির দুই মেরুতে থাকা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং শিলিগুড়ির মেয়র বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য, দু’জনেই এ দিন রাতে পাপালি আবেগে ভেসেছেন। মন্ত্রী গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘সত্যি বলছি, মনে হচ্ছে আমার পরিবারের কেউ সেঞ্চুরি করেছেন। সামনেই দুর্গাপুজো। বিদেশের মাটিতে পাপালির সেঞ্চুরি আমাদের শহরে সেই উৎসবের বোধন করে দিল।’’
টেস্ট খেলতে বিদেশে যাওয়ার আগে ঋদ্ধিমানম দেখা করে গিয়েছিলেন মেয়র অশোকবাবুর সঙ্গে। দীর্ঘদিনের পরিচিত হওয়ার সুবাদে অশোকবাবু তুই বলেই ডাকেন ওঁকে। অশোক নিজেও ক্রীড়াপ্রেমী। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচয়। পাপালি শহরে ফিরলে পুরসভার তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, এর মধ্যেই ভেবে ফেলেছেন মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘যাওয়ার আগে দেখা করতে এসেছিল। ওকে বললাম, তোর কাছ থেকে এ বার সেঞ্চুরি চাই।’’ তার পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এ বার ওকে কি ওয়ান ডে টিমেও দেখব?’’
উচ্ছ্বসিত শিলিগুড়ির ক্রীড়াপ্রেমী এবং সংগঠকরাও। ছেলে নার্সিংহোমে ভর্তি থাকায় খেলা দেখতে পারেননি মহকুমা পরিষদের সচিব। খবর পেয়ে নার্সিংহোম চত্বরে দাঁড়িয়েই প্রায় চিৎকার করে বললেন, ‘‘এর থেকে ভাল খবর এই মুহূর্তে আমার কাছে আর কিছু হতে পারে না। ছেলে অসুস্থ থাকায় মন ভাল ছিল না। এখন পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে গেলাম।’’ ঋদ্ধিমানের রান পঞ্চাশ পেরোনোর পরে টিভি স্ক্রিন ছেড়ে ওঠেননি পরিষদের কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ। বললেন, ‘‘ঋদ্ধিমান সেঞ্চুরির পরে ব্যাট আকাশে তুলছে দেখে আর ঘরে বসে তাকতে পারলাম না।’’
ক্রিকেট নয়, ফুটবলেই চোখ রেখেছিলেন পুরসভার ক্রীড়া বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আর্জেন্তিনার হারের দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে ঋদ্ধিমানের ব্যাট। ও ফিরলে কাঁধে তুলে নাচব।’’ আর এক মেয়র পারিষদ কমল অগ্রবাল উচ্ছ্বসিত হয়ে মিষ্টি বিলি শুরু করেন। কমলবাবু বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারও উদ্যাপন হবে।’’
উচ্ছ্বাস জলপাইগুড়ির ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যেও। জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন অধিনায়ক অরিন্দম গুপ্ত বলেন, ‘‘ঋদ্ধিমান ব্যাট করছে শুনে জরুরি মিটিং ছেড়ে বাড়ি চলে আসি। মনে হচ্ছে যেন আমার ছেলে সেঞ্চুরি করেছে।’’ ক্রীড়া সংগঠন ভোলা মণ্ডল বলেন, ‘‘ঋদ্ধিমানের ধৈর্য দেখে আমরা মুগ্ধ। ঋদ্ধিমান তো আমাদেরও ঘরের ছেলে।’’ শহরের একটি ক্লাবের কর্মকর্তা সমীর দাস বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’’
পাপালির সেঞ্চুরিতে উচ্ছ্বসিত শিলিগুড়ি
এটাই শুধু বাকি ছিল। সুদূর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে টেস্ট শতরানের গণ্ডিও পেরিয়ে গেলেন ঋদ্ধিমান সাহা। রাত তখন পৌনে এগারোটা। আচমকা যেন কেঁপে উঠল শহর। ভরা শ্রাবণে শহর কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েনি। নানা কোন্দল, রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই অপেক্ষা করছিল ঘরের ছেলে পাপালির আরও একটি কীর্তির জন্য। পাপালি বারবার শহরের বুকের ছাতি গর্বে ফুলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু টেস্ট সেঞ্চুরি! ছক্কা শিলিগুড়ির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy