Advertisement
E-Paper

ক্লান্তি আর খারাপ ডিফেন্সে ক্লপ হঠাৎই মিস্টার ফ্লপ

একটার পর একটা জয়। গোলের পর গোল। টাচলাইনের ধারে য়ুরগেন ক্লপের পরিচিত সেই লাফ। প্রতিটা দলই তখন অ্যানফিল্ড ছাড়ছে মাথা নিচু করে।

সোহম দে

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৪

একটার পর একটা জয়। গোলের পর গোল। টাচলাইনের ধারে য়ুরগেন ক্লপের পরিচিত সেই লাফ। প্রতিটা দলই তখন অ্যানফিল্ড ছাড়ছে মাথা নিচু করে।

ঠিক কোনও ব্লকবাস্টার ছবির মতো!

কিন্তু নতুন বছরে এখন লিভারপুল মানেই হয়ে উঠেছে হতাশা। ক্লপ মানে এমন একজন কোচ যাঁর ছক নোটপ্যাড পর্যন্ত সীমিত থাকছে। মাঠে কার্যকর হচ্ছে না।

ঠিক কোনও ফ্লপ ছবির মতো!

এক সময় চেলসির ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিল লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগ নামক চুড়োর শীর্ষে ওঠার মুখে ছিল। বিশেষজ্ঞরাও দ্বিধাবোধ করেননি ফেভারিট তকমা বসাতে। কোথায় কী? প্রিমিয়ার লিগ এখন দূরঅস্ত। আগামী মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে উঠতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

হঠাৎ লিভারপুলের কী হল?

আই লিগ জয়ী কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের মতে ক্লপের ‘হেভি মেটাল ফুটবল’ এর পিছনে অন্যতম কারণ। লম্বা মরসুমে ক্লান্তি ঢুকছে দলে। ‘‘ক্লপ মানে এমন একজন কোচ যিনি স্ট্র্যাটেজি সাজান গতির উপর। ওঁর ফুটবলাররা বারবার পজিশন পাল্টায়। সব সময় বল তাড়া করে যাচ্ছে। এ রকম ছকে খেলতে গেলে শারীরিক সক্ষমতার তুঙ্গে থাকা দরকার। দম লাগে। লিভারপুল ফুটবলারদের দেখে মন হয় ক্লান্তি ঢুকে গিয়েছে,’’ বলছেন সুব্রত।

ক্লান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। এটা তো আর বুন্দেশলিগা না। যেখানে শীতের ছুটি থাকবে। ফুটবলাররা সেল্ফি তুলে পোস্ট করবেন। বিশ্বের সেরা সেরা জায়গায় ঘুরতে যাবেন। এটা তো ইপিএল। যেখানে শীতের ছুটি বলে কিছু হয় না। গোটা ডিসেম্বর টানা খেলে যেতে হয়। কোনও কোনও সপ্তাহে আবার আটচল্লিশ ঘণ্টায় দুটো করে ম্যাচ। সুব্রত বলছেন, ‘‘বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে থাকাকালীন ক্লপের ফুটবলাররা রিকভারির সময় পেত। এখানে তো সেটা পাচ্ছে না। লম্বা মরসুম মানে দলের গুরুত্বপূর্ণ তারকাদের বাঁচিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু ক্লপের ছকে সবাইকে সমানতালে বল তাড়া করতে হয়। তাই পুরো ক্লান্তি ঢুকে যাচ্ছে।’’

ক্লান্তি যদি শারীরিক কারণ হয় তা হলে মানসিক কারণের নাম সাদিও মানে। মরসুম শুরুর থেকেই লিভারপুল দলের চোখের মণি হয়ে উঠেছিলেন মানে। চোখ বুজে মানিয়ে নিয়েছিলেন ক্লপের ছকের সঙ্গে। কিন্তু মানে ও লিভারপুলের রোমান্টিক এই সফরে হঠাৎই খলনায়কের মতো প্রবেশ করে আফ্রিকান নেশনস কাপ। দেশ সেনেগােলর হয়ে খেলতে প্রায় এক মাস ছিলেন না মানে। যার মধ্যে একটাও লিগ ম্যাচ জেতা হয়নি লিভারপুলের। মানে ফেরার পরেও যে ছবি পাল্টায়নি।

সুব্রত বলছেন, ‘‘মানে খুব ভাল প্লেয়ার। গোলও করছিল। কিন্তু আফ্রিকান নেশনস কাপে যাওয়ায় লিভারপুলের সমস্যা হয়েছে। তার আগে অবধি নির্দিষ্ট কম্বিনেশনে খেলছিল লিভারপুল। সেটা নষ্ট হয়। মানেও ফিরে সেই ফর্ম দেখাতে পারছে না। ছন্দ নষ্ট হলে যা হয়।’’

পরিসংখ্যান অনুযায়ী লিভারপুল এখন ইপিএলের রবিন হুড হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা লিগের উপরের দিকে থাকা ক্লাবগুলোর থেকে পয়েন্ট কাড়ছে। আর তলার দিকে থাকা দলগুলোকে পয়েন্ট দিচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬। শেষ বারের মতো লিভারপুল সমর্থকরা লিগে জিততে দেখেছিল তাদের দলকে। তারপর হাল সিটি, সোয়ানসি। একের পর এক দুর্বল দল পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এফএ কাপে উলভসের বিরুদ্ধেও হারতে হয়েছে লিভারপুলকে।

প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মতে, ক্লপের ছকের থেকেও এর পিছনে কারণ ক্লপের দলের নড়বড়ে ডিফেন্স। মরসুম শুরুতেও যারা গোলের পর গোল খাচ্ছিল। কিন্তু গোল করায় সেই সব ঢাকা পড়ে যায়। ‘‘যে কোনও লম্বা লিগে ডিফেন্স জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চেলসির শীর্ষে থাকার পিছনে তাদের ব্যাকলাইন। লিভারপুলের মাতিপ পা লোভরেন, মিলনার— এরা সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারছে না। শুরুর দিকেও গোল খাচ্ছিল। এখনও খাচ্ছে। পার্থক্য হচ্ছে, এখন আর গোল দিতে পারছে না,’’ বলছেন বিশ্বজিৎ।

আগামী ম্যাচগুলোয় লিভারপুল ফর্ম ফিরে পাবে কি না সেটা সময়েই বলবে। কিন্তু আশা তো একটা থাকেই। কারণ দিনের শেষে টাচলাইনের ধারের লোকটার নাম যে ক্লপ!

Jurgen Klopp Liverpool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy