Advertisement
E-Paper

এক সেকেন্ডের জন্য ভেবেছিলাম হবে না

মহাকাব্যিক। রূপকথা-সম। স্বপ্নিল। অবিশ্বাস্য। অলৌকিক। ঐতিহাসিক। ক্রীড়াক্ষেত্রে সময় সময় এমন কিছু মাহেন্দ্রক্ষণের আবির্ভাব হয়, শত চেষ্টাতেও যাকে ভাষায় ধরা সম্ভব হয় না। ’৩৬ বার্লিন অলিম্পিক্সে জেসি ওয়েন্সের চারটে সোনা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৭
মেলবোর্ন-মুহূর্ত। নাদালের অভিনন্দন। ছবি: এএফপি

মেলবোর্ন-মুহূর্ত। নাদালের অভিনন্দন। ছবি: এএফপি

মহাকাব্যিক। রূপকথা-সম। স্বপ্নিল। অবিশ্বাস্য। অলৌকিক। ঐতিহাসিক।

ক্রীড়াক্ষেত্রে সময় সময় এমন কিছু মাহেন্দ্রক্ষণের আবির্ভাব হয়, শত চেষ্টাতেও যাকে ভাষায় ধরা সম্ভব হয় না।

’৩৬ বার্লিন অলিম্পিক্সে জেসি ওয়েন্সের চারটে সোনা। অপরাজেয় জর্জ ফোরম্যানকে বত্রিশ বছরের মহম্মদ আলির চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হারানো। ছিয়াশির ফুটবল বিশ্বকাপে দিয়েগো মারাদোনা বনাম ইংল্যান্ড। সচিন তেন্ডুলকরের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি।

রবিবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনালে রজার ফেডেরার বনাম রাফায়েল নাদাল।

সুইস শিল্পী আর স্প্যানিশ সম্রাট, দুইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুরণন টেনিস কোর্ট ছাপিয়ে গিয়েছে অনেক বছর। ইতিহাসের পাতায় চলে যেতে বসা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফের স্বচক্ষে দেখা যাবে, সত্যি সত্যিই একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে ফের রজার ফেডেরার লড়বেন রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে, এর চেয়ে বড় টেনিস রূপকথা হয়তো হতে পারত না।

রবিবারের মেলবোর্ন কিন্তু প্রমাণ করে দিল, পারত। রজার ফেডেরারের হাতে তাঁর পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ট্রফি তুলে দিয়ে। তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে, ছ’মাসের টেনিস নির্বাসনকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, বয়সকে স্রেফ সংখ্যা নয়, নিরর্থক সংখ্যায় পর্যবশিত করে, ফেডেরারকে সর্বকালের সেরার টেনিস মুকুট উপহার দিয়ে।

এই ফাইনালের টিকিট যে প্রায় চল্লিশ গুণ বেশি দামে বিক্রি হবে, স্বাভাবিক। এই ফাইনালের দর্শক সংখ্যা যে রেকর্ড গড়বে, স্বাভাবিক। এই ফাইনাল জিতে উঠে যে কান্নায় ভেঙে পড়বেন রজার ফেডেরার, স্বাভাবিক।

স্বপ্নের লড়াই যে বাস্তবায়িত হতে চলেছে, গ্রিগর দিমিত্রভকে হারিয়ে গত শুক্রবার বিশ্বাস করতে পারেননি রাফায়েল নাদাল। স্বপ্নের লড়াই যে সত্যি সত্যিই জিতেছেন, রবিবার যেন রজার ফেডেরারের কাছেও সেটা সমান অবিশ্বাস্য ঠেকছিল। ট্রফি নিতে উঠে বারবার পিছনে তাকাচ্ছিলেন নাদালের দিকে। বারবার বলছিলেন নাদালের কথা। বলছিলেন, পাঁচ-ছ’মাস আগে যখন তাঁদের দেখা হয়েছিল, দু’জনের কেউই ভাবতে পারেননি অস্ট্রেলীয় ওপেন ফাইনাল তাঁদের এ ভাবে মুখোমুখি ফেলে দেবে।

রাফাকে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করেছিলেন ফেডেরার। শেষ করলেন এমন কয়েকটা শব্দে, উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে যেগুলো বোধহয় অমরত্বের স্বাদ পেয়ে গেল। ‘‘তোমার কাছে হারলেও আজ খুশি হতাম। আমার প্রত্যাবর্তন এই জয়ের আগেও যে নিখুঁত ছিল!’’ তুমুল অভিবাদনের পরে সংযোজন, ‘‘টেনিসে ড্র নেই। যদি থাকত, তা হলে আজ তোমার সঙ্গে এই ট্রফিটা ভাগাভাগি করে নিতাম!’’

অর্ধেকটা বছর টেনিস কোর্টে তাঁর পা পড়েনি। বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর মেলবোর্নে এসেছিলেন কিনা সপ্তদশ বাছাই হিসেবে। সেখান থেকে নতুন রেকর্ড, নতুন ইতিহাস, স্বপ্নের নতুন আল্পসে আরোহণ। বাকি সতেরোটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের চেয়ে রবিবারেরটা যে আলাদা, বলার অপেক্ষা রাখে না। ফেডেক্স বলে দিয়েছেন, ‘‘এই ট্রফিটা সবার থেকে আলাদা। বাকিগুলো এক জায়গায়, আর এটা একা।’’

এর আগে চার বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন ফেডেরার। কিন্তু এই ট্রফিটার সঙ্গে তুলনায় তিনি টেনে আনছেন একমাত্র ফরাসি ওপেন জয়। ‘‘ওটা অনেক বছর ধরে তাড়া করেছি। ও ভাবে চাওয়ার পরে কিছু পাওয়ার অনুভূতি একেবারে আলাদা। প্লাস এটা রাফার বিরুদ্ধে, কামব্যাকের পর, ছ’মাস কোর্টের বাইরে থেকে ফেরার পর। সব কিছু একদম নিখুঁত ছিল। তার উপর শেষ সেটে পিছিয়ে ছিলাম আমি,’’ বলেছেন ফেডেরার। একটা সময় যাঁর মনে হয়েছিল, এ বার বোধহয় আর হবে না!

বড় ম্যাচ খেলতে নামছেন, ভালই জানতেন। কিন্তু সেটাকে মাথায় বেশি ঘুরপাক খেতে দেননি। বরং ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিলেন। ‘‘সত্যিই তো এটা বড় ম্যাচ। রাফার জন্য, আমার জন্য, টেনিসের জন্য,’’ বলেছেন ফেডেরার। বুঝিয়েছেন, ফাইনালের আগে কোন মনোভাব নিয়ে দুটো দিন কাটিয়েছেন। ‘‘একটা দরকারি দূরত্ব ছিল, কারণ অনেক দিন রাফার বিরুদ্ধে খেলিনি। এ রকম নয় যে গত ছ’মাসে ওর কাছে চার বার হেরেছি। বিপক্ষ নয়, চেষ্টা করেছি বলটা খেলতে। নিজেকে বলেছি, আজ তোমাকে প্রচুর লড়তে হবে। কোচেরাও বলেছিলেন, দিনের শেষে এটা মানসিক যুদ্ধ। সে জন্যই বোধহয় শেষ সেটে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।’’

ভাগ্যিস পেরেছেন। গোটা বিশ্বের রবিবারটা না হলে যে বড় বিস্বাদ হয়ে যেত!

প্যাট ক্যাশের খোঁচা

পাঁচ বছর পর গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়নের সরণিতে ফিরলেও রজার ফেডেরারের প্রত্যাবর্তন বিতর্কমুক্ত হল না। মেলবোর্ন পার্কে রবিবারের ফাইনালে পঞ্চম সেট শুরু হওয়ার আগে লকার রুমে মেডিক্যাল টাইম আউট নেন ফেডেরার। যেটা একেবারেই মানতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন প্যাট ক্যাশ। রেডিও ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ম্যারাথনের মাঝখানে তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছ বলে থেমে যেতে পারো না। এটা ভুল, একেবারে ভুল। প্রতারণা। আইনসম্মত প্রতারণা। তবুও এটা ঠিক নয়।’’ ফেডেরার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যার পাল্টা দেন, ‘‘আমিও তো মনে করি এই নিয়মগুলোর অপব্যবহার হওয়া উচিত নয়। আমি ২০ বছর ধরে সেটাই মেনে চলেছি। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই আমার ডান পায়ের উরুতে একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল। ওয়ারিঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচটায় যন্ত্রণাটা ছড়ায়। আজ ওই সময় একই সমস্যা হয়েছিল তাই সাহায্য নিতে হয়েছে।’’

Roger Federer Rafael Nadal Australian Open
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy